-->

চলছে গাড়ি সিসিমপুরে



আদিবা মাশরুকা,(ঢাকা):

হালুম, টুকটুকি, ইকরি কিংবা শিকু- আমাদের দেশের শিশুদের কাছে নামগুলো অতি পরিচিত এবং অতি প্রিয়। হুম, বলা হচ্ছে জনপ্রিয় শিশুতোষ সিরিজ সিমিমপুরের কথা।
ছোটদের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’। 
চৌদ্দ বছর ধরে শিশুতোষ এই অনুষ্ঠানটি নির্মিত হচ্ছে ৩ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুর প্রারম্ভিক শিক্ষার চাহিদা পূরণের জন্য। সেই সাথে তার লক্ষ্য শিশুর পিতা-মাতা, যত্নকারী এবং শিক্ষকেরাও। আনন্দ আর খেলার ছলে সিসিমপুর ভূমিকা রেখে চলেছে শিশুর সামগ্রিক বিকাশে। ভাষা-বর্ণ; গণিত; পরিবেশ; জেন্ডার সমতা; সামাজিক মূল্যবোধ ও আচার-আচরণ; ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যের প্রতি সহনশীলতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে শেখায় সিসিমপুরের পাঠক্রম। আছে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার; স্বাস্থ্যকর অভ্যাসচর্চা; ভূমিকম্প; রাস্তা পারাপার ও পানিডুবি-বিষয়ক নিরাপত্তা; বিভিন্ন আঘাত প্রতিরোধে সচেতনতা; শিশুদের জমা-খরচ ও সঞ্চয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এবং বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যসহ আরো অনেক কিছু।

সিসিমপুর তার টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও মুদ্রিত বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে শিশুকে বর্ণ চেনা, শব্দ থেকে বর্ণ চিহ্নিত করা, বর্ণ দিয়ে শব্দ মেলানো, শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি করতে সাহায্য করে। চারপাশের পরিবেশ থেকে উপকরণ খুঁজে নিয়ে সেগুলোর মাধ্যমে বর্ণ ও শব্দ চিনতে সাহায্য করে। যেমন: ঘর, কলা, আম, টেবিল, ঘড়ি, গরু, গাছ, পাতা, কলম, বই ইত্যাদি বিভিন্ন শব্দ কোন বর্ণ দিয়ে শুরু হয় তা খেলার ছলে শেখানো হয়। সিসিমপুরের চরিত্রগুলোর মাধ্যমে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান থেকে বিভিন্নরকম আকার-আকৃতির নাম, রঙের নাম ইত্যাদি শেখানো হয়। বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণের বিষয়টিকে সিসিমপুর সবসময়ই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকে। আর তাই সিসিমপুরের মাপেট, মানবচরিত্র এমনকি এ্যানিমেশন সবধরনের টেলিভিশন পর্বে চরিত্র অনুযায়ী প্রত্যেকের শুদ্ধ উচ্চারণকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, যাতে শিশুরা এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রমিত বাংলা শোনার ও চর্চা করার সুযোগ পায়। সিসিমপুরের নানাবিধ শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের ফলে শিশুদের শিক্ষাগ্রহণ যেমন আনন্দদায়ক হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে শিক্ষকদের শিক্ষাদানও হয়েছে আনন্দদায়ক।
শিশুদের শেখাকে আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য করার লক্ষ্য নিয়ে ‘সিসিমপুর’ নামে যে টেলিভিশন অনুষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে, প্রচার হওয়া ১২টি সিজনে ৭০০টির মতো পর্ব তৈরি হয়েছে। ‘সিসিমপুর’ চলে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেও। তাই ২০১০ সালে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ট্রাস্ট পরিচালিত একটি জরিপে ‘সিসিমপুর’ শিশুতোষ অনুষ্ঠান হিসেবে শীর্ষস্থানীয় এবং সামগ্রিকভাবে তৃতীয় জনপ্রিয় অনুষ্ঠান নির্বাচিত হয়। ২০০৭ সালে পরিচালিত এসিপিআরের একটি দীর্ঘ মেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু ‘সিসিমপুর’ অনুষ্ঠানটি নিয়মিত দেখে, তারা তাদের চেয়ে এক বছরের বড় শিশু, যারা ‘সিসিমপুর’ দেখে না, তাদের চেয়ে ভাষা, বর্ণ, গণিত ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়ে বেশি দক্ষতা প্রদর্শন করেছে।

সিসিমপুর অনুষ্ঠানের চরিত্রসমূহঃ-
*হালুম — একটি বেঙ্গল টাইগার। মাছ খেতে খুবই ভালোবাসে।
*ইকরি মিকরি — একটি ছোট দানব আকৃতির মেয়ে পুতুল। যথেষ্ট ভাবুক একটি চরিত্র। সে নিজেকে নাম ধরে উপস্থাপন করতে ভালোবাসে।
*শিকু — একটি ছোট শিয়াল। বিজ্ঞানমনষ্ক, যুক্তিবাদী, গোয়েন্দা। শিকুর বলতে পারো অনুষ্ঠানের উপস্থাপক।
*টুকটুকি — একটি মেয়ে পুতুল। বই পড়তে ভালোবাসে। সে দুই বেণী করতে ভালবাসে। হাতে চুড়ি পরে থাকে। টুকটুকি খুবই মিশুক প্রকৃতির মেয়ে। দ্য নিউ টুকটুকি অপেরার উপস্থাপক।
*মানিক- রতন— দুইটি ভেড়া জুটি। তাদের একসঙ্গে মানিক-রতন হিসাবে সম্মোধন করা হয়।

★মানব চরিত্র সমূহঃ-

*লাল মিয়া— ডাকপিয়ন।সিসিমপুরের যাত্রা শুরুর দিকে সে অভিনয় শুরু করেছিল। এরপর,সে মৃত্যুবরণ করে। সিসিমপুরে তার নামে একটি পাঠাগার আছে।
*মুকুল — বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাসকৃত একটি যুবক ও উদ্যোক্তা।
*সুমনা— সিসিমপুরের স্কুলের শিক্ষক।
*গুণী ময়রা — মিষ্টির দোকানদার।
* আশা— গুণীর স্ত্রী, এবং সিসিমপুরের একমাত্র গ্রন্থাগারিক পাঠাগার।
*পলাশ — গুণী ও আশার ছেলে।
*বাহাদুর — সিসিমপুরের ফেরিওয়ালা।

চলছে গাড়ি সিসিমপুরে চলছে গাড়ি সিসিমপুরে Reviewed by সম্পাদক on রবিবার, জানুয়ারী ১০, ২০২১ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.