গল্প: টুম্পাখালার চিঠি।
লেখা: সানজিদা আক্তার,(রংপুর)।
ছুটি বাড়ছে!
সাথে বাড়ছে শীত, বাড়ছে করোনার প্রকোপের ভয় আর সাথে ঘরে থাকার অভ্যেস। তাই বলে কি ঘরে শুধু বসে থাকাই হবে? এবার বুঝি আগের মত পার্কে ঘোরা কিংবা খেলাধুলা, হুটোপুটিও হবে না। শীতের ছুটিতে দাদুবাড়ি যাওয়ার কথা তো বাদ ই। এগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো রিনি। ঘুমে স্বপ্ন দেখলো তার কাছে একটি আলাদিনের চেরাগ। তাতে ঘষা দিতেই দৈত্য ও হাজির। হঠাৎ ই দৈত্য বলে উঠলো, "বলো রিনি মামনি, তুমি কি চাও?"
রিনি বললো, " আমি চাই, এই বাহিরে যাওয়ার ভয় কে কাটিয়ে আগের মত বাহিরে যেতে।" দৈত্য বললো, " তথাস্তু।"
কাজ হলো না, ঘুম থেকে উঠে রিনি দেখলো সে বাসায় ই রয়েছে। কিন্তু, বাসায় এসেছে টুম্পাখালা! ইশ! এখন খুব মজা হবে। টুম্পা খালা রিনির সবচেয়ে পছন্দের মানুষ। এবার তো আর বাইরে যাওয়ার ইচ্ছাও হবে না। যাক চেরাগের দৈত্য টার কথাই ঠিক হলো। টুম্পা খালা এসেই রিনিকে সময় দেয়া শুরু করলেন। যখন রিনি টুম্পা খালা কে তার বাইরে যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানালো তখন টুম্পা খালা বললেন রিনি বাইরে যেতেই পারে। কিন্তু বাইরের চেয়ে অনেক বেশি করে বাসায়ই মজা করতে পারে এবং সুরক্ষিত থাকতে পারে। টুম্পা খালা রিনিকে নিয়ে কদিন বেশ আনন্দে কাটালেন। দুজনে মিলে বাসার ভেতর সব মজার মজার জিনিস আবিষ্কার করে ফেললেন। টুম্পাখালা না আসলে রিনি বুঝতেই পারতোনা যে, বারান্দায় এত সুন্দর করে গাছ বড় করা যায়। কদিনের মাথায় বাসায় একটা এক্যুরিয়াম আর মাছ ও চলে এলো। যে সময়টা রিনি অযথা পুরনো কার্টুন দেখে পার করতো সে সময়টা সে মাছ নিয়ে কাটালো। টুম্পা খালা আরেকটি কাজ করলেন, তা হলো রিনির গল্প কবিতা পড়ার অভ্যেস করে দিতে থাকলেন। বিভিন্ন বই সংগ্রহ ও অনলাইনে কি করে শিশু কিশোর ২৪ ডট কম এ লেখা বা ছবি পাঠাতে হয় বলে দিলেন। সব মিলিয়ে রিনির সময় গুলো বেশ ব্যস্ত হয়ে উঠলো।
একদিন সকালে ঘুম ভাংতেই রিনি তার বালিশের কাছে একটি চিরকুট পেলো। চোখ ঘষতে ঘষতে পড়া শুরু করলো। তাতে লিখাঃ
আদরের বুড়ি রিনিমা,
আমি জানি তোমাকে জানিয়ে চলে গেলে তুমি যেতে দিবেনা। তাই না জানিয়েই যেতে হলো। কিন্তু আমি চাই, আমি না থাকলেও তুমি খুব হাসিখুশি এবং ক্লান্তিমুক্ত থাকো। তুমি বাসায় বসে থেকে মন মরা হয়ে যাচ্ছিলে। তাই তোমার জন্য বাসায়ই আনন্দ করার আরও কিছু টিপস দিয়ে দিলাম।
তুমি বাসায় থেকে,
১. মায়ের কাছে পছন্দের রান্না শিখতে পারো।
২. চাইলে আরওবপোষা প্রাণী রাখতে পারো।
৩. বিজ্ঞানের মজার ঘটনা দেখতে পারো।
৪. কিছু সুন্দর বই পড়তে পারো এবং বই গুলো নিয়ে বাসায় আলোচনা করতে পারো।
৫. নিজেদের ছবি দিয়ে মেমরি বক্স বানাতে পারো।
৬. ছবি আঁকা শিখে ফেলতে পারো।
৭. ফেলনা জিনিস দিয়ে নতুন জিনিস বানাতে পারো।
৮. বিভিন্ন বোর্ড গেম কিংবা ভিডিও গেম খেলতে পারো।
৯. প্রতিদিন ফোনে কিংবা সরাসরি ২০ টি প্রশ্নোত্তর খেলতে পারো।
১০. নিয়মিত কবিতা, গল্প লিখে ম্যাগাজিন কিংবা পত্রিকায় ছাপাতে দিতে পারো।
১১. গান, নাচ চর্চা করতে পারো।
১২. পরিবারের সবার ছবি একে স্কেচবুক করতে পারো।
১৩. নিজের ঘর নতুন করে সাজাতে পারো।
১৪. বন্ধুদের জন্য গিফট বক্স বানাতে পারো।
১৫. আত্মীয় স্বজনের সাথে বিশেষ করে পছন্দের ভাইবোনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারো।
আর এই কাজগুলোর পাশাপাশি প্রতিদিন অল্প করে পড়াশুনা করতে পারো। জরুরী কাজেই হঠাৎ চলে যেতে হলো। কিন্তু রাগ করো না যেন! আবার একদিন সারপ্রাইজ দিতে চলে আসবো।
ইতি
তোমার টুম্পাখালা।
রিনির চিঠিটা পড়েই প্রথমে রাগ হলো। কিন্তু টুম্পাখালা আবার আসবেন সারপ্রাইজ দিতে। কেমন হয় যদি নতুন কিছু করে টুম্পাখালাকেই সারপ্রাইজ দেয়া যায়? মনের মাঝে এত্ত এত্ত আইডিয়া ঘুরপাক খাচ্ছে। আর দেরী নয়, ঝটপট বসে পড়লো সে নতুন সব কাজগুলো নিয়ে। সারপ্রাইজ দেয়া মানুষ গুলোকেই সারপ্রাইজ দিতে কার না ভালো লাগে!