আব্দুল্লাহ,(বগুড়া):
বিয়ে বাড়িতে আয়েশ করে খেয়ে, কিংবা রেস্টুরেন্টে বসে এক প্লেট কাচ্চি শেষ করে যখনি আপনি তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে যাবেন, ঠিক তখনি আপনার তৃপ্তিকে অস্বস্তিতে রূপ দেয় দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা মাংস। এই অস্বস্তিকে দূর করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে যেটিকে ব্যবহার করি সেটিই হলো টুথপিক। কখনো কি ভেবছেন কে আবিষ্কার করলো এই টুথপিক- কিভাবেই বা এলো এটি!
'টুথপিক' ছোট্ট একটা শব্দ তবে অনেক ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য! কেননা খাওয়ার পরে মুখের স্বাস্থ্যকর যত্ন নেওয়া এর কাজ। কিছুটা অদ্ভুৎ শোনালেও এটি কিছুটা দৈনন্দিন রীতির মতো প্রচলিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূঁচের মতো সূক্ষ ও নির্ভুল ভাবে খাবারের ছোট্ট ছোট্ট দানা কিংবা খাবারের ধ্বংসাবশেষ এর অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেয়। কল্পনা করুন আপনি মুরগির মাংস কিংবা গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেয়ে একটু স্বস্তির প্রহরে বিশ্রাম নিতে গেলেন, তখনই আপনি উপলব্ধী করলেন যে আপনার দাঁতের ফাঁকে কিছু আটকে আছে! নিশ্চয় তখন অস্বস্তির অন্ত থাকবেনা। কিন্তু যদি সাথে ছোট্ট বন্ধু টুথপিক থাকে তবে আপনি এই অস্বস্তি থেকে খুব সহজেই রেহাই পাবেন, সবমিলিয়ে টুথপিক সত্যিই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য!
গত কয়েক সহস্রাব্দের সময় ধরে যে ছোট্ট বন্ধু মানব জাতির আধুনিক ইতিহাসকে পূর্বাভাস দিয়ে এসেছে তা হলো টুথপিক। যা বেশ আগে থেকেই প্রচলীত ছিলো। তবে বর্তমানে টুথপিক খুবই হালকা ভরযুক্ত হয়, ওজন নেই বললেও মন্দ হবেনা! তবে আগে ঠিক এমনটা ছিলোনা। ইতিহাস থেকে বলা যায় এটির প্রচলন ও এর উপকারী দিক গুলোই এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে যা আজও বিদ্যমান। বিভিন্ন ধরণের নরম এবং শক্ত কাঠ এর টুকরা প্রাচীনকালে দাঁতের স্বাস্থ্য এর খেয়াল, অর্থাৎ মুখের অভন্তর পরিষ্কার রাখতে ও অস্বস্তি থেকে রেহাই পেতে ব্যবহার করা হতো এবং এখনও হয়। এমনকি হাড়, পাখির নখ ইত্যাদিও ব্যবহার করা হতো টুথপিক হিসেবে। তবে যুগের পরিবর্তন এ এর ধরন আকার কিছুটা বদলে গেছে।
ধাতব যুগের আগমন এ সাথে সাথে টুথপিক ব্যবহার সাফল্যজনক ভাবে শুরু হয়েছিলো। এমনকি উত্তর ইতালি এবং পূর্ব আল্পসে ব্রোঞ্জের ধাতব শিল্পের প্রথম দিক থেকেই ছোট এবং পাতলা ব্রোঞ্জের টুথপিকস তৈরি হয়েছিল। ধাতব টুথপিকসের যুগে যুগে অব্যাহত ছিল বেশকিছু দিন। রোমান সাম্রাজ্যের উচ্চ পদস্থ ব্যাক্তিরা রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ দিয়ে টুথপিক তৈরি করে ব্যবহার করত। সেই সময় বিখ্যাত রোমান সম্রাট নেরো রৌপ্য টুথপিক ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। একটা সময় রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে, পরে অন্যান্য জাতিগুলি তাদের টুথপিক এর উপাদান পরিমার্জন করে এবং নতুন ভাবে তৈরি করে ব্যবহার শুরু করে। সতেরো শতাব্দীর দিকে ইউরোপে ধাতব টুথপিক্সের উত্থান শুরু হয়। সেই সাথে এর উপাদান মসৃণ করার চিন্তা থেকে টুথপিক পরিমার্জন এর পথে অগ্রসর হয়। এভাবে চলতে থাকে টুথপিক এর ব্যবহার। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা। এরপর টুথপিকের আধুনিক সংস্করণটির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লোকটি হলেন আমেরিকান উদ্ভাবক চার্লস ফারস্টার। যিনি তার পারিবারিক খামার এর শ্রমিকদের থেকে টুথপিক এর বিষয় লক্ষ্য করেন। এরপর তার মনে এই টুথপিক পরিমার্জন করে সেরা রূপ দেয়ার কথা চলে আসে। তারপর তিনি মেশিন এর মাধ্যমে টুথপিক তৈরি শুরু করেন। ধীরে ধীরে তা বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এভাবে টুথপিকসের ব্যবহার সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পরে বিস্তৃত পরিসরে। আহার শেষে দাঁত পিক চিবানোর অভ্যাসে এর মতো হয়ে যায় সকলের কাছে।