-->

শরীর সুস্থ রাখে যেসব খাবার।


মোঃ মিরাজ হোসেন চৌধুরী,(চট্টগ্রাম):

মানুষ কীভাবে সুস্থ থাকতে পারে এবং কোন উপায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, সেটি নিয়ে নানামুখী গবেষণা হয়েছে বিশ্বজুড়ে।মানব সভ্যতার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানুষের ইচ্ছে ছিল,কীভাবে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।কীভাবে এই পৃথিবীতে আরও কয়েকটা দিন টিকে থাকা যায়।কোনো বিজ্ঞানী বা মহারাজা তো আবার অমরত্ব এর স্বাদ গ্রহণ করার চেষ্টাটাও বাকি রাখেনি।কিন্তুু,তারা এক্ষেএে চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে,এমনকি কেউ কেউ তোহ অমরত্বের চেষ্টায় নিজের প্রাণ টাও দিয়ে দিয়েছে।তবে,বিশেষজ্ঞদের দেওয়া কিছু সহজ নিয়ম-কানুন দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করার মাধ্যমেই আপনি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটা বাড়িয়ে নিতে পারেন।

বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাস মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও মানুষ খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়।এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন-যাপনের পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরা।

মানুষ সচরাচর যে ধরণের খাবার খায়, সেগুলো হচ্ছে - শর্করা, প্রোটিন এবং ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার।এ ধরণের খাবার শরীরের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে ভিটামিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-এর উপর।

দুগ্ধজাত খাবার
দুগ্ধজাত খাবারগুলো বিজ্ঞানের ভাষায় প্রোবায়েটিকস হিসেবে পরিচিত। যেমন- দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি।মানুষের পাকস্থলিতে যে আবরণ আছে, সেটার ভেতরে বেশ কিছু উপকারী জীবাণু কার্যকরী হয়।বাংলাদেশের একজন চিকিৎসক হাসান শাহরিয়ার কল্লোল বলেন, পাকস্থলীতে যদি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায় তখন সেখানে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।দুগ্ধজাত খাবারগুলোর পাকস্থলীতে উপকারী জীবাণুকে বাঁচিয়ে রাখে। ভিটামিন ডি এর জন্য দিনের কিছুটা সময় শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটা খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণের সাথে সম্পৃক্ত।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, যার শরীরের গঠন ভালো এবং সেখানে কোন ঘাটতি থাকবে না, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হবে।তিনি বলেন, যেমন শিশু জন্মের পর থেকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

প্রোটিন
প্রোটিন শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বাড়ায়, রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি জোগায়। এই মৌসুমে শরীর সুস্থ রাখতে উন্নত মানের প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল থেকে পেতে পারেন প্রোটিন। তবে লাল মাংস এড়িয়ে যাবেন। ভালো প্রোটিনের যে উপকার, লাল মাংসে তা পাওয়া যায় না। প্রোটিনের এই ডোজ হচ্ছে শরীরের ওজনের প্রতি কেজির জন্য এক গ্রাম করে। অর্থাৎ, কারও ওজন যদি ৬৮ কেজি হয়, তবে দৈনিক তাঁর ৬৮ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন দরকার।

ভিটামিন সি
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি দারুণ কার্যকর। ভিটামিন সি মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। ভিটামিন সি-ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে হৃদ্‌রোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এই ভিটামিন পরিচিত ফল এবং বিভিন্ন শাকসবজি যেমন: আমলকী, লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, পেঁপে, কাঁচা মরিচ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে থাকে। তবে যেহেতু আমাদের শরীর ভিটামিন সি জমা করে রাখতে পারে না, তাই প্রতিদিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম এবং নারীর ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার।

ভিটামিন বি১২
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে ভিটামিন বি১২ দারুণ কার্যকর। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার ও ডিমে ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়। তবে যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁরা শরীরে ভিটামিন বি১২-এর অভাব পূরণে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সম্পূরক নিতে পারেন।

জিঙ্ক
শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি হলে রক্তে শ্বেতকণিকার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। বাদাম, শিম, দুগ্ধজাত পণ্যে জিঙ্কের পরিমাণ বেশি থাকে। মনে রাখবেন, শিশুদের ক্ষেত্রে জিঙ্কের পরিমাণ কমে গেলে তারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।

আঁশ সমৃদ্ধ খাবার
আঁশ সমৃদ্ধ খাবার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান সরবারহ করে। এটা খনিজ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ যা শরীরের পর্যাপ্ত সম্পূরক যোগায়।আঁশ-জাতীয় খাবার শরীরে দুর্বলতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে এমন সংক্রমণ ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে।

বর্তমান সময়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সবচেয়ে বেশি জরুরি। নতুন ভাইরাস বা ফ্লু’র থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন খাবার যেমন- দই, পালংশাক, কাঠবাদাম, গ্রিন টি, সূর্যমুখীর বীজ, টক ফল ইত্যাদি খাবার 

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মানুষকে পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন সংক্রামক জীবের(ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফানগি, প্যারাসাইট) হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তিভেদে অসংখ্য স্পষ্ট ও উল্লেখযোগ্য আন্তঃবৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়।বংশগতি,বয়স, লিঙ্গ, ধূমপানের অভ্যাস, ব্যায়াম করার অভ্যাস, মদ্যপান করা, উদ্বেগ, সংক্রমণের ইতিহাস ও প্রতিষেধকের ইতিহাস এবং সর্বোপরি জীবনের প্রাথমিক সমস্ত অভিজ্ঞতা সম্ভবত সাধারণভাবে এই পর্যবেক্ষিত বৈচিত্র্যের কারণ। এই সকল বিষয়ের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ  পরিবর্তনশীল বিষয় হল খাদ্যাভ্যাস।প্রচলিত একটি কথা আছে “আমরা তাই, যা আমরা খাই”- শুধু আমাদের ওজন নয়, রক্তে শর্করার মাত্রা এবং অন্যান্য বিপাকীয় বিষয় আমরা কী খাচ্ছি তার উপর নির্ভর করে। একই ভাবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তাই। আমাদের শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দান করে শ্বেত রক্ত কণিকা, এই শ্বেত রক্ত কণিকা মানবদেহের সৈন্যর মতন – তারা সব সময় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। আর এই সকল সৈন্যরা কি খালি পেটে কাজ করতে পারবে? অতঃপর, সঠিক জাতীয় খাদ্য  আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সরবরাহ করা অত্যাবশ্যকীয়।রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার যত্ন নেওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় উপাদানটি হল প্রোটিন। যদিও বেশ কিছু অ্যামাইনো অ্যাসিড যেমন গ্লুটামিন ও আর্জিনিন অনাক্রম্যতা দানের ক্ষেত্রে অধিক মাত্রায় সমালোচিত, এগুলি আবার প্রায় সমস্ত প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারেই দেখতে পাওয়া যায়। একটু দেখে নিন যে আপনার রোজের খাবারে প্রোটিন আছে তো?অন্যান্য পুষ্টিপদার্থ যা অনাক্রম্যতা গড়ে তোলার জন্য অপরিহার্য, বিশেষত শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত প্রদাহের ক্ষেত্রে তা হল – ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আমলকী, কমলালেবু, মিষ্টি লেবু, পেয়ারা, লেবু, কিউই ইত্যাদি ফলে বর্তমান। অনাক্রম্যতা ব্যবস্থা যথাযথভাবে কাজ করার জন্য যে সমস্ত পুষ্টিপদার্থগুলির  প্রয়োজন তা হল – ভিটামিন এ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি6, ভিটামিন বি12,ভিটামিন ই, জিঙ্ক, কপার, লোহা, সেলেনিয়াম। বস্তুত, এই উপরোক্ত যে কোনো একটি বা একাধিক পুষ্টিপদার্থের অভাব ঘটলে সমস্ত ধরণের অনাক্রম্যতা ভেঙে পড়তে পারে।সংক্ষিপ্তভাবে, প্রচুর পরিমাণে ডাল, অঙ্কুরিত ছোলা, সব্জি এবং ফলসহ একটা সুষম খাদ্য গ্রহণ আমাদের দেহকে অনাক্রম্যতা প্রদান করে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়া এড়িয়ে চলুন – কারণ এগুলি সাধারণত এতমাত্রায় পরিশোধিত হয় যে তাদের মধ্যে ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের অভাব লক্ষ্য করা যায়।

তাহলে,আজ থেকে নিয়মগুলো অনুসরণ করুন এবং নিজের জীবনকে সুন্দর ও সাবলীল ভাবে গড়ে তুলুন।

তথ্যসূত্র: বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক জার্নাল।

শরীর সুস্থ রাখে যেসব খাবার। শরীর সুস্থ রাখে যেসব খাবার। Reviewed by সম্পাদক on বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৩, ২০২০ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.