-->

আমাদের মানিক।

ইসরাত জাহান ইশিকা,(রংপুর):

"সংসারে মানুষ চায় এক হয় আর এক,চিরকাল এমনি দেখে আসছি ডাক্তার বাবু। পুতুল বৈ তা নই আমরা,একজন আড়ালে বসে খেলাচ্ছেন।" সংলাপগুলো নেওয়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "পুতুল নাচের ইতিকথা" উপন্যাস থেকে। মনে আছে নিশ্চই? ভারতীয় এই বাঙালী সাহিত্যিকের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। থেকেই তাঁর ঝোঁক ছিলো সাহিত্যের প্রতি,পড়তেন প্রচুর বই। ষোল বছর বয়সে তাঁর মা "নীরাদাসসুন্দরী ওপারে পাড়ি জমান। মাত্র ২০ বছর বয়সে একরকম বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেই লিখে ফেলেন "অতসী মামী"। তখন তার এই গল্পটি  প্রকাশিত হয় বিচিত্রায়।যদিও নিজের লেখার ব্যাপারে যদিও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি তবে  এরপর যা ঘটে সম্ভবত তার জন্য প্রস্তুত তিনি একদমই ছিলেন না, স্বয়ং বিচিত্রা প্রকাশনির সম্পাদক এসে হাজির হন তাঁর বাসায়। শুধু তাই নয়, নিয়ে এসছিলেন সম্মানীও এবং তিনি বলেন,তাঁর আরও একটি গল্প চাই।এরপরই মূলত শুরু হয় তার " মানিক"হয়ে ওঠা। বাবা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাকরির সূত্রে তিনি অনেক জায়গায় থেকেছেন,এই বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে ও তাঁর বিচক্ষণতার কারণেই মাত্র ২৯ বছর বয়সের মধ্যেই লিখে ফেলেন তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিগুলো। মোট চল্লিশটি উপন্যাস ও তিনশ ছোটগল্প লিখেন তিনি। মার্কসীয় শ্রেণিসংগ্রাম ও ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষন তত্ত্ব দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন তিনি,যা তার লেখায় স্পষ্টতা পায়। শ্রমজীবী মানুষদের সংগ্রাম,মধ্যবিত্ত সমাজের নানা বাস্তবতা ও কৃত্রিমতা, নিয়তিবাদ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করেই মূলত লিখেছেন তিনি। সমাজের প্রচলিত নানা নিয়মেরকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেরছেন।জীবনের এক পর্যায়ে যোগ দিয়েছিলেন,"কমিউনিস্ট পার্টিতে"। "পদ্মা নদীর মাঝি", " পুতুল নাচের ইতিকথা, "ছোটবকুলপুরের যাত্রী" "দিবারাত্রির কাব্য", " অতসী মামি' "প্রাগৈতিহাসিক", " জননী"  তাঁর অমর সৃষ্টি। সাহিত্যের সেকালেও এই লেখাগুলো যেভাবে স্থান পেয়েছে,জায়গাটা অক্ষূণ্ণ আছে এখনো,থাকবে চিরটাকাল। মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে পরলোক গমন করে এই নন্দিত সাহিত্যিক।হয়তো জীবনে আরও কিছুটা সময় পেলে বাংলা সাহিত্যকে উপহার দিয়ে যেতেন পারতেন আরও কিছু অবিনশ্বর সৃষ্টি।
আমাদের মানিক। আমাদের মানিক। Reviewed by সম্পাদক on শনিবার, মে ০৮, ২০২১ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.