গল্প: আইসক্রিম ও পাগলাগারদ।
লেখা: জাবির রাফি, (রংপুর)।
লোকটা নদীর পাড় দিয়ে যাচ্ছিলো। শহুরে নদী। বৃটেনের টেমস নদীর মতো। নদীর পাশে উঁচু রাস্তা।
রাস্তায় তার সাথে নিশির দেখা হয়ে গেলো। নিশি তখন একটা পাঁচশো এমএলের আইসক্রিম নিয়ে কাঠের চামচ দিয়ে একটু একটু করে খাচ্ছে। আইসক্রিমের থেকে কাঠের চামচটাই তার কাছে বেশি সুস্বাদু মনে হচ্ছে।
লোকটা দেখলো নিশির কাছে কাঠিই বেশি প্রিয়। লোকটা এগিয়ে আসলো তার দিকে। বলল, "মামনি আইসক্রিম খেতে হয়, কাঠ নয়।"
নিশি কথাগুলো চুপচাপ শুনলো। সে তখন একটা কাঠের উঁচু টেবিলের উপরে পা ঝুলিয়ে বসেছিল। পা দোলাচ্ছে আর আইসক্রিম থুক্কু কাঠ চাবাচ্ছে বেশি। লোকটার কথা শুনে আরও বেশি করে কাঠ কামড়াতে লাগলো। একসময় কাঠের চামচটা টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
তো নিশির মা আইসক্রিমের বিল মিটিয়ে সেখানে এসে দেখে নিশি চামচ ভেঙে ফেলছে। তারপর কোথেকে দৌড়ে গিয়ে একটা স্টিলের চামচ নিয়ে এলেন। নিশি বিপদে পড়লো। স্টিলের চামচ একবার মুখে দিলেই পরিষ্কার হয়ে আসে। আরেকবার সেটায় মুখ লাগানোর সুযোগ নেই। অগত্যা নিশিকে আইসক্রিমই খেতে হচ্ছে।
এদিকে লোকটাকে দেখে নিশির মা মুখ তুলে চাইলেন। লোকটা বলল, "ম্যাডাম আমি এখানে নতুন। কাচ্চির দোকান কোনদিকে বলতে পারবেন?"
মা বলার আগেই নিশি বলল, "এই রাস্তা ধরে সোজা চলে যাবেন। বামে একটা গলি পড়বে, গলির শেষ মাথায় দুটো বাড়ির মাঝে একটা সরু রাস্তা ধরে এগোবেন। তারপর ডানে দশগজ গিয়ে একটা দোকান পাবেন। দোকানদারকে বললে আপনাকে আরেকটা গলি দেখিয়ে দেবে। সেখানে গিয়ে ডানের গলিটা ধরবেন। আপনি তখন হাইওয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন। আপনার সামনেই রাস্তার অপজিটে...
নিশি কথা শেষ করতে পারলো না। নিজেই থামলো। আইসক্রিমটা শেষ করলো। লোকটা ধৈর্য ধরে দাড়িয়ে আছে। কেন জানি না, তবে নিশির মা দৌড়ে গিয়ে একটা রিকশায় উঠলেন।
নিশি বসে আছে তখনও। লোকটা বলল, "রাস্তার অপজিটে কি কাচ্চির দোকান পাব?"
নিশি বলল," না না। রাস্তার অপজিটে আপনি পাগলাগারদ পাবেন!"
লোকটা তাজ্জব বনে গেল। বলল,মানে?
নিশি বলল, যেই লোক আইসক্রিমের কাঠির স্বাদ বোঝে না তার জন্য পাগলাগারদই সেরা জায়গা।"
তারপর নিশি "ভাগো" বলেই দৌড়ে গিয়ে রিকশায় উঠলো।
লোকটা আহাম্মকের মতো দাড়িয়ে থাকলো!
অলঙ্করণ: সৌখিন।