নাজমুন নাহার — ভ্রমণকন্যা খ্যাত এই সাহসী নারী বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিজ প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৫০ টি দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেছে। ভ্রমণের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের প্রতিনিধি জেবা সামিহা তমা এর সাথে কথা হয়েছে তাঁর। শিশু-কিশোর ২৪.কম এর পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।-
* ছোটোবেলা কোথায় কিভাবে কেটেছে?
-আমার ছোটোবেলা কেটেছে লক্ষীপুরে। ওখানেই আমার স্কুল, কলেজ। এরপর রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শেষ করে সুইডেনের লুম ইউনিভার্সিটিতে আমি পড়াশোনা করেছি। আমার ছোটোবেলা খুবই চমৎকার ছিলো। আমি অনেক কিউরিয়াস একটা বাচ্চা ছিলাম আমার জানার অনেক আগ্রহ ছিলো। আমি প্রকৃতি খুব ভালোবাসতাম, আমি সাইকেল চালাতাম। ছেলেরা সাইকেল চালাবে মেয়েরা সাইকেল চালাতে পারবে না। আমার কাছে এটা বৈষম্য মনে হতো। এই যে বৈষম্যহীন মানসিকভাবে বেড়ে ওঠা, এটা আমার পরিবার আমাকে দিয়েছে। এবং এই শক্তি ধারণ করেই আমি সামনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি।
* ভ্রমণের ইচ্ছা কবে থেকে এবং কিভাবে? ভ্রমণের জন্যে কিভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং কে অনুপ্রাণিত করেছে?
— আমি যখন ক্লাস ৫ এ পড়ি তখন আমার প্রধান শিক্ষক আমাকে কিছু মানচিত্রের খন্ড খন্ড অংশ দিয়েছিলেন এবং আমি সেগুলো জোড়া লাগিয়েছিলাম। তখন থেকেই এটির প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মায়। পৃথিবীর কোন শহরের সাথে কোন শহর, কোন দেশের সাথে কোন দেশের সংযোগ এটার জানার আগ্রহ জন্মায় এবং সেখান থেকেই আমার পৃথিবী ভ্রমণের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আর ছোটোবেলা থেকে আমি প্রচুর বই পড়তাম। বইগুলোতে যখন বিভিন্ন দেশের কথা লেখা থাকতো সেগুলো পড়ে আমি অনেক উৎসাহিত হতাম। আমার দাদা একজন পরিব্রাজক ছিলেন, উনি আরবের অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তৎকালীন সময়ে তিনি পায়ে হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে ভ্রমণ করতেন। সেই গল্পগুলো আমি বাবার কাছে শুনেছি। এগুলো আমাকে উৎসাহ দিতো। আমার বাবা সব সময় আমাকে বাঁধা কাটিয়ে সামনে এগোনোর অনুপ্রেরণা দিতেন।
* এক দেশ থেকে অন্য দেশ ভ্রমণ তো ব্যয় বহুল হয় কিছু টা এটা কিভাবে বহন করেন? ভ্রমণ গাইড পান কিভাবে?
— আমি সবসময় ইয়থ হোস্টেলে থাকতাম। ইয়থ হোস্টেলে মূলত ট্রাভেলাররা থাকে। এখানে খরচ কম হয়। সেখানে ছেলে—মেয়ের আলাদা রুম ও ছেলে—মেয়ের একত্রে রুম আছে। এমনও হয়েছে আমি ফিমেল রুমে যায়গা পাইনি তখন আমাকে ছেলে—মেয়ের একত্র রুমে থাকতে হয়েছে এবং সেখানে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। আমার খুব বেশি টাকা পয়সা ছিলো না। আমি খুব কষ্ট করে ঘুরতাম। হয়তো ৬ মাস কাজ করছি এবং বাকি ৬ মাস ঘুরছি। এভাবে আমি সৎ পথে রোজগার করে ঘুরেছি। স্পন্সর পেতে অনেক সময় লাগে। তাই নিজ থেকে চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। হোস্টেলে বিভিন্ন ট্রাভেলারদের সাথে আমার পরিচয় হতো। ইয়থ হোস্টেলের রিসিপশনে একটা ট্রাভেল কর্ণার থাকে ওখান থেকে একজন টুরিস্ট গাইড দেয়া হয়। পাহাড়ে বা সমুদ্রে যেতে গাইড জরুরী। একা টুরিস্ট গাইড নিয়ে গেলে অনেক খরচ হতো তাই আমি ১৫—২০ জনের দলে ঘুরতে যেতাম। আমি আসলে ওখানে গিয়েই হোস্টেলের মাধ্যমে নয়তো লোকাল টুরিস্ট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে সব ম্যানেজ করতাম। ওরা গাড়ি দিয়ে নিয়ে যেতো আবার গাড়ি দিয়ে নিয়ে আসতো। কিন্তু মাউন্ট এডভেঞ্চার করার জন্যে আমাদের অনেক হাটতে হতো। রাতের একটা দেড়টায় গাড়ি এসে নিয়ে গিয়ে একটা ট্রাকিং পয়েন্টে নামি দেয়। সেখান থেকে হাটা শুরু। আবার সন্ধ্যায় ফিরে এসে ওদের সাথে হোটেলে ফিরতে হতো। এভাবে দুর্গম যায়গা গুলোতে টুরিস্ট গাইড নিয়ে যেতাম। আর এমনিতে আমি একাই জার্নি করতাম। যেহেতু একা ছিলাম জার্নি করার সময় পাশে যে যাত্রী থাকতো তার সাথে কথা বলতাম।
আরো পড়ুন-
- সাক্ষাৎকার: এখন মূল লক্ষ্য টোকিও অলেম্পিকে ভাল কিছু করা। - রোমান সানা।
- সাক্ষাৎকার: 'জাতীয় দলে অনেকদিন খেলতে চাই'- আকবর আলী
- সাক্ষাৎকার: ভাল খেলার মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে হবে মেয়েরাও পারে- সোবহানা ।
- সাক্ষাৎকার: 'খেলনা হারমোনিয়াম থেকে আমার গানের শুরু।"- শ্রাবণী সায়ন্তনী
*একটানা কতক্ষণ ভ্রমণ করেছেন?
— আমি সর্বোচ্চ ৫৬ ঘন্টা সড়ক পথে জার্নি করেছি। আর আমার সর্বোচ্চ আড়াই দিন না খেয়ে ভ্রমণ করার রেকর্ড রয়েছে।
*আপনার কথা শুনে চমকে উঠছি মানুষ তার স্বপ্ন পূরণের জন্যে কতটা ডেডিকেটেড হতে পারে।
— আমার যাত্রা কখনো এতো সোজা ছিলো না যে আমি প্লেনে গিয়ে ঘুরে আবার প্লেনে চলে আসলাম। আমার যার্নিতে অনেক স্ট্রাগল আছে।আমি এয়ারপোর্টে রাত্রে ঘুমিয়েছি। বর্ডার ক্রস করতে না পেরে আমাকে বর্ডারে থাকতে হয়েছে। বিশেষত আমি আফ্রিকাতে বর্ডার ক্রস করতে না পেরে আদিবাসীদের সাথে ছিলাম। আমাকে গরুর কাচা মাংস খেয়ে থাকতে হয়েছে। কখনো এমনও হয়েছে আমি তিন মাস আলু খেয়েছিলাম। মধ্যরাতে জঙ্গলে আটকা পড়েছি। এই ভয়ানক পরিস্থিতিগুলো মনের শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করেছি আমি।
* সর্বপ্রথম কোন দেশ ভ্রমণ করেছিলেন এবং এখন পর্যন্ত শেষ কোনো দেশ ভ্রমণ করেছেন?
— সর্বপ্রথম দেশ ভারত। সর্বশেষ মধ্য আফ্রিকার দ্বীপদেশ সাও টোমে ও প্রিন্সিপে।
* ১৫০ টা দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট যায়গা খুব বেশি ভালো লেগেছে কি?
— পুরো পৃথিবী টাই আমার কাছে একটা দেশের মতো, আমি সব খানেই যাই। নির্দিষ্ট একটা যায়গার কথা বলা আমার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আইসল্যান্ডের কয়েকটা যায়গা খুব ভালো লেগেছে। যেমন আইসল্যান্ডের — ল্যান্ডমান্যালুগা অবশ্য পুরো আইসল্যান্ড খুবই চমৎকার একটা যায়গা। আমি যদি দেশ গুলোর মধ্যে র্যাংকিং দেই তাহলে আইসল্যান্ড হবে প্রথম। কারণ একটা দেশের মধ্যে এতো সৌন্দর্য! আইসল্যান্ডের একটা পাহাড় আছে যেটা পৃথিবীর আদি লগ্ন থেকে টেকনটিক প্লেটের ফলে প্রতি বছর ৫ ইঞ্চি করে মেরুর দিকে সরে যাচ্ছে। এটা হয় ঘর্ষণের ফলে। ঐ যায়গাটা আমার খুবই ভালো লেগেছে। এরপর আরও অনেক যায়গা রয়েছে। যেমন — উত্তর চিলির আতাকামা, চিলি এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে মাউন্টাকনকাগুয়াহ, আফ্রিকার সোমালি ল্যান্ড খুবই সুন্দর, জাপানের হিরোশিমা, নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট কুক, অস্ট্রেলিয়ান হোয়াট হেভেন বিচ, কোস্টালিকার তামারিনইন্দো শহর, সাউথ প্যাসেফিক ওশেনের পাশে উপদ্বীপ গুলো খুব আকর্ষনীয়। আরও অনেক যায়গা আমার অনেক সুন্দর লেগেছে।
* ভ্রমণ নিয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা বা স্মৃতি?
— উল্লেখযোগ্য বলতে জার্নির মধ্যে আমার অনেক প্রাপ্তি আছে। আর ভাল মেমোরি যেমন আছে তেমনি ভয়ংকর মেমোরিও আছে। আমি একবার নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছিলাম একজন ব্যক্তি ঝাপ দিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে তোলে। মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখা এই ঘটনা আমার কাছে যেমন ভয়ংকর তেমনি কলোম্বিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যাওয়ার পথে তিন জন ট্রাভেলারের সাথে পরিচয় তাদের সাথে ঘোরার পর আমার মনের হয়েছে "আমরা ভাই—বোন— এবং খুবিই ভালো বন্ধু। এই সুন্দর মুহূর্ত আমি কখনো ভুলবো না। আরও একটা স্মৃতিময় ঘটনা আছে। অনেকদিন বাংলাদেশি খাবার খেতে না পেরে বাঙালি খাবারের খুদা পেয়েছি। আসলে জার্নি করার সময় টাকা থাকলেও সবসময় মন মতো খাবার খাওয়া হয় না। লাইবেরিয়ার একটা সমুদ্র সৈকতে যখন আমি বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করছি। তখন হঠাৎ দুইটা ছেলে দৌড়ে দৌড়ে আমার কাছে আসে জানতে চাইলো আমি কেনো এখানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করছি। তখন আমি বলি আমি বাংলাদেশি, আমি একজন ট্রাভেলার। এটার শোনার পর দেখি ওনারা কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করলাম কেনো কাঁদছেন? বললো তারা বাঙালি আর অনেকদিন থেকে লাইবেরিয়াতে আছে। ছেলেগুলো দুই ভাই স্বাধীনতা যুদ্ধে তারা পরিবারের সবাইকে হারিয়েছে। বাংলাদেশে আর যাওয়া হয়নি। আমাকে বলতেছে আপু আপনি আমাদের সাথে চলেন। তারা আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে গেছে এবং আমার জন্যে ভর্তা, ভাত, গরুর মাংস রান্না করেছিলো। আমি তখন গোগ্রাসে বাঙালি খাবার খেয়েছি। ওনাদের থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি এটা আমার কাছে অনেক। ওরা ওখানে অনুষ্ঠান করে আমাকে সংবর্ধনাও দিয়েছে। লাইবেরিয়ার নিউজপেপারে বিশাল বড় করে ফিচার করেছে আমাকে নিয়ে।
* একেক দেশে একেক সংস্কৃতি বা নিয়ম , আবহাওয়া মানিয়ে নেন কিভাবে?
— দারুণ প্রশ্ন! এখন পর্যন্ত ১৫০ টা দেশের তাপমাত্রা, খাবার আমার শরীর গ্রহণ করেছে। আমি ৫৬ ডিগ্রী তাপমাত্রায় সাহারা মরুভূমিতে ঘুরেছি এবং —৪৫ ডিগ্রী তাপমাত্রায় নর্ডিক আলস এ গিয়েছে। এই যে ভেরিয়েশন সেটা আমার শরীরে সহ্য হয়ে গেছে। এমনও যায়গা আছে যেখানে ১০০ বছর বৃষ্টি হয়নি সেখানে যাওয়ার পর আমার স্কিন ফেটে রক্ত বের হয়েছে। এটা পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক যায়গা।আমি বাংলাদেশের পতাকা পুরো বিশ্বে নিয়ে যাবো এই যে একটা উদ্যম, একটা দেশাত্মবোধ আমার ভিতরে আছে এটাই আমাকে সাহায্য করেছে এইসব কিছু মানিয়ে নিতে। তাছাড়াও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখি যে ঐ যায়গা গেলে এরকম অবস্থা হতে পারে। আমি কখনোই এটা ভাবি না যে অমুক যায়গায় অনেক গরম সেখানে যাওয়া যাবে না। যত যাই হোক আমাকে ঐ ন্যাচারের সাথে এডজাস্ট করতেই হবে। আমি ৫ বার মরণের মুখ থেকে ফিরে এসেছি। আমি গুলির মুখোমুখি হয়েছি জর্জের স্থানী প্রদেশে আমি ১৪২০০ ফুট রেইনবো মাউন্টে যখন উঠেছি সেখানে যাওয়ার পথে আমার শ্বাসকষ্ট হয় তবুও আমি আমার সাহসের জোরে পাহাড়ে উঠেছি। আমি নদীতে আটকা পড়েছি এবং সেখান থেকে আমি উদ্ধার হয়েছি। শুধু আবহাওয়া নয় নানা ধরণের প্রতিকূলতার মাঝে আমাকে ঘুরতে হয়েছে। এতো কিছুর পরেও আমি জানতাম আমার কিছু হবে না কারণ আমি মানসিক ভাবে শক্ত ছিলাম।
* ভ্রমণে কোনটা বেশি ভালো লাগে নিজের চোখে সবটা উপভোগ করা নাকি যন্ত্রে বন্দী করা।
— এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি যখন একটি দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত বাসে ভ্রমন করি আমার দেখার অনেক সুযোগ থাকে। পথে যেতে যেতে হয়তো একটা সিনারি আমার খুব ভালো লেগেছে আমি সাথে সাথে সেটার একটা ছবি তুলে নিলাম। আমি নিজে দেখি আবার ছবি তুলি, ভিডিও করি। * ভ্রমণ করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে সেটা দূর করেন কিভাবে? — আমি যখন জার্নি করি আমি তখন মোর এনার্জেটিক ফিল করি। আমি যখন প্রকৃতি দেখি তখন আমার খুব ভাললাগে। যখন নতুন দেশে গিয়ে নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হই তখন আমি খুব এনার্জি পাই। সন্তান হওয়ার পরে বাবা—মায়ের যে এক্সাইটমেন্ট টা হয় সেটা আমি যখন আমি নতুন কোনো দেশে যাই তখন পাই। বাবা—মা যেমন সন্তানের মুখ দেখে সব কষ্ট, ক্লান্তি ভুলে যায় আমিও তেমন নতুন শহরে পা রাখলে সব ক্লান্তি ভুলে যাই। সারাদিন ঘুরে রাতে ঘুমাই আবার সকালে ঘুরতে বের হই। আমার ডিকশনারিতে ক্লান্তি বলে কোনো শব্দ নেই।
* আপনি বলেছেন ছোটোবেলায় বই পড়তেন তো এখনো কি বই পড়ার সুযোগ হয়? কোন ধরণের বই বেশি পড়া হয় বা আপনার পড়তে বেশি ভালো লাগে?
— হ্যাঁ, আমি এখনো যতটুকু সময় ফ্রি থাকি বই পড়ি। আমার বেশিরভাগ পড়াশোনা পৃথিবীর উপরে। আমার এখনো অনেক আগ্রহ পৃথিবীর দেশগুলো নিয়ে, সেখানকার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি জানার খুব আগ্রহ। যেকোনো দেশে যাওয়ার আগে আমি সেই দেশ নিয়ে বই পড়ি এমনকি না গেলেও সেই দেশ সম্পর্কে আদ্যোপান্ত ঘাঁটি। যেমন — "দ্যা ব্রিজ অন দ্যা গ্রিনা" যেটা পূর্ব যুগোস্লাভিয়ার একজন লেখক আইভো আনড্রিচ লিখেছেন। এই বইতে তিনি যুগোস্লাভিয়া এবং অটোমানদের যুদ্ধের কথা লিখেছেন। সেখানে নদীর উপর একটা ব্রিজ আছে, ব্রিজটার নাম গ্রিনা। ছোটো একটা নদী। তার এপার আর ওপার। তুর্কিশরা গিয়ে যুগোস্লাভিয়ানদের মারতো, অত্যাচার করতো। তারপর তাদের একটা ভালোবাসার কাহিনীর মাধ্যমে তাদের আবার মিল হয়। সেটা পড়ে আমি খুব অনুপ্রাণিত হয়েছি ও উৎসাহ পেয়ে আমি বজনিয়ায় গেছি। এভাবে বই পড়ে আগ্রহ জন্মায় যে আমি ঐ দেশের ঐ যায়গায় যাবো।
* এখন পর্যন্ত আপনার ভ্রমণ জীবনের কয়েকটা প্রাপ্তির নাম শুনতে চাই?
— পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষ দের সাথে দেখা হয়েছে। সুদানে আমাকে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা দিয়েছে। মালদ্বীপে আমাকে নিয়ে নিউজ হয়েছে। সেখানকার টুরিজ্যম মিনিস্ট্রি ইনভাইট করছে। ওখানে এয়ারপোর্টে রিসিভ করার জন্যে লোকজন এসেছিলো। এরপর যখন সোমালি ল্যান্ডে গেছি সেখানকার রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে দেখা হয়েছে, ওখানকার বিখ্যাত সংগীত শিল্পী সাহারা হালগান আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। এই যে আমি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ঘুরছি জাতীয় পত্রিকাগুলোতে এটা নিয়ে অনেক বড় বড় ফিচার লেখা হয়েছে। এটা শুধু আমার জন্যে পুরো বাংলাদেশের জন্যে অনেক বড় প্রাপ্তি। আমি পিস টর্চ এওয়ার্ড পেয়েছি। মোস্ট ইন্সাপায়ারেশন এওয়ার্ড পেয়েছি, গেম চেঞ্জার অব বাংলাদেশ এওয়ার্ড পেয়েছি। এই প্রাপ্তিগুলো আমাকে আরও বেশি অনুপ্রেরণা দেয়।
* ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
— আমি চাই শিশু তরুণরা উৎসাহী হোক। তাদের জন্যে প্লার্টফর্ম তৈরি করা বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন রাখা তাদের আগ্রহী করার জন্য। আমি একটা বই লিখছি সেটা প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে। আমার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল খোলার প্লান করছি। আমার কাছে অনেক ভিডিও আছে সেসব আপলোড দিবো, আগে পৃথিবী ভ্রমণ শেষ হোক।
* আপনি যখন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিভিন্ন দেশে যান তখন নিশ্চয়ই কৌতূহলী হয়ে সবাই বাংলাদেশ নিয়ে জিজ্ঞেস করে তখন কেমন অনুভূতি হয়? বাংলাদেশ নিয়ে আপনার আগামীর ভাবনা কি?
— আমি যেখানে যাই বাংলাদেশের পতাকা ওড়াই, ছবি তুলি। আমি বিভিন্ন দেশের স্কুলের বাচ্চাদের সামনে আমাদের দেশের পতাকা, কৃষ্টি, কালচার তুলে ধরেছি। আমরা যে ছোট্ট সুন্দর দেশ সেটার কথা বলেছি। সেটা একটা বিশাল বড় পাওনা আমার কাছে। আমার মেইন কাজ ভ্রমণের সাথে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া। আজ পর্যন্ত কোনো নারী নিজ দেশের পতাকা নিয়ে এভাবে যায়নি। আমি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে গেছি। এটা আমার ভালো লাগা। আমাদের পূর্ব পুরুষরা আমাদেরকে একটি বাংলাদেশে দিয়েছেন। আমরা দেশের জন্যে কি করছি। সকলের দেশাত্মবোধকে জাগ্রত করার জন্যে, আমাদের কাজ করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হব, জন্মস্থানের মাটিকে ভালোবাসতে হবে। পুরো পৃথিবী আমার কাছে ঘরের মতো কিন্তু আমার পরিচয় আমি বাংলাদেশি। যেমন দেশের প্রতি দায়িত্ব আছে তেমন এই প্লানেটের প্রতি দায়িত্ব থাকতে হবে।
*অনেক ধন্যবাদ ব্যস্ততার মাঝে আমাদের সময় দেয়ার জন্য। শিশু-কিশোর ২৪.কম ও শিশু-কিশোর হালচাল এবং পাঠকদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলেন।
— শিশু-কিশোর ২৪.কম ও শিশু-কিশোর হালচালকেও ধন্যবাদ। তোমরা যারা এই উদ্যোগ নিয়েছ তোমাদের অনেক অভিনন্দন ও ভালোবাসা। তোমাদের এই উদ্যোগ সকল শিশুকে উৎসাহিত করবে। হয়তো এমন অনেক শিশু আছে যারা পৃথিবী সম্পর্কে জানতে চায় তোমাদের এই প্লার্টফর্মের মাধ্যমে জানতে পারবে। এটা অনেক ভালো কাজ। তোমাদের এই ভালো কাজকে আমি সাধুবাদ জানাই। তোমাদের কাজ শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পরুক। এই কামনা করি। আর সকলকে ভাল কাজের সাথে থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছি।