গল্প: আবারো গ্রহান্তর।
লেখা: জেবা সামিহা তমা, (রংপুর)।
টিসটিস অনেক রহস্য করে অনেকক্ষণ ধরে ঘটনা টা বললো টিমু তবুও তেমন কোনো মাথা ঘামাচ্ছে না। টিসটিস এবার অভিমানের সুরে বললো "প্লুটো থেকে ফেরার পর একজন তো আর টিসটিসের বন্ধু না। সে তো টিসটিসের কোনো কথা শোনেই না।" টিমু এবার সশব্দে হেসে বললো "আচ্ছা ঠিক আছে আমি ব্যাপারটা দেখবো।" এই শুনে টিসটিস অনেক খুশি হয়ে বললো "এবার কিন্তু আমাকেও সাথে নিতে হবে।" টিমু স্বাভাবিক ভাবেই বললো "এখনো তো কোনো চিন্তা-ভাবনা করলামই না, তার মধ্যে আবার তুই বায়না ধরছিস!"
আরো পড়ুন: গল্প: গ্রহান্তর।
টিসটিস : "আমি আর তোকে একা ছাড়বো না। ব্যাস এটাই আমার শেষ কথা।"
টিমু : "তোকে কে বললো মানুষ শুধু দেহেই দৃশ্যমান থাকে? তুই তো জানিস মানুষের অস্তিত্ব সবসময়ই থাকে, কখনোই তা নিশ্চিহ্ন হয় না।"
টিসটিস : "আমাকে না নিয়ে যাওয়ার জন্যে তুই এসব বোঝাচ্ছিস।"
টিমু : "এই যে তুই প্লুটোতে আমার সাথে ছিলি না কিন্তু তোর দেয়া এই জাদুর ব্যাগ আমার সাথে ছিলো। এভাবে তো তুই ছিলি আমার সাথে।"
টিসটিস : "জাদুর ব্যাগ না, ওটার একটা নাম আছে সেটা হলো 'গাওপি' "
টিমু : "আচ্ছা ঠিক আছে তাই। এখন তুই যা আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভেবে দেখি।"
টিমু ভাবছে। পৃথিবী যে শান্তির গ্রহ তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে মাঝেমধ্যে এমন তর্ক-বিতর্ক না হলে শান্তির অস্তিত্ব বোঝাই যায় না।
"টিংটং! টিংটং!"
টিমু : "এখন আবার কে এলো? এই পৃথিবীতে শান্তিতে ভাবা-চিন্তা করা যায় না কেনো?"
দরজা খোলার পর টিমু মানুষ টিকে দেখে খুশি দেয়নি।
টিমু : "আসুন ঘসিমত।"
ঘসিমত : "এতো সম্মান করো আমাকে?"
টিমু : "গিলখঃ কোম্পানির প্রধানকে এতটুকু সম্মান আমি দিতেই পারি। আমি জানি আপনি কেনো এসেছেন, আমাকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, গবেষণা করতে হবে।"
ঘসিমত : "সমস্ত ব্যবস্থা আমি নিজে করে দিবো।"
টিমু : "এমনিতেই পৃথিবীতে আগে থেকেই আন্দোলন চলছে। এখন এতো বড় সিদ্ধান্ত দ্রুত নিয়ে ফেললে ঝামেলা হবে।
ঘসিমত : "হোক না। গিলখঃ কোম্পানির প্রচারও হবে।"
টিমু : "আমি আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রচারক নই। আমি মানুষের কল্যাণে কাজ করি। আপনি এখন আসুন। আমি তাতে খুশি হবো।"
ঘসিমত : "যাবো তো নিশ্চয়ই। তোমার জন্যে রকেটের ব্যবস্থা করতে হবে।"
টিমু কিছু বলার আগেই ঘসিমত চলে গেলো।
অনেক বছর পর -
গভীর রাত। আজকে পৃথিবীতে উৎসব চলছে। সবাই একসাথে আনন্দ করেছে। উদযাপন শেষে টিসটিস আকাশের দিকে তাকায় কাঁদছে আর বলছে "বন্ধু, আনন্দের দিনের শুভেচ্ছা জানাই তোমায়।" টিমু পৃথিবীতে নেই বহু বছর। কাউকে কিছু না জানিয়ে টিমু অন্য গ্রহে চলে গেছে। টিসটিসের বিশ্বাস গিলখঃ কোম্পানি টিমুকে অন্য গ্রহে যেতে বাধ্য করেছে। কিন্তু টিমু এখন কোথায়? কবে ফিরে আসবে?
একদিন এমন নিঃশ্চুপ গভীর রাতে টিমু রকেটে করে পাড়ি জমায় 'ট্র্যাপিস্ট-১' এর দিকে। সূর্য থেকে বহুদূরে এই গ্রহ। এর সাথে আরও বেশ কয়েকটি গ্রহ রয়েছে। আজকে টিমু 'ট্র্যাপিস্ট-১' এ পৌঁছেছে। রকেট যে যায়গায় নেমেছে তার আশেপাশে কোনো পানি নেই ফলে প্রচণ্ড গরম লাগছে টিমু। এই গরমে রকেট রাখাটা ঠিক হবে কি না তাই টিমু দ্রুত রকেট নিয়ে পানি আছে এমন যায়গা খুঁজতে বের হলো। রকেটে থাকা একটা যন্ত্র থেকে আওয়াজ আসছে "টিমু? তুমি কি শুনতে পাচ্ছো? টিমু তুমি পৌঁছে গেছো?" টিমু স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সব আর ভাবছে উত্তর দিবে কি না? এভাবে চলতে চলতে টিমু তুলনামূলক একটা শীতল যায়গা খুঁজে পেলো। কাছাকাছি পানি আছে। যায়গাটা নাতিশীতোষ্ণ। টিমু ভাবছে এটাকে কি বলা যায় নদী নাকি খাল? ওপার যেহেতু দেখতে পাচ্ছিনা তাহলে এটা একটা নদী। আচ্ছা এই নদীর নাম আছে? এখানে আমি ছাড়া আর কেউ আছে? আবারও রকেটের যন্ত্র থেকে শব্দ আসছে। টিমু কিছুটা বিরক্ত হয়েই উত্তর দিলো "পৌঁছে গেছি।" আর কিছুই বললো না।
টিমু নদীর কাছাকাছি নিজের ঘর তৈরি করলো। খাওয়াদাওয়া শেষ করে টিমু যখন ঘুমাতে যাবে হঠাৎ মনে হলো কারা যেনো এখানে আছে। টিমু ছাড়াও এই গ্রহে আরও কেউ আছে? অবশ্য এসব জানতেই টিমু বাধ্য হয়ে এই গ্রহে এসেছে। টিমু না আসলে গিলখঃ কোম্পানি আবারও কাউকে মিথ্যে অপরাধে এখানে পাঠিয়ে দিতো।
টিমু ঘর থেকে বাহির হয়ে দেখলো কেউ নেই। এখানকার আলো সূর্যের আলোর পরিস্কার না হলেও চাঁদের আলোর থেকে বেশ উজ্জ্বল। সবকিছু ভালোভাবেই দেখা যায়।
পরেরদিন টিমু রকেট থেকে কিছু জিনিস নামিয়ে একটা বাহন বানিয়ে নিলো। এই বাহন দিয়ে 'ট্র্যাপিস্ট-১' এ চলাচল করবে টিমু। রকেট আর টা ফিরে যাবে না কারণ এই রকেট ব্যবহার করে 'ট্র্যাপিস্ট-১' এর আশপাশের গ্রহগুলোতে ঘুরে দেখবে টিমু। টিমু ভেবেই পাচ্ছে না কেনো এই বামন তারকাগুলোকে সবাই জোর করে গ্রহ বানাইতে চাইছে। গিলখঃ কোম্পানি তো নতুন উদ্ভাবনের খ্যাতির লোভে এসব পাগলামো করছে। শুধুমাত্র উপরিভাগে পানি আছে আর প্রাণের সন্ধান থাকতে পারে তাই কেউ তারাকে গ্রহ বানায় নাকি? তবে এখানকার মজার ব্যাপার হলো এখানে পানি উবে যায় না। টিমু ভাবছে পৃথিবীতে ফিরে এই গল্পগুলো টিসটিসকে বলবে। টিমু কবে ফিরবে পৃথিবীতে? টিসটিসের কথা মনে হতেই টিমুর মন খারাপ হয়ে গেলো।
হঠাৎ টিমুর মনে হলো দূর থেকে কেউ তাকে দেখছে সাথে সাথে চারদিকে তাকালো। কাউকেই দেখতে পেলো না। দ্রুত বাহন চালিয়ে টিমু চারদিকে গিয়ে ভালো ভাবে দেখলো। কাউকেই খুঁজে পেলো না।
এভাবেই কেটে যায় অনেক বছর। টিমু এখানে কোনো প্রাণের অস্বিস্ত খুঁজে পায় না। যে যায়গা পানি নেই সেই যায়গা গুলো এতোটাই উষ্ণ যে সেখানে কোনো প্রাণীর বেঁচে থাকা অসম্ভব। এতটুকু তথ্য টিমু পৃথিবীতে গিলখঃ কোম্পানির কাছে পাঠিয়ে। টিমু ভাবছে এখন চারপাশের গ্রহ বা তারা গুলো ঘুরে দেখা প্রয়োজন। হঠাৎ রকেটের ভিতরে থাকা যন্ত্র থেকে আওয়াজ আসছে "টিমু, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?"
টিমু : "এটা তো টিসটিসের কণ্ঠ! হ্যাঁ টিসটিস আমি শুনতে পাচ্ছি বলো।"
দুইজনেই কাঁদছে। কতদিন পর তারা কথা বলছে।
টিসটিস : "ভেবেছিলাম তোমার সাথে কথাই বলবো না আমাকে ছাড়া একা একা চলে গেছো কিন্তু তোমার চিন্তা হচ্ছিলো তাই গিলখঃ কোম্পানির সাথে রাগ করতে এসে শুনি তুমি কথা বলছো। ওরা বললো তোমার সাথে কথায় বলায় দিবে তাই আর তোমার সাথে রাগ করে থাকতে পারলাম না।"
টিমু : "টিসটিস, আমার প্রিয় বন্ধু। শান্ত থাকো। আমি ভালো আছি। আমার সাথে তোমার 'গাওপি' আছে তো। সবার খেয়াল রেখো।"
টিসটিস : "তোমার কাজগুলো আমি করছি এখন তুমি এ নিয়ে চিন্তা করিও না। আমি সবার খেয়াল রাখছি। দরকারে পাশে থাকি। টিমু, তুমি কবে ফিরবে?"
টিমু এখন আর উত্তর দিতে পারে না কারণ এই উত্তর তার নিজেরও জানা নেই। টিসটিস তো সবকিছু দেখে রেখে যোগ্য বন্ধুর কাজ করছে তবুও টিমুর পৃথিবীতে ফেরা খুব কি জরুরী। নাহ টিমুকে সব কাজ শেষ করে দ্রুত পৃথিবীতে ফেরা উচিত কিন্তু কবে ফিরবে টিমু তার প্রিয় পৃথিবীতে?
অলঙ্করণ: আল রোমান, (ঢাকা)।
আরো পড়ুন: গল্প: গ্রহান্তর।