ফাতেমা আক্তার মনিরা,(ঢাকা):
সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে, টিনের চালে টুংটাং বৃষ্টির শব্দটা বেশ ভালোই লাগছে!
অবশ্য ভালো না লাগার পিছনেও তেমন কোনো কারণ নেই৷
বর্ষাকালে গ্রামের বাড়িতে এই এক মজা। বৃষ্টির আসল সৌন্দর্য যেনো সব ঢল আকারে এই মাটির বুকেই নামে।
বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধেও থাকে অন্যরকম অনুভুতি।
সেই সকাল থেকেই ঘরের মাঝে চুপটি মেরে বসে আছি, বৃষ্টি শেষ হয়ে গিয়েছে বেশ অনেকটা সময়ই হলো।
এর-ই মাঝে নানু এসে বলতে শুরু করলো - "সারাক্ষণ ঘরে বসে থাকলেই কি সুস্থ থাকা যায়?খালি পায়ে একটু মাটি পারানো উচিৎ, দেখবি কোনো রোগ-বালাই থাকবে না! "
খানিকটা ভরকে গেলাম আমি!কি বলে এসব?
মাটি পারালে অসুখ বিসুখ হয় না - এই থিওরি কে দিলো?
যাই হোক, অগত্যা কথা বাড়ালাম না!
খালি পায়েই একটু মাটিতে পা দিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলিতে দেখি নতুন কিছু ঢুকানো যায় কিনা।
এই "বিশ-পঁচিশ" মিনিট হাঁটার পর,যেই প্রশান্তিটা পেয়েছি, তা না বললেই নয়।
খেয়াল করে দেখলাম, নিজেকে আগের থেকে একটু বেশি সজীব-সতেজ লাগছে।
প্রকৃতিতে বৃষ্টি এসে যেমন করে,সজিবতায় ভরিয়ে দিয়ে যায়, ঠিক তেমনই একটা অনুভূতি কাজ করছিলো।
তাই আর দেরি না করেই, "খালি পায়ে হাঁটার কি কি উপকারিতা আছে",সেই নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিলাম!
ব্যাস! আমাকে আর পায় কে?
এত এত উপকারিতা দেখে আমার চক্ষু তো চড়কগাছে!
এত দিন হয়তো এই ব্যাপারটা আমার মাথায়-ই আসে নি, তবে এত সব উপকারিতা জানার পর তো আর লোভ সামলানো যায় না - খালি পায়ে না হেঁটে থাকার।
সে যাইহোক,এখন তবে জেনে আসা যাক, এই " সিম্পল" একটা জিনিসের ভিতরে কত কত উপকারিতাঃ
১.খালি পায়ে হাঁটার তাৎক্ষনিক যেই উপকারটি পাওয়া যায়, সেটা হচ্ছে নির্জীব শরীর সতেজতায় ভরে যায়।
একটা "ইন্সট্যান্ট" সজীবতা অনুভব হয়।
২.নিদ্রাহীনতা কেটে যায় - ঘুমহীন রাত আমাদের সবার জন্যই বেশ যন্ত্রণাদায়ক।
বিভিন্ন সময় আমরা এই যন্ত্রণা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য নানা ধরনের ওষুধ সেবন করে থাকি,যা দীর্ঘস্থায়ী হলে,মানবদেহে এর প্রভাব বেশ ভয়ংকর।
"খালি পায়ে মাটিতে হাঁটার" ফলে আমাদের যেই "ইন্সট্যান্ট" এনার্জি চলে আসে, তার কারণ কি?
কারণ এই সময়ে আমাদের মস্তিষ্কে বেশ কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়। স্ট্রেস রিলিজ হয়। মাথা ঠান্ডা থাকে।
যার ফলাফল - রাতে ভালো ঘুম হয়।
বিঃদ্রঃ ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতার অনেক গুলো কারণ রয়েছে ; অনেক স্তর-ও রয়েছে। যারা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তাদের যত তাড়াতাড়ি সমাধান মিলবে,কয়েকবছর যাবৎ ভুক্তভোগীদের জন্যে সমাধান মিলানো টা বেশ সময়-সাপক্ষ ব্যাপার। তবে হ্যাঁ! ধৈর্যর উপরে কোনো ওষুধ নেই।
ধৈর্য হারাবেন না! ধীরে ধীরে ঠিক হবার আশা রাখতে হবে।
৩.আমাদের পায়ের পাতা বা তালুর যেই অংশটি রয়েছে,সেখানে থাকে একাধিক সেন্সারি নার্ভ!
যা মাটিতে হাঁটার ফলে দ্রুত সক্রিয় হয়,এবং সেই সাথে সমস্ত নেগেটিভ ইলেক্ট্রন শোষিত হয়ে দেহের ভেতর বায়ো-ইলেকট্রিক্যাল ভারসাম্য বজায় থাকে।
৪.যেহেতু খালি পায়ে হাঁটার কারণে মস্তিষ্কের নার্ভ গুলো সক্রিয় হয় ;অক্সিজেন সরবরাহ হয়,তাই সংগত কারণেই আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ে,মাথা ঠান্ডা থাকে।
৫.খালি পায়ে হাঁটলে - রক্তের সেল গুলো দ্রুত এক্টিভ হয় যার কারণে রক্ত জমাট বাঁধে না বা রক্ত ঘন হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে না। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
৬.মাটিতে খালি পায়ে হাঁটা কিংবা ব্যায়াম করার সময়ে শরীরে হেপাটিক প্রোটিন ক্যাটাবলিজম নামের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়,যা শরীরের নাইট্রোজেনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
তথ্যসূত্র -
জার্নাল অব অলটারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণার নিবন্ধ অনুযায়ী এবং পোল্যান্ড মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষণা থেকে নেওয়া।
