ফিচার ডেস্ক:
আলুভর্তা জীবনে কখনো খায়নি এমন বাঙালি নিশ্চয়ই মিলবে না! শুধু আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত মাখিয়ে পেট ভরে একবেলার খাবার শেষ করে উঠে যেতে পারে বাঙালিরা। পাঁচশো বছর আগের চিত্র কিন্তু একেবারেই আলাদা। মরিচ তো সবে এসেছে ভারতে কিন্তু যার নামে এই ভর্তা সেই আলুর নামই তখনো শুনেনি বঙ্গবাসী।
আলু পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম ফসল। এর নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থল হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চলের নাম উল্লেখ করা হলেও সম্প্রতি একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে আলুর উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ পেরু। পেরুর ইনকা সভ্যতায় চাষের জমিকে আলু বলা হতো। সেখান থেকেই বাংলা আলু কথাটা এসেছে।
আন্দেস পার্বত্যাঞ্চলের আশেপাশের এলাকা আলুর বেশ কিছু সংখ্যক প্রজাতির স্বাভাবিক উৎসস্থল। ৪০০ বছরেরও কিছু বেশি পূর্বে ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমদিকে স্পেনীয়রা যখন আন্দেস পর্বত এলাকায় পৌঁছায়, তখনই তা প্রথম ইউরোপীয়দের গোচরে আসে; তাদের হাত ধরেই পরবর্তীকালে তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
খ্রিস্টপূর্ব ৫ বছর আগে আজকের পেরু আর বলিভিয়ার ইনকা সভ্যতার মানুষ আটা বানাতো আলু দিয়ে। কলম্বাসের আবিষ্কৃত সমুদ্রপথে সেই আলু ইউরোপের বাজারে আসে ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে। আর এই উপমহাদেশে নবাবী আমলের সময়ে আলুর প্রবেশ ডাচ ব্যবসায়ীয়দের হাত ধরে। প্রথম অবস্থায় ডাচরা কিন্তু আলু সঙ্গে করে আনেনি। এই অঞ্চলের খাবার তাদের পাকস্থলীতে সহ্য হচ্ছিল না, ফলে পরবর্তীতে ব্যবসার তাগিদে এসেছেন, পেটের তাগিদেই সসঙ্গে করে বস্তায় বস্তায় আলু এনেছেন। তাদের হাত দিয়েই স্থানীয়রা পেয়ে যায়, সহজে চাষযোগ্য এবং সুস্বাদু এই খাবারটি। পরবর্তীতে বাঙালিও আলুকে সাদরে বরণ করে নেয় তার রোজকার মেন্যুতে।
আর এভাবেই আলু ভর্তার সুত্রপাত বাঙালির খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। শুকনো মরিচ পুড়িয়ে, কাঁচা পেয়াজ কুঁচি আর সরিষার তেল দিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে তৈরি হয় অত্যন্ত মুখরোচক এই খাবারটি। সঙ্গে ধনিয়া পাতা থাকলে তো কথায় নেই।
-তথ্য সংগৃহীত