-->

'বিতর্ক' এর কথা


মিম আতিক সিদ্দিকী ওহী:

"বিতর্ক"শব্দটি শুনলেই বেশির ভাগ মানুষের মাথায় ঝগড়ার ব্যাপারটি প্রথমে চলে আসে। তাদের একটা বদ্ধমূল ধারণা হলো "বিতর্ক" মানেই ঝগড়া। আসলে ব্যাপারটি কিন্তু সেরকম না। বিতর্কের আক্ষরিক অর্থ হলো  বিশেষ তর্ক, বিশেষের "বি" এবং "তর্ক", দুই মিলিয়ে হল "বিতর্ক"।

বিতর্ক নিয়ে কিন্তু অনেক মানুষের মধ্যেই কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বিতর্ক জিনিসটি নাকি একেবারেই রসকষহীন এবং পানসে। কিন্তু বিতর্ক সম্পর্কে ভালোভাবে কিছু ধারনা নিলেই বোঝা যাবে বিতর্ক কতটা মজার একটি জিনিস। এটি যেমন দর্শকদের গঠনমূলক  এক তর্কাতর্কির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দান করে ঠিক সেইসাথে যারা বিতর্ক করছে অর্থাৎ বিতার্কিকদের করে তোলে অন্যের মতামতের প্রতি সহানুভূতিশীল।

এক অর্থে বলা যায় পৃথিবীব্যাপী সর্বপ্রথম ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার শুরুই হয়েছে এই বিতর্কের হাত ধরে। প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার সময় থেকেই ক্লিওন, ডায়োডটাস, সিসেরোর মত ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের ভালো-মন্দ দিক, বিভিন্ন সুপারিশ জনসম্মুখে করতেন এই বিতর্কের এর মাধ্যমেই।ওই সময় সোফিস্ট নামক এক প্রকার পেশাদার তার্কিক গড়ে ওঠে। প্রায় ২০০০ বছর পূর্বে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও জাতীয় নীতিনির্ধারক বিষয়ে জনগনের মতামত গ্রহন করা হত। রাষ্ট্রের সভাসদগন বিভিন্ন ভাবে তাদের মতামত তুলে ধরতেন; বিতর্কে অংশ গ্রহন করতেন। এভাবেই এথেন্সে বিতর্ক একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করে।

বর্তমানে সারা বিশ্বে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সংঘ, ক্লাব, পার্লামেন্ট ইত্যাদির বদৌলতে বিতর্ক হয়ে উঠেছে এক স্বতন্ত্র শিল্প। বিশেষ করে বাংলাদেশে বিভিন্ন চ্যানেলে অনুষ্ঠিত হওয়া বিতর্ক প্রতিযোগিতার কারণে অনেকেই এই শিল্পে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ভূমিকা বিশেষ ভাবে বলতে হয়। কারণ নব্বই দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতাগুলো এদেশে বিতর্কের এক মহাজাগরণ ঘটিয়েছিল যেই মহাজাগরণ থেকে উঠে আসা দেশ সেরা অনেক বিতার্কিক আজ পৃথিবী জুড়ে সম্মানজনক সব পদে কর্মরত আছেন। এই মহাজাগরণ কিন্তু এখনো অব্যাহত রয়েছে, বাংলাদেশ টেলিভিশনে আজও জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে সারাদেশের বিভিন্ন বিদ্যালয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

এখন জেনে নেওয়া যাক বিতর্ক আসলে কত প্রকার। বিশ্বব্যাপী মূলত ২৬ ধরনের বিতর্কের চর্চা হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সনাতনী বিতর্ক, রম্য বিতর্ক, বারোয়ারি বিতর্ক, সংসদীয় বিতর্ক, প্ল্যানচেট বিতর্ক, জাতিসংঘ বিতর্ক ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশে সনাতনী বিতর্ক, সংসদীয় বিতর্ক, বারোয়ারি বিতর্ক এবং রম্য বিতর্ক এই চার ধরনের বিতর্কেরই চর্চা বেশি হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে সনাতনী বিতর্ক এবং সংসদীয় বিতর্ক তুলনামূলকভাবে বেশি জনপ্রিয়।

বিতর্কের মাধ্যমে একজন মানুষের মধ্যে বহুমুখী উন্নয়ন ঘটে।একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্যে আমূল পরিবর্তন সাধন করতে পারে বিতর্ক। বিতর্ক করার মধ্য দিয়ে যেমন অন্যের মতামতের প্রতি সম্মানের একটি জায়গা সৃষ্টি হয় তেমনি নিজের মতামত অন্যদের মাঝে দৃঢ় র্দপে, আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিষ্ঠা করার অভ্যাস গড়ে ওঠে। বিতর্ক মানুষকে আত্মবিশ্বাসী ও সৃজনশীল হতে শেখায়। ভিন্নধর্মী চিন্তাধারা চর্চার একটি চমৎকার ক্ষেত্র হলো বিতর্ক। এছাড়াও মানুষের যোগাযোগ, কথা বলা, উপস্থাপনা, উচ্চারণ ইত্যাদি দক্ষতা বৃদ্ধিতেও বিতর্ক অন্যতম সহায়ক।

বর্তমানে এই যুগে সমাজ,রাষ্ট্র তথা জাতিকে সুন্দর, সুশীল, সহানুভূতিশীল, ভিন্নধর্মী চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত একটি প্রজন্ম উপহার দিতে হলে বিতর্কের এর কোন বিকল্প নেই। বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উচিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা গুলোতে স্বচ্ছন্দে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা। বিতর্ক চর্চা ধরে রাখলে আমরা আশা করতে পারি আমাদের ভবিষ্যতের পরবর্তী প্রজন্মও গুলো হয়ে উঠবে অসাধারণ মেধাবী ও সৃজনশীল।

'বিতর্ক' এর কথা 'বিতর্ক' এর কথা Reviewed by সম্পাদক on বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৫, ২০২১ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.