-->

সফলতার কারিগর অনুপ্রেরণা।


 


সাজ্জাদুল ইসলাম রাকিব,নোয়াখালীঃ    
মনে আছে সেই ‘মনের পাখি’টার কথা? ওই যে সারাক্ষণ বকবক করে চলে, তোমাকে ভয় দেখায়। মনের সেই পাখিটা যদি বেশি বকবক করেই চলে, তোমার সামনের চলার পথ কিন্তু রুদ্ধ হয়ে যাবে। সাহস হারিয়ে ফেলবে। সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি হবে। ফলে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ আর অবসাদ বাড়বে।

তোমার উন্নয়নের ধারা চালু রাখতে হলে তোমাকে শিখতে হবে কীভাবে সেই পাখিটাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ছোটবেলার কথা একবার ভাবোতো। পরিবারে বা স্কুলে কতবার ভালো প্রশংসা শুনেছো? আর কতবার শুনেছো, তুমি পারবে না, তুমি একটা গাধা, অলস, তোমাকে দিয়ে কী হবে? কতবার তোমাকে নিঃশর্তভাবে বিশ্বাস করেছেন তোমার বাবা-মা বা স্কুলের শিক্ষকরা? কতবার তোমার ওপর আস্থা রেখেছেন, তুমি করতে পারবে? কতবার তোমাকে বিনা বাধায় রান্নার বা ঘরের কাজ করতে দিয়েছে?

নেতিবাচক কমেন্টের চেয়ে ভালো কথা শুনেছো বেশি, এই দাবি জোর গলায় করার মতো মানুষের সংখ্যা খুবই কম। এই কম মানুষের মধ্যে যদি তুমি একজন হয়ে থাকো, তবে তুমি আসলেই ভালো আছো। তোমার মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা কম আঘাত হানবে।

জীবনে সফলতা লাভ করতে কে না চায়। কিছু জিনিস এড়িয়ে চললে এবং নিজের লক্ষ্য ঠিক করে সে অনুযায়ী চেষ্টা করে গেলে সফলতা লাভ করাটা কিন্তু কঠিন কিছু না। তবে পৃথিবীতে এমন অনেকেই আছে যারা জীবনে অন্যান্য বিষয়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের সফলতার পথ থেকে অনেক দূরে সরে যায়।

তাই সবকিছুর আগে জেনে নেয়া প্রয়োজন কোন বিষয়গুলো সফলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং জীবনে সফলতা পেতে হলে কোন বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। 


১. ব্যক্তিস্বাধীনতার অভাব তোমার অনুপ্রেরণা নষ্ট করেঃ

ব্যক্তিস্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা সবাই উন্নত জীবন লাভ করি। আমাদের সকলের মস্তিষ্কে সিদ্ধান্ত নেবার মত একটি অবস্থান রয়েছে। আর সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে সেই অবস্থান নিয়ে আমাদের সকলের ভাবা উচিত। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে আমরা পারিপার্শ্বিক দিকে অনেক বেশি মনোযোগী হই এবং সিদ্ধান্ত নেবার বিষয়টি আমাদের মধ্যে থাকলেও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা পরাধীন হয়ে যাই।

আমরা যখন সৃজনশীল কাজ করি তখন আমাদের মস্তিষ্ক নানান রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। এ কাজগুলো আমরা কেন করছি, কাদের জন্য করছি, কোন সময় করব এরকম নানান কৌশলে এই প্রশ্নের উত্তরগুলো যদি আমরা নিজস্ব মস্তিষ্ক থেকে নিজস্ব ভাবনার জায়গা থেকে দিতে পারি একইসাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি কোন কাজগুলো আমাদের জন্য সঠিক তাহলে কিন্তু অনুপ্রেরণার সেইকাজগুলো শেষ করতে পারি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্তহীনতার পরাধীনতা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা নষ্টের কারণ হিসেবে কাজ করে

পুনরায় যেভাবে অনুপ্রাণিত হবেঃ

খুঁজে বের করার চেষ্টা কর কতটুকু স্বাধীনতা তোমার রয়েছে লক্ষ্য অর্জন করবার জন্য। হ্যাঁ অবশ্যই যেকোনো লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা অনেক বেশি প্রয়োজন। ব্যক্তি স্বাধীনতা তোমাকে তোমার নির্ধারিত লক্ষ্যের জন্য অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করবার জন্য শক্তি যোগাবে। আর তাই হারানো অনুপ্রেরণা খুঁজে পেতে নিজের লক্ষ্যের জন্য কতটুকু স্বাধীনভাবে তুমি কাজ করতে পারবে সেই উত্তরটি খুঁজে বের করো। একই সাথে নিজের পরাধীন মনটাকে স্বাধীন করে দাও।

২. ভয় তোমার অনুপ্রেরণা নষ্ট করে দেয়ঃ

ভয় সব সময়ই আমাদের অনুপ্রেরণা নষ্টের অন্যতম হাতিয়ার। কারণ, যখনই তুমি ভয় পাবে তখনই তুমি এমন একটি পথ খোঁজার চেষ্টা করবে যেখান থেকে খুব সহজেই গা বাঁচিয়ে সে কাজটি শেষ করতে পারবে। এমন একটি রাস্তা নিঃসন্দেহে মনোযোগ সহকারে এমনকি পূর্ণ মনোনিবেশে সে কাজটি করার মানসিকতা নষ্ট করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে ভয় তোমাকে অনেক সতর্ক করবে, সেক্ষেত্রে ভয় ব্যাপারটি যেকোন বড় কাজ করার ক্ষেত্রে কিছুটা উপকারী হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা অপকারী।

কারণ হচ্ছে ভয় তোমার একটি কল্পনা। যা যতটা ঝুঁকি তুমি নিচ্ছো তার থেকে বেশি তোমাকে ভাবাচ্ছে। আর তোমার ভয় যদি তোমার ঝুঁকির চেয়ে বড় হয়, সে ভয় তোমাকে সামনে এগোতে দেবে না, কারণ, এই ভয় তোমার ঝুঁকিকে বাস্তবতার চেয়ে আরো বেশি ভয়ঙ্করভাবে তোমার সামনে উপস্থাপন করবে। আর এই ভয়ই যখন তোমাকে বড় কাজ করতে দেবে না বা বড় কোনো ঝুঁকি নিতে দেবে না, তখন তা তোমার অনুপ্রেরণা নষ্টের জন্য অন্যতম হাতিয়ার হয়ে থাকবে।

পুনরায় অনুপ্রাণিত হবে যেভাবে:

পুনরায় অনুপ্রাণিত হতে হলে তোমার ভয়কে জয় করতে হবে। তোমার ভয়কে ধন্যবাদ জানাও, আর যাই হোক তোমার ভয়গুলো তোমাকে নেতিবাচক ভাবে হলেও রক্ষা করতে চেয়েছে। এরপর নিজেকে প্রশ্ন করো, “আমি কেন ভয় পাচ্ছি? ভয় আমাকে দমাতে পারবে না, ভয়ের জন্য আমি কাজটি করব না?”

এই প্রশ্নগুলো খুব দ্রুত তোমার মন থেকে সাধারণ ভয়গুলোকে তাড়িয়ে দেবে, এরপর যে ভয় তোমার ভেতর থেকে সরে গিয়েছে সেগুলোর দিকে তাকাও আর ভাবো অনেক ভয়কে তুমি তাড়িয়ে দিতে পেরেছো। বাকি কিছু ভয় যেগুলো তোমাকে বড় কাজ করতে বাধা দিচ্ছে তাদেরকে সময় দাও ভেবেচিন্তে নিজের ভেতর থেকে ঝেড়ে ফেলো।

ভয় তোমাকে কোনোভাবেই নামাতে পারবে না, দমাতে পারবে না। বারেবারে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করো। যখন ভয়কে হারিয়ে তুমি জয়ী হবে, দেখবে যে ভয় তোমার অনুপ্রেরণা নষ্ট করতে চেয়েছিলো, সে ভয়ই তোমাকে নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করে আরো নতুন উদ্যোমে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে।

৩. ভুল লক্ষ্য নির্ধারণ তোমার অনুপ্রেরণা নষ্ট করছেঃ

আমরা সাধারণত দুইভাবে ভাবনাচিন্তা করি। প্রথমত, নিজস্ব ভাবনা, দ্বিতীয়ত, সামাজিক ভাবনা। তোমার নিজস্ব ভাবনা তোমাকে অনেক সৃজনশীল করে তোলে ,তুমি যা ভাবো তাই করতে চাও বা করার চেষ্টা করো তখন তোমার নিজস্ব ভাবনা ধাপে ধাপে তোমাকে একজন দক্ষ চেতনার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।

আর আমাদের দ্বিতীয় ভাবনা হলো, যা সামাজিক ভাবনা হিসেবে পরিচিত তা আমরা জন্মগতভাবে পেয়ে থাকি। এই সামাজিক ভাবনা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ভাবায়, যে সামাজিক সকল নিয়মকানুন আমাদেরকে মানতে হবে। অবশ্যই সমাজে চলতে গেলে সামাজিক নিয়ম মেনে চলতে হবে, তবে যখন তোমার লক্ষ্য সামাজিক নিয়মের গতানুগতিক ঘাটে বাঁধা পড়ে যাবে তখন তোমার লক্ষ্য আর তোমার থাকবে না। সেটা সমাজের প্রয়োজনে সামাজিক ভাবনার প্রয়োজনে তুমি সেটাকে গুরুত্ব দেবে।

অনেক সময় আমরা ভেবে পাইনা যে লক্ষ্যটি আমরা নির্ধারণ করেছি সেটাকে নিজের জন্য করেছি নাকি সামাজিক ভাবনা থেকে করেছি। লোকে কী বলবে সে ভাবনাটি আমাদের প্রতিনিয়ত তাড়া করে, তাই আমরা সামাজিক ভাবনা থেকে লক্ষ্য নির্ধারণ করার অভ্যাসটি জন্মগতভাবে নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলি। যখন কোন কাজ করতে ভালো লাগছে না বা কোন বিষয় তোমাকে আর উদ্বেলিত করে তুলছে না, তখনই ভাবতে হবে সে কাজটি তুমি আসলে কি নিজের জন্য করছ নাকি সমাজের জন্য বা অন্য কারো জন্য ভেবে করছো।

যে কাজগুলো করতে আমরা অনুপ্রাণিত বোধ করি না সে কাজগুলো আমরা নিজেদের ভাবনা থেকে করি না। আর তাই লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তোমার আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যটি যদি তোমার না হয়ে অন্য কারো হয়, আর সেই ভাবনা যদি তোমার মস্তিষ্কে জায়গা করে নেয় তাহলে অবশ্যই সে ভুল লক্ষ্যটি তোমার অনুপ্রেরণা নষ্ট করবে।

পুনরায় যেভাবে অনুপ্রাণিত হবেঃ

তোমার লক্ষ্য নিয়ে পুনরায় ভাবো। সময় থাকতে লক্ষ্যভেদে তা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্তটি মোটেও ভুল সিদ্ধান্ত হবে না। যেহেতু সামাজিক ভাবনা আমাদের জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় না, সেহেতু চাইলেই তুমি নিজস্ব ভাবনায় প্রবেশ করতে পারো। নিজের ভাবনায় ঢুকে দেখো তুমি আসলে কী করতে চাও। কোন ভাবনাগুলো তোমাকে উদ্বেলিত করে তোলে তুমি আসলে জীবনে কী করতে চাও।

যে বিষয়গুলো তোমাকে আনন্দ দিচ্ছে যেগুলো তোমাকে হাসাচ্ছে ,যে ভাবনাগুলো তোমাকে প্রতিনিয়ত সামনে এগিয়ে যাবার জন্য প্রেরণা যোগাবে যোগাচ্ছে নিঃসন্দেহে সে ভাবনাগুলো তোমাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর তাই ভুল লক্ষ্য থেকে বের হয়ে এসে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করো দেখবে আবার অনুপ্রাণিত হয়ে পুনরায় কাজে মনোনিবেশ করতে পেরেছ।

৪. পরবর্তী ধাপের জন্য না ভাবা তোমার অনুপ্রেরণা নষ্ট করেঃ

যেকোনো বড় লক্ষ্য অর্জন করার সময় সেই লক্ষ্যের জন্য কাজের পাশাপাশি অন্যান্য কাজ ঠিক মত করতে পাচ্ছো কিনা তা খেয়াল করো।  অর্থাৎ বড় লক্ষ্য অর্জনের জন্য ছোট ছোট কাজগুলোকে গুরুত্ব না দিলে তোমার বড় লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে সাহস এবং একই সাথে অনুপ্রেরণার প্রয়োজন তা পাবে না। কেননা তুমি যদি সঠিকভাবে পরবর্তী ধাপে কোন কাজটি করতে হবে তা বুঝে উঠতে না পারো তাহলে তোমার সেই কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা থাকবে না।

যেভাবে পুনরায় অনুপ্রাণিত হবেঃ

তোমার অনুপ্রেরণাকে যদি চলমান রাখতে চাও তাহলে সুনির্দিষ্টভাবে পরবর্তী ধাপে কী কী করবে সেজন্য ছোট ছোট কাজগুলোকে গুরুত্ব দাও। যাতে করে তোমার ভেতরে প্রস্তুতি পাকাপোক্ত হয় বড় লক্ষ্য অর্জন করবার জন্য। যখন তুমি ছোট ছোট কাজ থেকে সফলতা থেকে তখন তুমি আরো বেশি অনুপ্রাণিত হয়ে তোমার বড় লক্ষ্যের জন্য কাজ করতে পারবে।

একটা গল্প দিয়ে শেষ করা যাক-

দরিদ্র ছেলেটা লেখাপড়ার খরচ যোগাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে হকারি করত। একবার প্রচুর খিদে নিয়ে সে এক রমণীর দরজায় গেলেও লজ্জায় খিদের কথা না বলে এক গ্লাস পানি চাইল।

রমণী বুঝতে পেরে তার জন্য এক গ্লাস পানির বদলে এক গ্লাস দুধ নিয়ে এল। ছেলেটা তার দাম দিতে চাইলে রমণী তা নিতে অসম্মতি জানালেন। ঐদিন ঐ ছেলে শুধুমাত্র ভরপেটেই ঐ বাড়ী থেকে বের হয়নি বরং বেরিয়েছে অনেক অনুপ্রেরণা এবং শ্রদ্ধা নিয়ে।

অনেক বছর পর, বড় শহরের, বিরাট এক ডাক্তার হাওয়ার্ড কেলি এক মৃতপ্রায় রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হলেন। রোগীর গ্রামের নাম শুনে তিনি তার শৈশবে সেই গ্রামের এক রমণীর থেকে পাওয়া অসীম স্নেহের কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলেন এবং সাথে সাথে তিনি রোগীকেও চিনে ফেললেন, আরেহ! এতো সেই রমণী!

কেলি তাঁর সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে সেই রমণীকে সুস্থ করে তুললেন। কিন্তু, রমণীর হাসপাতালের খরচ দেবার মত সামর্থ্য ছিল না। তিনি কাউন্টারে গিয়ে দেখলেন, ডা. কেলি ইতোমধ্যে তার হাসপাতালের দেনা চুকিয়ে দিয়েছেন এবং তার বিলের কাগজে লিখে দিয়ে গেছেন, “Paid in full with a glass of milk”

আমরা জীবনে যাই করি না কেন, সবকিছুরই প্রতিদান আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। হোক না একটু দেরি! এই রমণী কি কখনো ভেবেছিলেন যে সে এভাবে এত বছর পর তার প্রতিদান পাবেন? 
সফলতার কারিগর অনুপ্রেরণা। সফলতার কারিগর অনুপ্রেরণা। Reviewed by সম্পাদক on শুক্রবার, জুন ১২, ২০২০ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.