সানজিদা আক্তার,(রংপুর):
স্কুলের পড়াশোনা ছোট্ট ছেলেটার একদম ভাল লাগতো না তার। ক্লাসে বসে বসে জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো শুধু। একদিন ক্লাসে বসে সে নিবিষ্ট মনে ছবি আঁকছিলো। হেডমাস্টার তা দেখে ফেললেন এবং তার কাছ থেকে বইটি চেয়ে নিলেন। বইটিতে একনজর চোখ বুলিয়ে বললেন, "বইটি আমার কাছে থাকুক।" এদিকে ছেলেটি বেশ বিব্রত হলো। ভয়ে স্কুল পালিয়ে গেলো। কদিন যেতেই হেডমাস্টার লক্ষ্য করলেন ছেলেটি আর স্কুলে আসেনা। বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন ছেলেটি প্রতিদিনই যথাসময়ে স্কুলের জন্য বের হয় এবং বাড়ি ফিরে আসে। এরপর হেডমাস্টার নিজেই তার বাড়িতে এলেন, ছেলেটির বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন তার অসুখ করেছে কী না! ছেলেটিকে ডাকা হলো। হেডমাস্টারের সামনে সামনে এসে বললো, " ভয়ে স্কুলে যাইনা।"
হেডমাস্টার জিজ্ঞেস করলেন, "কীসের ভয়?"
ছেলেটি বললো, "বইতে ছবি এঁকেছি তাই।"
তখন হেডমাস্টার হো হো করে হেসে দিলেন, বললেন, "তুমি ছবি এঁকে পালাচ্ছো আর আমি এ ছবি দেখে তোমাকে খুঁজছি। আমি তোমার বাবার সামনে বলে যাচ্ছি, তুমি চমৎকার ছবি আঁকো। তুমি যদি আঁকার জগতে যাও তাহলে খুব ভালো করবে।" আচ্ছা ছেলেটি কে মনে প্রশ্ন জাগছে তাই না? ছেলেটি হলো বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। শিল্পকলার প্রতি ছোটবেলা থেকেই তাঁর ঝোঁক ছিলো অনেক বেশী। অনেক ছোট বয়সেই তিনি পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু, ছাগল, ফুল, ফল এঁকে মা বাবাকে দেখাতেন।
তোমরা কি পাবলো পিকাসোর নাম শুনেছো? স্পেনের এই বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী মাত্র ৯ বছর বয়সেই তার বাবার অধীনে চিত্র আঁকার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। ছোটবেলায় পিকাসোর মা তাকে বলেছিলেন, "তুমি খুব বড় হবে, তুমি যদি সেনাবাহিনিতে যোগ দাও তাহলে জেনারেল হবে। যদি সন্ন্যাসী হও তাহলে পোপের (পোপ হলো রোম এর চার্চ প্রধাণ) মর্যাদা পাবে।" তার মা জানিয়েছিলেন পাবলো পিকাসোর মুখে প্রথম উচ্চারিত শব্দ ছিলো, 'পিজ'। 'পিজ আসলে 'লাপিজ' শব্দের শিশুতোষ সংক্ষিপ্ত উচ্চারণ, যার অর্থ 'পেন্সিল'।
এবার কি তাহলে ইতালির ফ্লোরেন্সের সেই পিচ্চি প্রতিভাবান ছেলেটির গল্প বলবো? এত্তটুকু বয়স থেকেই সে ছিলো নানাবিষয়ে পারদর্শী। কিন্তু চিত্রকলার প্রতি তার আগ্রহ ছিলো প্রবল। ছেলেটি যে গুরুদেবের কাছে চিত্রকলা শিখছিলো তিনি একদিন ছেলেটিকে একটি পরীর ছবি আঁকতে বললেন। পরীর ছবিটি আঁকা শেষ হলো কিছুদিন পর। কিন্তু ছবিটি দেখে পরিবারের সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেলো। এমনি একটি অসাধারণ চিত্র তিনি এঁকে ফেললেন বড় হয়ে। নাম দিলেন 'মোনালিসা'। চিনতে পেরেছো নিশ্চয়? এই ছেলেটি আসলে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি।
তোমরা কি টেলিগ্রাম এর আবিষ্কারক স্যামুয়েল মোর্স কে চেনো? মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্রের এই বিজ্ঞানী কিন্তু ছোটবেলা থেকেই একজন চিত্রশিল্পীও ছিলেন। চিত্রকলা নিয়ে তাঁর বেশ আগ্রহ ছিলো। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করতেন বলেই তাঁর বিজ্ঞান আবিষ্কারের কথাই মনে রেখেছে মানুষ।
"আমি ছবি আঁকার বিষয়টি পেয়েছিলাম আমার বড় ভাই সোলেমান খানের কাছ থেকে। বাবা আমাদের দুজনের জন্য রিক্সের একটি রঙিন বাক্স দিয়েছিলেন। এটিই ছিল ছবি আঁকার একমাত্র সম্পদ। তখন থেকেই আমি সমস্ত খাতার পৃষ্ঠাজুড়ে নানা ছবি এঁকে ভরে রাখতাম। পরে তিনি বাক্সটা আমাকে দিয়ে দেন।" বাংলাদেশের অনন্যসাধারণ চিত্রশিল্পী হাশেম খানকে তাঁর ছোটবেলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি এই কথা গুলো বলেন।
'মিনা কার্টুন' এর কথা মনে পড়ে? কি সুন্দর কার্টুনটি এখনো জীবন্ত আনন্দ দিয়ে যায় তাই না? এই কার্টুনটির জনক মুস্তাফা মনোয়ার ও কিন্তু একজন চিত্রশিল্পী। ছোটবেলায় তিনি গান করতেন। কিন্তু পড়াশুনা করতে করতে হঠাৎ ই তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি হলেন, শুরু হলো চিত্রশিল্প নিয়ে যাত্রা। বানিয়ে ফেললেন মনের কথা কার্টুন, মীনা কার্টুন আর বিভিন্ন ধরণের পাপেট!
এই যে বিশ্ববিখ্যাত মানুষগুলোর গল্প বললাম, তারা কিন্তু হুট করেই তৈরী হননি। ছোট্টোবেলা থেকেই অসীম আগ্রহ তাদের এতো বিখ্যাত করেছে। তাহলে তোমরা বসে আসো কেন? রং, তুলি, পেন্সিল যা আছে তাই নিয়ে বসে পরো আঁকতে। কল্পনার রাজ্য ভরিয়ে দাও রঙে রঙে। যাতে অলস সময়গুলো কাজে লাগিয়ে তুমিও হয়ে উঠতে পারো একজন বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী 'তুমি'।