-->

গল্পঃ পেইন্টিং।


গল্পঃ পেইন্টিং।

লেখা: নানজিবা ইবনাত মেধা, (চট্টগ্রাম)।

চায়ের কাপে চুমুক দিতেই শরীরের অর্ধেক ক্লান্তি যেন নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। চায়ের সাথে ইদানীং বেশ সখ্যতাই গড়ে উঠেছে আমার। আগে চা-টা তেমন একটা পছন্দ করতাম না। হঠাৎ একদিন সুবলের দোকান থেকে চা খেয়েই এই নেশাটা মাথা চারা দিয়ে উঠেছিল আমার।অন্য কোনো খারাপ নেশা না থাকলেও চায়ের নেশাটা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে।

চায়ের দাম মিটিয়ে ট্রেনের কামরায় উঠে পড়লাম।জানালার পাশেই পেয়েছি সিট টা।বহু বছর পর গ্রামের বাড়ি থেকে দিন কাটিয়ে ফিরছি।অফিসের কাজের চাপে সেদিকটায় তেমন ভাবে যাওয়া হয়নি কোনোদিন। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই অতিতের কিছু ধোঁয়াশা স্মৃতি থাকে।যার স্পর্শে মানুষ দ্বিতীয়বার ধরা দিতে চায়না।এমন কোনো  স্মৃতি আমার জীবন এ আছে নাকি বলতে পারিনা,তবে সেদিনের কথা এখনো আমার মগজে খোলসা হতে বেশি সময় লাগে না।বৃষ্টি থেমে রোদ উঠলে আকাশ যেমন ফকফকে পরিষ্কার হয়ে যায়,  সেইদিনটাও আমার মস্তিষ্কে ততটাই পরিষ্কার। 
সেদিন দাদু আমায় ডেকে বলেছিলেন," অর্ণব দাদু, তুমি যখন বড় হবে,  তখন এই সিন্দুক খুলে দেখবে। তোমার জন্য একটা গিফট রাখা আছে।"সেদিন আমার মত খুশি হয়ত কেউ ছিল না।

দাদু মারা যাবার পর বেশ কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে। দাদু ঠিক কতটা বড় হবার কথা বলেছিল জানা নেই।তবে এখন নিজ পায়ে দাড়াতে শিখেছি, বাস্তব অবাস্তব পার্থক্য করতে শিখেছি। এতটুকু বড় হওয়া বোধ করি যথেষ্ট।সরকারি চাকুরি।সহজে ছুটি পাওয়া মুস্কিল।তাই কয়েকদিনের টানা ছুটি পেতেই ছুটে গেলাম গ্রামে দাদুবাড়িতে।


সিন্দুকের কথা মনে পড়তেই খুলে দেখি একটা খবরের কাগজে মোড়ানো ক্যানভাস।কাগজ খুলে ফেলতেই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো। একটা হাতে নোটবুক আর পেন ধরা। এত সুন্দর আর জীবন্ত দৃশ্য টা।যেন সত্যি সত্যি কেউ ধরে রেখেছে।


বেশ খুশি মনেই পেইন্টিং টা নিয়ে  ফিরলাম।সেইদিন থেকেই মুলত অদ্ভুতুড়ে কিছু ঘটনা লক্ষ্য করতে শুরু করলাম।তার একটি ছিল -

 " চাকরি শেষে বেশ ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলাম।চায়ের ডেকচি চুলায় চড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।পানির মধ্যে এত প্রশান্তি,  যে মিনিট খানেকের মধ্যে দুনিয়াদারির খবর ভুলে গেলাম। হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ায় হুশ ফিরল।বের হয়ে দেখি পেইন্টিং এর নোটবুকে কে যেন লাল কালিতে লিখে দিয়েছে-

  ""সাবধান!!  বিপদ""

 লিখে এরোচিহ্ন দেওয়া।এরোচিহ্ন অনুসারে চোখ পড়লো পাকঘরে।গিয়ে দেখি চা শুকিয়ে আরো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে আগুন।

দৌড়ে বালতিভর্তি পানি এনে নিভালাম।আরেকটু দেরি হলে তো পুড়ে মরতাম।

তখন হঠাৎ মনে পড়লো।

কে টোকা দিলো দরজায়? আর পেইন্টিং এই বা কে লিখে গেলো কথা গুলো?  এই রহস্য আমাকে ভাবিয়ে তোলে সব সময়।

অলঙ্করণ: সৌখিন'স ওয়ার্ল্ড।

গল্পঃ পেইন্টিং। গল্পঃ পেইন্টিং। Reviewed by সম্পাদক on শুক্রবার, জুলাই ০২, ২০২১ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.