গল্প: আলোর পথে।
লেখা: সাজ্জাদুল ইসলাম রাকিব, নোয়াখালী।
এই শাওন! ঘুড়ি কেটেছে।
-কোথায়?
-ওই যে এদিকেই আসছে।
-ওমা তাইতো! কথাগুলো বলেই ভৌঁ
দৌড় দিল শাওন আর মাসুম।
শাওন আর মাসুম। দু'জনের বাড়ি একই এলাকায় এবং একসাথে পড়ে বলে ঘনিষ্টতা যেন দহরম মহরম খাতিরে পৌঁছেছে। তাদেরকে দেখলে মনে হয় যেন এক অন্তর এক প্রাণ। বিকাল হলেই ওরা দু'জনে বেত্রাবতি নদীর পাড়ে বসে গল্প করে এবং মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকায়। অবশ্য তার একটা কারণও আছে। কেননা এই গ্রীষ্মের সময় বেত্রাবতি নদীর ওপাড়ের কিছু ছেলে নানান রকম ঘুড়ি ওড়ায়। ঘুড়ি ওড়ানোর সময় তাদের মাঝে চলে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলা। যার ফলে ঘুড়ি কাটলেই কেটে যাওয়া ঘুড়ি এপাড়ে আসতে বাধ্য থাকে। তবে কেটে যাওয়া ঘুড়ি ওপাড়ের ছেলেরা নিতে আসতে পারেনা কারণ নদীতে কোনো পুল নেই৷ আজও তার ব্যাতিক্রম ঘটলো না। ঘুড়টার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে তারা দু'জন একটি মেহগনি গাছের সামনে এসে দাঁড়াল। কারণ, সেই ঘুড়িটা মেহগনি গাছে গিয়েই বিঁধেছে। গাছটা মাঝারি আকারের এবং কিছুটা উচুঁ। কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না, কেননা ওরা দু'জনই গাছে উঠায় পটু।
-শাওন, তুই নিচে থাক। আমি গাছে উঠি।
কথাটা শাওনকে উদ্দেশ্য করে বলল মাসুম।
-না মাসুম। আমিই উঠি। তুই বরং নিচে থাক।
দু'জনই নাছোড়বান্দা। কেউ কারো থেকে কম যায় না। কিন্তু মাসুমের অতিরিক্ত পিড়াপীড়িতে শাওনকে নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। দশ মিনিটের মত অপেক্ষা করার পর মাসুম নিচে নামল বড় একটা ঘুড়ি সমেত। কিন্তু ঘুড়িটার ছাউনি কিছু অংশ ছিড়ে গেছে গাছের সাথে ধাক্কা খাওয়ার ফলে। তবে তাতে ওদের কোনো সমস্যা হবেনা। বাড়ি গিয়ে ঠিকই ওরা কাগজের পট্রি লাগিয়ে দিবে ছিড়ে যাওয়া ছাউনিটার ওপর। পাওয়া ঘুড়িটাকে নিয়ে ওরা দু'জন খোশমেজাজে বাড়ির পথে রওনা দিতে লাগল। পথিমধ্যে ওদের এক বড়ভাইয়ের সাথে দেখা।
-কেমন আছো তোমরা? ওদের দু'জনকে উদ্দেশ্য করে বললো সেই বড় ভাইয়াটি।
-ভালো। আপনি কেমন আছেন? দু'জন সমস্বরে বলল।
-আলহামদুলিল্লাহ। তো তোমরা কোথা থেকে আসছো?
-ওই তো... ওখান থেকে কিছুটা আমতা আমতা ভাব চলে এলো মাসুমের মুখ থেকে।
-তোমাদের হাতে দেখছি একটা ঘুড়ি তা কোথায় যাচ্ছিলে তোমরা?
-না মানে ভাইয়া আমরা এই ঘুড়িটাকে একটা গাছে পেয়েছি কিছুটা মাথানিচু করে বললো শাওন।
-কাজটা ঠিক করোনি ভাইয়ারা। কখনো কোন পাওয়া জিনিস নিতে নেই৷ তুমি কি এই পাওয়া ঘুড়ির মালিককে বলে-কয়ে নিয়েছ? হয়ত না। তার মানে তুমি ঘুড়িটাকে চুরি করেছ! আর এখন যদি এই ঘুড়িটার মালিক ঘুড়িটাকে খুঁজতে এসে না পেয়ে ফিরে যায় তবে তার কেমন কষ্ট লাগবে? হতে পারে সেটা তার শখের সবচে প্রিয় ঘুড়ি। তাই তোমাদের উচিৎ হবে ঘুড়িটাকে তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। কথাগুলো বলে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো সেই বড় ভাইয়া। শাওন আর মাসুম পুরো থ। কারো মুখে কোন কথাই নেই। যেন নির্বাক হয়ে গেছ। কিছুক্ষণ পর তারা দু'জন নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হলো এবং পাওয়া ঘুড়িটাকে তারা ঘুড়ির প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য উদ্ধত হল।
ওই ঘটনার পর থেকে তারা আর কোনোদিন বিকালবেলা বেত্রাবতি নদীর পাড়ে বসত না। বরং সেই সময়টাতে তারা তাদের বাড়ির কাজকর্মে মনোনিবেশ করত নতুবা তারা তাদের পড়ালেখা নিয়ে সর্বদা ব্যাস্ত থাকত। এভাবেই চলতে থাকলো দুই বন্ধুর কৈশোর জীবন।
দুই বন্ধুর ভালো কাজ দেখে অনেকেই অবাক হয়ে বলতে লাগলো,অবশেষে বুঝি ওরা আলোর পথে পৌঁছে গেছে।
গল্প: আলোর পথে।
Reviewed by সম্পাদক
on
মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২০
Rating: