আ.ন.ম ইমতিয়াজ,(ঢাকা):
করোনার কবলে পরে আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহেই। সকল শ্রেণির ক্লাস, পরীক্ষা ও অন্যান্য সহ-শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করেই ছন্দ পতন হয়েছে দেশের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে। ঘরবন্দী হয়ে আছে হাজারো-লক্ষ শিক্ষার্থী। অনিশ্চিত হয়ে পরেছে তাদের ভবিষ্যৎ। তাছাড়া শোনা যাচ্ছা খুব সহসাই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, দীর্ঘ মেয়াদে বন্ধ থাকতে পারে স্কুল-কলেজ গুলো। ঘরে বসে বসে বিরক্ত হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। নাভিশ্বাস উঠে গেছে, সময় কোন মতেই পার হচ্ছে না, নিরস জীবন আর ভালো লাগছে না। এই দীর্ঘ অলস আর নিষ্ফলা সময়টার কিভাবে সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়, তা নিয়েই এই লেখাটি।
মহামারীর স্টিমরোলার যখন সারা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইউনেস্কোর তথ্যমতে তখন বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১৯১ টি দেশের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, নিম্ন-মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্লাসরুমের পাঠদান বন্ধ আছে প্রায় ১৬০ কোটি শিক্ষার্থীর। যা কিনা বিশ্বময় মোট প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাঠ গ্রহনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় ৯১ শতাংশ। বাংলাদেশেরও প্রায় সব মাধ্যম মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে প্রায় পৌনে চার কোটি; যদিও এখানে ধর্মভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর সঠিক চিত্র আসে না বলে ধারনা করা হয়। শুধু প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন কোটির কাছাকাছি, যাদেরকে আমরা শিশু বলতে পারি;
অন্যদিকে উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে আছে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ শিক্ষার্থী, যাদেরকে আমরা কিশোর বয়সী বলতে পারি। শিশু-কিশোরের পুথিগত সংজ্ঞায় আমি গেলাম না। তবে, শিশু বলি কিংবা কিশোর-কিশোরী, ঠিক এই মুহূর্তে কেউ ভালো নেই, অন্তত মানসিক ভাবে।
অন্যদিকে উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে আছে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ শিক্ষার্থী, যাদেরকে আমরা কিশোর বয়সী বলতে পারি। শিশু-কিশোরের পুথিগত সংজ্ঞায় আমি গেলাম না। তবে, শিশু বলি কিংবা কিশোর-কিশোরী, ঠিক এই মুহূর্তে কেউ ভালো নেই, অন্তত মানসিক ভাবে।
দীর্ঘ দিন হলো তারা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। তাদের প্রিয় সহপাঠী-বন্ধু কারোর সাথেই দেখা হচ্ছে না। কথা শোনা হচ্ছে না তাদের প্রিয় স্যার-ম্যাডামদের। ক্লাস রুমের বেঞ্চ গুলো ফাঁকা পড়ে থেকে থেকে ধুলোয় ঢেকে গেছে। টিফিন বক্স বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে খাওয়ার মজাটা আর হচ্ছেনা। বাসায় বাবা-মার শাসনে পড়া-লেখা করতে করতে হাপিয়ে উঠেছে তারা। সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে কিশোররা। বয়সন্ধির এই সময়টা কেউ তাদের বুঝতে চায়না। না তারা ছোটদের সাথে মিশতে পারে, না পারে বড়দের সাথে মিশতে। না পারছে বাসার বাইরে যেতে। সব কিছুতেই এক ঘেয়েমি চলে এসেছে এদের জীবনে। কি করলে এই একঘেয়েমিটা দূর করা সম্ভব আর সময়টা অপচয় হবেনা, আসুন তা জেনে নেই।
* অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সর্ব প্রথম কথাই হচ্ছে, অলসভাবে বসে থাকা যাবে না। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। নানা ধরনের গঠনমূলক কাজের মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
*গঠনমূলক কাজ বলতে কি বুঝায়? গঠনমূলক কাজ বলতে বুঝায় সৃষ্টিশীল কিছু করা, নতুন কিছু তৈরি, কোন কিছু নষ্ট না করা, ক্ষতি না করা। To do something creative, not to destruct anything or hamper anyone.
*উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়,
- সব সময় কালার পেন্সিল কিংবা প্যাস্টেল ওয়াক্স পেন্সিল ব্যবহার করে ছবি আঁকি, এবার না হয় জল রং কিংবা অ্যাক্রাইলিক কালার ব্যাবহারে নতুন একটা ছবি ড্রইং করে দেখি, কেমন হয়।
- ছোট বেলা থেকেই হয়তো ক্ল্যাসিক্যাল গানে নাচ তুলেছি, এবার মডার্ন একটা গানের তালে নাঁচ তুলে দেখি।
- কক-শিট কেটে আঠা লাগিয়ে, তাতে রং করে নিজের পড়ার ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনটা একটু পরিবর্তন করি।
- কবিতা-ছড়া লিখতেই ভালো লাগে, এবার না হয় একটা সনেট, মহাকাব্য, ছোট গল্প, বা ছোট-খাটো একটা উপন্যাস লিখি না কেনো!
- আবার যারা সব সময় রোমান্টিক লেখা লিখি তারা এবার একটা থ্রিলার লিখে ফেলি।
- যন্ত্রপাতি যারা ভালোবাসি, তারা ইন্টারনেট দেখে দেখে অতিচমৎকার কিছু বানিয়ে ফেলি।
- যারা রান্না ভালোবাসি, মেক্সিকান কিংবা থাই ডিশের সাথে ইন্ডিয়ান ডিশের কম্বিনেশন করে দেখি। আর যারা একেবারেই রান্না পারিনা, তারা খিচুড়ি রান্না করা দিয়েই শুরু হোক নতুন কিছুর হাতেখড়ি।
* অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সর্ব প্রথম কথাই হচ্ছে, অলসভাবে বসে থাকা যাবে না। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। নানা ধরনের গঠনমূলক কাজের মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
*গঠনমূলক কাজ বলতে কি বুঝায়? গঠনমূলক কাজ বলতে বুঝায় সৃষ্টিশীল কিছু করা, নতুন কিছু তৈরি, কোন কিছু নষ্ট না করা, ক্ষতি না করা। To do something creative, not to destruct anything or hamper anyone.
*উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়,
- সব সময় কালার পেন্সিল কিংবা প্যাস্টেল ওয়াক্স পেন্সিল ব্যবহার করে ছবি আঁকি, এবার না হয় জল রং কিংবা অ্যাক্রাইলিক কালার ব্যাবহারে নতুন একটা ছবি ড্রইং করে দেখি, কেমন হয়।
- ছোট বেলা থেকেই হয়তো ক্ল্যাসিক্যাল গানে নাচ তুলেছি, এবার মডার্ন একটা গানের তালে নাঁচ তুলে দেখি।
- কক-শিট কেটে আঠা লাগিয়ে, তাতে রং করে নিজের পড়ার ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনটা একটু পরিবর্তন করি।
- কবিতা-ছড়া লিখতেই ভালো লাগে, এবার না হয় একটা সনেট, মহাকাব্য, ছোট গল্প, বা ছোট-খাটো একটা উপন্যাস লিখি না কেনো!
- আবার যারা সব সময় রোমান্টিক লেখা লিখি তারা এবার একটা থ্রিলার লিখে ফেলি।
- যন্ত্রপাতি যারা ভালোবাসি, তারা ইন্টারনেট দেখে দেখে অতিচমৎকার কিছু বানিয়ে ফেলি।
- যারা রান্না ভালোবাসি, মেক্সিকান কিংবা থাই ডিশের সাথে ইন্ডিয়ান ডিশের কম্বিনেশন করে দেখি। আর যারা একেবারেই রান্না পারিনা, তারা খিচুড়ি রান্না করা দিয়েই শুরু হোক নতুন কিছুর হাতেখড়ি।
নিজে যে কাজটা করতে ভালোবাসি, কিংবা আগ্রহ আছে এমন কিছু নিয়েই নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে আর বই-পত্র-ইন্টারনেট দেখে দেখে অনেক ধরনের গঠনমূলক কাজ করা সম্ভব। শুধু নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, আমার কোন জিনিসটি করতে ভালো লাগে। এমনও হতে পারে, কারো শুধু বই পড়তেই ভালো লাগে। তাহলে আজকে থেকেই শুরু হোক বই পড়া। একাডেমিক পড়া লেখার কারনে যে সব প্রিয় লেখকের বই পড়া সম্ভব হয়ে উঠেনি, এই বন্ধে তাদের লেখা সব বই পড়ে শেষ করে ফেলবো। এটাও এক ধরনের গঠনমূলক কাজ। এমন কোন কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে, যাতে ব্রেইন খরচ হয়, মাথা খাটানো লাগে, বুদ্ধি বের করে করে করা লাগে। তাহলেই না আমাদের এই মস্তিষ্কটা আরও বেশি শক্তিশালী হবে, তাইনা? তবে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে, কাজ করতে গিয়ে নিজের, পরিবারের অন্য কোন সদস্যের, বাসার জিনিসপত্র বা পাড়া-প্রতিবেশীর কারো কোন প্রকার ক্ষতি হয়, এমন কিছু করা যাবে না। আর হ্যাঁ, এই জিনিসটা তো খেয়াল রাখতেই হবে, যা কিছুই করি না কেনো, যে কারনে এই বন্ধ সেই করোনাকে কোন ভাবেই কাছে ঘেষতে দেওয়া যাবে না। যা কিছুই করি না কেনো বাসার বাইরে যাওয়া যাবেনা, আড্ডা দেওয়া যাবেনা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।
অন্যতম মজার একটা ব্যাপার হচ্ছে, অনেকের হয়তো পছন্দের কোন কাজ বা শখ থাকেনা। বিশেষ কোন কিছু করতে আগ্রহ জাগে না। না সে ভালো ছবি আঁকতে পারে, না সে ভালো গান গাইতে পারে, না গল্পের বইয়ে মন বসে, না খেলার মাঠে দৌড়াতে, যারা নিতান্তই অলস, তাদের জন্য এই বন্ধ নিয়ে এসেছে, বিশাল এক সুযোগ। এই দীর্ঘ সময়ে তারা সব কিছুই করে দেখতে পারে, এতে তাদের ভিতরেও কোন না কোন কিছুর প্রতি নিশ্চয়ই ভালোবাসা-ভালোলাগা জন্মাবে।
এছাড়াও ইন্টারনেট ঘাটলে করার মতো অনেক ধরণের কাজের আইডিয়া পাওয়া সম্ভব। ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিশু-কিশোর, বাবা-মা সবারই কাজে আসবে এমন কিছু কাজের একটা লিস্ট এখানে দেওয়া হচ্ছেঃ
১. এসাইনমেন্ট বা থিসিস পেপার করা। বিশেষত যে সব বাবা-মা রা চান, তাদের সন্তানরা ছোট বেলা থেকেই পড়া লেখার প্রতি বিশেষ আগ্রহ নিয়ে লেগে থাকুক, তাদের জন্য এধরনের পরামর্শ। টপিক কি হতে পারে? অসংখ্য ধরনের টপিক আছে। বিশ্বে বিড়ালের কয় প্রকার জাত আছে, মহাদেশ গুলোতে গাছের কি প্রকারভেদ আছে, আকাশের গ্রহ-তারা-নক্ষত্র গুলোকে কিভাবে আলাদা করা যায় ইত্যাদি হাজারো বিষয় নিয়ে কাজ দেওয়া যেতে পারে। এতে শিশু-কিশোররা আগ্রহ সহকারে কাজ করবে, বিরক্ত ও হবে না।
২. ইতিহাসে ঘটে যাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ের উপরে বিস্তারিত পড়াশোনা করা, সেই বিষয়ে সবজান্তা হওয়া। যেমনঃ প্রথম বিমান আবিষ্কারের ঘটনা, প্রাচীন মিশরের সভ্যতা, কিংবা পৃথিবীতে একবার মাত্র হওয়া ঘটনা গুলো জানা ইত্যাদি।
৩. খেলাচ্ছলে বিজ্ঞান শেখা। ইদানিং খুব জনপ্রিয় হওয়া একটা বিষয়। সিদ্ধ ডিম ভিনেগারে ডুবিয়ে রাখলে কি হয়, প্রজ্জ্বলিত মোমবাতি আড়াল থেকে কিভাবে ফু দিয়ে নিভাতে হয় ইত্যাদি। এই সংক্রান্ত অনেক বই কিংবা ইউটিউব টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়।
৪. নিজের নামের অক্ষরে যে সকল শব্দ আছে, সেগুলো দিয়ে পুরো বাসা দুটি/তিনটি করে জিনিস সংগ্রহ করা। এতে বাসা অগোছালো হতে পারে, তারপর নিজেই ঘর গুলো গোছানো, অন্তত নিজের ঘর নিজেই গোছানো, নিজের কাপড়চোপড় নিজেই পরিস্কার করা, রোদ লাগানো, শুকনো কাপড় গুছিয়ে আলমারি, আলনায় রাখা।
৫. বাংলা ভাষায় অনলাইন ভিত্তিক অনেক লার্নিং পোর্টাল আছে। নামকরা শিক্ষকরা সেখানে ক্লাস নেন। সেখান থেকে ক্লাস অনুযায়ী একাডেমিক পড়াশোনার অনেক ভিডিও বা টিউটোরিয়াল পাওয়া যাবে।
৬. আবৃত্তি বা উপস্থাপনার চর্চা করা যেতে পারে। বিশেষত যে সব বাচ্চার, কথা স্পষ্ট না বা তোতলায়, তারা এই সময়টা কাজে লাগাতে পারে।
৭. তায়েকোন্ড, জুডো, কারাতে ইত্যাদি বিভিন্ন আত্মরক্ষার কলা-কৌশল শেখা যেতে পারে। যারা পারে তাদের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে, অনলাইনের সাহায্যে শেখার শুরুটা করা যেতে পারে। তাছাড়া, যারা শারিরীক ভাবে ফিট না, তারা বাবা-মা কিংবা অভিজ্ঞ কারো পরামর্শে ব্যায়াম করতে পারে।
৮. বাসায় বা বাসার ছাদে বাগান, ফুলের টব আছে। সেগুলোর যত্ন নেওয়া কিংবা গাছ-গাছালি, উদ্ভিদ, জলজ জীবন, মাটি, বনাঞ্চল ইত্যাদি সম্পর্কে জানা, জ্ঞান অর্জন করা।
৯. প্রতিদিন নতুন শব্দ শেখা। হোক সেটা বাংলা কিংবা ইংরেজিতে। নতুন শব্দ দিয়ে নতুন নতুন বাক্য রচনা করা। এতে লেখার হাতও খুলবে।
১০. নিজের জন্মস্থান, নিজ জেলা, নিজ গ্রাম বা নিজের পরিবারে ইতিহাস জানা। বিশেষত নিজের পরিবার বা পূর্বপুরুষদের ইতিহাস জানাটা অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং মজার। এতে আত্নবিশ্বাস বাড়ে।
১১. উপরের শ্রেণির শিক্ষার্থীরা চাইলে নতুন কোন ভাষাও শিখতে পারে। যেমনঃ চাইনিজ, ফরাসি, জার্মান বা জাপানিজ ভাষা। বাহিরের বিশ্বে চলতে গেলে, কিংবা ভবিষ্যৎ চাকরির বাজারে ভালো করতে গেলে একাধিক ভাষায় পারদর্শীতা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়।
১২. সাইন্স-ফিকশন, শিশুতোষ, খেলাধুলা কিংবা মানবিকতার গল্প বলে এমন মুভি বা সিরিজ দেখা, মুভি শেষে সেখান থেকে কি শেখা গেলো তা খুজে বের করতে পারা উচিত।
১৩. বুদ্ধিবৃত্তিক গেমস খেলা উচিত।
এর বাহিরেও ইত্যাদি আরও অনেক ধরনের কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রাখা সম্ভব।
এছাড়াও ইন্টারনেট ঘাটলে করার মতো অনেক ধরণের কাজের আইডিয়া পাওয়া সম্ভব। ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিশু-কিশোর, বাবা-মা সবারই কাজে আসবে এমন কিছু কাজের একটা লিস্ট এখানে দেওয়া হচ্ছেঃ
১. এসাইনমেন্ট বা থিসিস পেপার করা। বিশেষত যে সব বাবা-মা রা চান, তাদের সন্তানরা ছোট বেলা থেকেই পড়া লেখার প্রতি বিশেষ আগ্রহ নিয়ে লেগে থাকুক, তাদের জন্য এধরনের পরামর্শ। টপিক কি হতে পারে? অসংখ্য ধরনের টপিক আছে। বিশ্বে বিড়ালের কয় প্রকার জাত আছে, মহাদেশ গুলোতে গাছের কি প্রকারভেদ আছে, আকাশের গ্রহ-তারা-নক্ষত্র গুলোকে কিভাবে আলাদা করা যায় ইত্যাদি হাজারো বিষয় নিয়ে কাজ দেওয়া যেতে পারে। এতে শিশু-কিশোররা আগ্রহ সহকারে কাজ করবে, বিরক্ত ও হবে না।
২. ইতিহাসে ঘটে যাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ের উপরে বিস্তারিত পড়াশোনা করা, সেই বিষয়ে সবজান্তা হওয়া। যেমনঃ প্রথম বিমান আবিষ্কারের ঘটনা, প্রাচীন মিশরের সভ্যতা, কিংবা পৃথিবীতে একবার মাত্র হওয়া ঘটনা গুলো জানা ইত্যাদি।
৩. খেলাচ্ছলে বিজ্ঞান শেখা। ইদানিং খুব জনপ্রিয় হওয়া একটা বিষয়। সিদ্ধ ডিম ভিনেগারে ডুবিয়ে রাখলে কি হয়, প্রজ্জ্বলিত মোমবাতি আড়াল থেকে কিভাবে ফু দিয়ে নিভাতে হয় ইত্যাদি। এই সংক্রান্ত অনেক বই কিংবা ইউটিউব টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়।
৪. নিজের নামের অক্ষরে যে সকল শব্দ আছে, সেগুলো দিয়ে পুরো বাসা দুটি/তিনটি করে জিনিস সংগ্রহ করা। এতে বাসা অগোছালো হতে পারে, তারপর নিজেই ঘর গুলো গোছানো, অন্তত নিজের ঘর নিজেই গোছানো, নিজের কাপড়চোপড় নিজেই পরিস্কার করা, রোদ লাগানো, শুকনো কাপড় গুছিয়ে আলমারি, আলনায় রাখা।
৫. বাংলা ভাষায় অনলাইন ভিত্তিক অনেক লার্নিং পোর্টাল আছে। নামকরা শিক্ষকরা সেখানে ক্লাস নেন। সেখান থেকে ক্লাস অনুযায়ী একাডেমিক পড়াশোনার অনেক ভিডিও বা টিউটোরিয়াল পাওয়া যাবে।
৬. আবৃত্তি বা উপস্থাপনার চর্চা করা যেতে পারে। বিশেষত যে সব বাচ্চার, কথা স্পষ্ট না বা তোতলায়, তারা এই সময়টা কাজে লাগাতে পারে।
৭. তায়েকোন্ড, জুডো, কারাতে ইত্যাদি বিভিন্ন আত্মরক্ষার কলা-কৌশল শেখা যেতে পারে। যারা পারে তাদের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে, অনলাইনের সাহায্যে শেখার শুরুটা করা যেতে পারে। তাছাড়া, যারা শারিরীক ভাবে ফিট না, তারা বাবা-মা কিংবা অভিজ্ঞ কারো পরামর্শে ব্যায়াম করতে পারে।
৮. বাসায় বা বাসার ছাদে বাগান, ফুলের টব আছে। সেগুলোর যত্ন নেওয়া কিংবা গাছ-গাছালি, উদ্ভিদ, জলজ জীবন, মাটি, বনাঞ্চল ইত্যাদি সম্পর্কে জানা, জ্ঞান অর্জন করা।
৯. প্রতিদিন নতুন শব্দ শেখা। হোক সেটা বাংলা কিংবা ইংরেজিতে। নতুন শব্দ দিয়ে নতুন নতুন বাক্য রচনা করা। এতে লেখার হাতও খুলবে।
১০. নিজের জন্মস্থান, নিজ জেলা, নিজ গ্রাম বা নিজের পরিবারে ইতিহাস জানা। বিশেষত নিজের পরিবার বা পূর্বপুরুষদের ইতিহাস জানাটা অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং মজার। এতে আত্নবিশ্বাস বাড়ে।
১১. উপরের শ্রেণির শিক্ষার্থীরা চাইলে নতুন কোন ভাষাও শিখতে পারে। যেমনঃ চাইনিজ, ফরাসি, জার্মান বা জাপানিজ ভাষা। বাহিরের বিশ্বে চলতে গেলে, কিংবা ভবিষ্যৎ চাকরির বাজারে ভালো করতে গেলে একাধিক ভাষায় পারদর্শীতা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়।
১২. সাইন্স-ফিকশন, শিশুতোষ, খেলাধুলা কিংবা মানবিকতার গল্প বলে এমন মুভি বা সিরিজ দেখা, মুভি শেষে সেখান থেকে কি শেখা গেলো তা খুজে বের করতে পারা উচিত।
১৩. বুদ্ধিবৃত্তিক গেমস খেলা উচিত।
এর বাহিরেও ইত্যাদি আরও অনেক ধরনের কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রাখা সম্ভব।
এখন একটু বলা যাক, কি ধরনের কাজ করা যাবে না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল বন্ধের সময় বিশেষত গ্রীষ্ম বা শীতকালীন অবকাশের সময় অলস বসে না থেকে বুদ্ধিদিপ্ত কাজে ব্যাস্ত থাকে, তারা পরবর্তীতে একাডেমিক কার্যক্রমে ভালো করে। অলস বসে থাকলে ব্রেন নিস্তেজ হয়ে যায়, কার্যকারিতা হারায়। কি কি কারনে মস্তিষ্ক, শরীর এবং মনের ক্ষতি হয় আসুন তা জেনে নেই, এই কাজ গুলো আমরা করবো না।
১. এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে ডিজিটাল ডিসপ্লের সামনে বসে থাকা। যেমনঃ টিভি দেখা, মোবাইল-ট্যাবে ব্যাস্ত থাকা ইত্যাদি। এতে চোখের ক্ষতি হয়।
২. প্লে-স্টেশন, গেমিং ডিভাইস কিংবা মোবাইল নিয়ে সারাদিন গেমস খেলা। ব্রেনে অযাচিত চাপ পরে।
৩. কানে হেডফোন বা হেডসেট লাগিয়ে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা শোনা। এতে কানের পর্দায় চাপ পরে, মন-মেজাজ খিটখিটে হয়, শ্রবণ শক্তি কমে যায়।
৪. শিশু বয়সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাস্ত না থাকা।
৫. ফিল্টার ব্যবহার না করে অনলাইনে থাকা বা যে কোন সাইটে প্রবেশ করা। সব সাইটের কন্টেন্ট কম বয়সীদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেষ্ট হতে হবে।
৬. উচ্চ শব্দে গান শোনা বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো। আশেপাশের মানুষের বিরক্তির কারন না হওয়া।
৭. বাসার অন্য সদস্যদের কাজে বিরক্ত করা।
৮. গৃহপালিত প্রানি বা পাখির ক্ষতি করা।
৯. বড়দের সাহায্য না নিয়েই ইলেক্ট্রিসিটি ও আগুন নিয়ে কিছু করতে যাওয়া।
১০. না বুঝে, না জেনে কোন কিছু নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে যাওয়া, বিশেষত সাইয়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্ট।
১১. করোনার এই লকডাউনের সময় অন্য কারো বাসায় যাওয়া।
১২. তোমাকে কোন কিছু কিনে দেবার জন্য বাবা-মাকে খুব চাপ দেওয়া বা বায়না ধরা।
১৩. ঠিক সময় মতো গোসল, খাওয়া-দাওয়া না করা। যথা সময়ে সবার সাথে খাবার না খেয়ে থাকা এবং একটু পরপর এটা সেটা খাবার জন্য পিড়াপীড়ি করা। এতে ইমিউনিটি দুর্বল হয়, শরীরে অসুখ করে।
১৪. পড়া-লেখা করতে না চাওয়া, পড়ার টেবিলে না বসতে না চাওয়া।
১৫. অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা।
১. এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে ডিজিটাল ডিসপ্লের সামনে বসে থাকা। যেমনঃ টিভি দেখা, মোবাইল-ট্যাবে ব্যাস্ত থাকা ইত্যাদি। এতে চোখের ক্ষতি হয়।
২. প্লে-স্টেশন, গেমিং ডিভাইস কিংবা মোবাইল নিয়ে সারাদিন গেমস খেলা। ব্রেনে অযাচিত চাপ পরে।
৩. কানে হেডফোন বা হেডসেট লাগিয়ে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা শোনা। এতে কানের পর্দায় চাপ পরে, মন-মেজাজ খিটখিটে হয়, শ্রবণ শক্তি কমে যায়।
৪. শিশু বয়সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাস্ত না থাকা।
৫. ফিল্টার ব্যবহার না করে অনলাইনে থাকা বা যে কোন সাইটে প্রবেশ করা। সব সাইটের কন্টেন্ট কম বয়সীদের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেষ্ট হতে হবে।
৬. উচ্চ শব্দে গান শোনা বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো। আশেপাশের মানুষের বিরক্তির কারন না হওয়া।
৭. বাসার অন্য সদস্যদের কাজে বিরক্ত করা।
৮. গৃহপালিত প্রানি বা পাখির ক্ষতি করা।
৯. বড়দের সাহায্য না নিয়েই ইলেক্ট্রিসিটি ও আগুন নিয়ে কিছু করতে যাওয়া।
১০. না বুঝে, না জেনে কোন কিছু নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে যাওয়া, বিশেষত সাইয়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্ট।
১১. করোনার এই লকডাউনের সময় অন্য কারো বাসায় যাওয়া।
১২. তোমাকে কোন কিছু কিনে দেবার জন্য বাবা-মাকে খুব চাপ দেওয়া বা বায়না ধরা।
১৩. ঠিক সময় মতো গোসল, খাওয়া-দাওয়া না করা। যথা সময়ে সবার সাথে খাবার না খেয়ে থাকা এবং একটু পরপর এটা সেটা খাবার জন্য পিড়াপীড়ি করা। এতে ইমিউনিটি দুর্বল হয়, শরীরে অসুখ করে।
১৪. পড়া-লেখা করতে না চাওয়া, পড়ার টেবিলে না বসতে না চাওয়া।
১৫. অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা।
আশা করি এই বিষয় গুলো আমাদের বাচ্চাদের কাজে আসবে। তারা তাদের এই দীর্ঘ বন্ধের সময়টা যথাযথ ভাবে ব্যাবহার করবে। আর অভিভাবকদেরও উচিৎ তাদের সাথে সব সময় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়ে, যথাযথ উপায়ে তাদের সমস্যাগুলো বোঝা এবং তাদের উপযোগী কোন পদ্ধতিতে তার সমাধান বের করা। ছোটদের সঠিক দিক নির্দেশনাটা দিতে না পারলে দিন শেষে সবার ক্ষতি। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি, অভিভাবকদের ক্ষতি, পরিবারের ক্ষতি, সমাজের ক্ষতি, সর্বোপরি দেশের ক্ষতি।
লকডাউনে শিশু-কিশোররা কি করবে, কি করবে না?
Reviewed by সম্পাদক
on
মঙ্গলবার, মে ০৫, ২০২০
Rating:
