-->

গল্প- যাত্রাপথের রহস্য।

গল্প- যাত্রাপথের রহস্য।

লেখা- ইয়া রাশেদ মো: ফারদিন।

১. 

দেড় ঘণ্টা ধরে রাজ‍্যের বিরক্তি নিয়ে ওয়েটিং রুমে বসে আছি । দশটায় বাস আসার কথা ছিল,এখন এগারোটা বাজে, এখনো আসেনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। ঈদের ছুটিতে প্রিয় শহর রংপুরে এসেছিলাম। আজকে ফিরে যাচ্ছি ঢাকায়। এজন্যই বাস কাউন্টারে আসা। তাও ভালো যে একটা বই ব‍্যাগে ছিল। বইয়ের মুগ্ধতায় ডুব দিয়ে ছিলাম বলে রক্ষা।

বসে থাকতে থাকতে বিরক্তি যখন চরমে তখনই বাসটি এলো। কেআর ট্রাভেলস। সঙ্গে সঙ্গে বাথরুম সেরে বাসে গিয়ে উঠলাম। বাসে উঠে এয়ারফোনটা কানে গুজে যেই না শিরোনামহীনের প্লেলিস্টটা চালু করব তখনই একজন বলল, "জানালার পাশে বসবেন না আগের সিটটায়?"

ঘুরে তার দিকে তাকালাম। অবাক না হয়ে পারলাম না! বসে থাকতে থাকতে  যেটুকু বিরক্তি ছিল তা নিমেষেই দূর হয়ে গেল। তিনি আর কেউ নন;এই সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক রিজন আহমেদ। যার বইয়ের রিভিউ, বইয়ের কাভারের ছবিতে অনেক আর্টিস্টের দ্রুতগতিতে রিঅ‍্যাক্ট পড়ে। সব বুকশপে যার বই বেস্টসেলার।

"আপনি যদি জানালার পাশে বসতে চান, তাহলে বসতে পারেন, " সহাস‍্য মুখেই আমি বললাম।

"আসলে জানালার পাশে বসে জার্নি করার মজাই আলাদা, জানেন তো?" 

"তা অবশ্যই। এজন‍্য আমিও জানালার পাশে সিট নিয়েছিলাম।"

আমার জন‍্য ব‍্যাপারটা ভালোই হলো! একদিকে ওনার সাথে কথা বলে বোরিং সময়টা কাটানো যাবে। আরেকদিকে কিছুদিন ধরে আমিও লেখালেখি শুরু করেছি।এই  সুযোগে ওনার কাছে যদি কিছু পরামর্শ পাওয়া যায়।

তাই কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আমিই প্রথমে বললাম,"  আমি আপনার অনেক বড় একজন ফ‍্যান। আপনার সব বই পড়েছি।"

"ধন‍্যবাদ।" ছোট করে বললেন জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক রিজন আহমেদ।

" আরেকটা কাকতালীয়  ব‍্যাপার কি জানেন, বাসে ওঠার আগে আপনার 'লেখকের মৃত্যু ' বইটা পড়ছিলাম। আর বাসে আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল!"

"বাহ,ভালোই তো! বইটা পড়ে কেমন লাগল?"

"একদম ফাটাফাটি! আপনার দ্বারাই শুধু এই লেভেলের বই লেখা সম্ভব। তবে বইটা নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন ছিল?"

"জি, অবশ‍্যই।"

"আসলে আমি জানতে চাচ্ছিলাম এই বইয়ের প্লটটা কিভাবে সাজালেন?পড়ে যতদূর মনে হলো কিছু বাস্তব ঘটনাও আছে এতে!"

"হ‍্যাঁ। প্লটটা পেয়েছিলাম আজকের মতোই একদিন বাসে যেতে যেতে। সেদিনও জানালার পাশে বসে যাচ্ছিলাম। তখন যে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম বুঝতেই পারি নি!"

"তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন প্লটটা আপনি স্বপ্নের মধ‍্যে পেয়েছেন?'' ওনার কথার মাঝেই আমি বললাম।

" এক্সজ‍্যাক্টলি।" স্বপ্নটা ছিল কিছুটা এরকম:

'হতাশ ভঙ্গিতে বাসের মধ্যে কেউ একজন বসে আছে। আমার দুই ছিট সামনে। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। জানালার দিকে চোখ। যেন কোনো দিকে তার মন নেই। হঠাৎ করে বাসের গতি বেড়ে গেল। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। কেউ কেউ ড‍্রাইভারকে আস্তে চালাতে বলল। কিন্তু ড‍‍্রাইভার কারও কথা না শুনে একেবেকে গাড়ি চালাচ্ছিল। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর আমি দেখতে  পেলাম একটা বাস ঠিক এই বাসটার মুখোমুখি আসছে। সরে যাওয়ার কোনো লক্ষ্মণ নেই.... জ্ঞান হারানোর আগে শুধু দেখতে পেলাম ঐ লোকটা বাস থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে গেল। সেকেন্ডেরও কম সময়  তার মুখটা দেখতে পেলাম। 

২.

কখন যে তন্দ্রা এসে গেছিল টেরই পাইনি। উঠে দেখি জানালার পাশের ছিটটা ফাঁকা পড়ে আছে! অথচ জানালাল পাশেই আমার সিট থাকার  কথা! আমি কি ওখানে কাউকে বসতে দিয়েছিলাম?

সুপারভাইজারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম," জানালাল পাশে কেউ বসেছিল?"

"নো, স‍্যার।"

অবাক না হয়ে পারলাম না!

কিছুক্ষণ পর ফেসবুক অন করতেই একটা নোটিফিকেশন আসল। একটা অনলাইন নিউজ পোর্টালের খবর।লিংকে ক্লিক করে দেখি বড় করে লেখা " আজ রাত দশটায় রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যু বরণ করেছেন জনপ্রিয় লেখক রিজন আহমেদ!!"

অলঙ্করণ: সৌখিন'স ওয়ার্ল্ড।

গল্প- যাত্রাপথের রহস্য। গল্প- যাত্রাপথের রহস্য। Reviewed by সম্পাদক on সোমবার, জুন ০৭, ২০২১ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.