-->

গল্প: আষাঢ়ে বন।


গল্প: আষাঢ়ে বন।

লেখা: ইসরাত জাহান ইশিকা,(রংপুর)।

লোকালয় থেকে বেশ দূরেই একটা বন। বেশি বড় নয়, তবে বনটা বেশ সুন্দর, কত্ত রকমের গাছ, ডোবা, পাখি আর বেশ কিছু বন্য প্রাণির আবাসস্থল।স্থানীয় লোকজন "আষাঢ়ে বন" বলে ডাকে। এমন অদ্ভুত নামের কারণ হিসেবে লোক মুখে শোনা যায়- অনেক অনেক দিন আগে স্থানীয় জমিদার ও কিছু লোক বনে ঘুরতে যায়,ওরা আগে থেকেই শুনে এসেছিল বনটা নাকি বড্ড সুন্দর, তাই নিজ চোখে দেখতে এসেছিল তারা।ওরা যেই সময় বনে গিয়েছিল তখন আষাঢ় মাস চলছিল। সদ্য আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভিজে বনটা তখন একদম ঝকঝকে, গাছের পাতায় পাতায় তখনো পানি লেগে আছে, কদম গাছের তলে পরে আছে অসংখ্য কদম, বেলি গাছের চারপাশটা ফুলের গন্ধে ভরে আছে।ওদিকে ডোবাগুলো ভর্তি পানিতে, ব্যাঙের ছাতার নিচে ব্যাঙ ডাকছে, পাখিরা এসে বসেছে ডালে, গাছের পাতা ফাঁক করে আসছে রোদ। যেন স্বর্গীয় এক দৃশ্য। এসব দেখেই অভিভূত হয়ে গিয়েছিল ভ্রমণকারীরা। তখনি সেখানকার জমিদার ঠিক করেন বনের নাম হবে 'আষাঢ়ে বন',আষাঢ়ের বৃষ্টির পরেই তো এমন সুন্দর হয়েছে বনটি। তাই ওই নামটি রয়ে গেল।

তো ওই বনে আজ মিলন মেলা হবে।গাছ পাখি,প্রাণি, ফুল এদের মিলন মেলা। বনের সবারই বর্ষাকালটা খুব প্রিয়। বেলি গাছের ডালে এসে বসেছে দু জোড়া টিয়া। কদম গাছে নিজেদের বাসায় আছে টুনটুনি। ওদিকে ব্যাঙরাও আসতে শুরু করেছে। বিড়াল আর বানর অপেক্ষা করছে কখন থেকে!

"আজি ঝর ঝর মুখরো বাদলো দিনে," গুনগুন করতেই থেমে যায় টুনটুনি জোড়া। তখনি মুখ বাঁকা করে টিয়া বলে " ইশ, গান পারে না,এত্ত সোজা গান! তোর মুখস্থ থাকে না!"  আবার চেঁচাতে যায় টুনটুনি,ওকে থামিয়ে বেশ কড়া সুরে বানর বলে," না,আজ ঝগড়া নয়,আজ শুধু আনন্দ হবে, নিয়ম লঙ্ঘন করলে মিলন মেলা থেকে তাকে বাদ দেয়া হবে।" 

তখন পাশ থেকে বেলিগাছ টা বলে উঠে তাহলে বল তোমরা কার কেমন লাগে আষাঢ় মাস? আর বর্ষাকাল?

আমার তো বড্ড ভালোলাগে,কত্ত ফুল ফোঁটে আমার গায়ে,তার কি সুন্দর গন্ধ! বেলির কথায় উত্তর দেয় কদম গাছটি,হ্যাঁ তোর সাদা ফুলগুলো কি সুন্দর! কিন্তু দেখ আমার কদম গুলোও তো কম যায় না,বৃষ্টি এলেই কি সুন্দর ফোটে ওরা,আহা!ওপাশ থেকে ডোবাটা বলে উঠে," আর তোরা দেখ আষাঢ়ে আমি ভরে উঠি,পানিগুলো কি সুন্দর লাগে! 

আর সেই পানির উপরে থেকে আমি সকাল সন্ধ্যা ডাকি,বলে ব্যাঙ। আর স্বচ্ছ পানির উপরে থাকার তো মজাই আলাদা। ব্যাঙের পাশে বসে থাকা বিড়াল এবার বলে" আর আমি কি বলব? আহা! আমার তো সারাদিন ঘুমিয়ে কাটে।" ওর কথায় হেসে উঠে সবাই।এবার বানর বলে,আমি সারাদিন লাফাই এই গাছ থেকে ওই গাছ আর বৃষ্টি এলে মনের আনন্দে ভিজি। টুনটুনি মন খারাপ করে বলে,"আষাঢ়ে আমাদেরই যত কষ্ট! বৃষ্টি হলে উড়তে পারি না ভালো মতো,ঘর ভেঙে যায়।" ওর কথায় তাল মেলায় টিয়া। এগলো শুনে মন খারাপ হয় সবার।তখন টিয়া বলে" তবুও আমাদের ভালোলাগে,মনোরম প্রকৃতিটা।এভাবেই কথা বাড়তে থাকে, গল্পে জমে উঠে ওরা। শেষে সবাই মিলে গান ধরে " বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর "।

ওই বনটা যেমন সুন্দর ওখানকার প্রাণিরাও তেমনি সুন্দর। ওখানে কোনো হিংস্রতা নেই,নেই শহরের কোলাহল। আষাঢ়ে বনটা সত্যি আষাঢ়ের মতোই সুন্দর।

অলঙ্করণ: জুলকারনাইন তাহসিন।


গল্প: আষাঢ়ে বন। গল্প: আষাঢ়ে বন। Reviewed by সম্পাদক on শনিবার, জুলাই ৩১, ২০২১ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.