-->

সোনালী শৈশব বাধাগ্রস্তের অপর নাম শিশুশ্রম।



সাজ্জাদুল ইসলাম রাকিব,(নোয়াখালী):

বিধাতার তৈরি অমূল্য রতন
করে নিষ্পাপ শিশু পাঠিয়েছে 
গড়া এই সুন্দর ভুবন ।
জানেনা সে পাবে কী
স্থির হয়ে থাকে
মাতৃধামে দশমাস ব্যাপী,
রয়েছে শুয়ে দেখবে ছুঁয়ে
স্রষ্টার সৃষ্টি পবন, কিরণ । 

অত:পর-
হয়েছে বঞ্চিত, 
মায়ের বুকের সঞ্চিত,
আদর স্নেহ ভালবাসার ।
পিতার অভাবে পুড়ে মরে
যবে হয়েছে বয়স ছয়-
লোহা পিঠায়, ইটের ভাটায়
রিক্সা চালায়, হয় যে টোকায় ।
বাড়ি বাড়ি টাকায় দায়,
কোমল হাতে গাড়ি ধয় 
না রাখে লোক লজ্জার ভয় ।(আপন দেবনাথের লেখা)

কবি আপন দেবনাথের এই কবিতাটি পড়লে বুঝা যায় শিশু শ্রমের মর্মার্থ।  শিশুরা সুন্দর। শিশুরা নিষ্পাপ। শিশুরা ফুলের মতো। প্রতিটি শিশুই ফুলের মতো ফুটবার এবং সুন্দররূপে বিকশিত হবার দাবি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। কিন্তু সম্পদের অসম বণ্টন ও সামাজিক অসংগতির শিকার হচ্ছে অনেক শিশু। যাদের কচি হাত হয়ে ওঠে শ্রমের হাতিয়ার।

শিশুশ্রমের কারণে বহু শিশুর সোনালী শৈশব বাধাগ্রস্ত হয়। মেশিনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয় তাদের জীবন। অথচ শিশুদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সুপ্ত প্রতিভা। তারা নতুন কুঁড়ির মতো। ফুল হয়ে ফোটার অপেক্ষায় থাকে। এসব ফুলের মতো শিশুরা পৃথিবী জুড়ে বহুদেশে অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত। দারিদ্র্যের কারণে তাদের সংগ্রাম করতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আবার ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য হতে হয় তাদের। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে বৈশ্বিকভাবে, প্রায় ২১৫ মিলিয়ন শিশু কাজ করে। তার মধ্যে আবার অনেকে পূর্ণ সময় কাজ করে। এদের অনেকেই স্কুলে যায় না, সঠিক পুষ্টি পায় না এবং খেলাধূলার পর্যাপ্ত সময় পায় না। 

শিশুশ্রম আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। শিশুরা এমন একটি পরিস্থিতিতে শ্রম দিতে বাধ্য হয়, যেখানে তাদের ও পরিবারের অন্ন-বস্ত্রের চাহিদা মেটানো অনিবার্য হয়ে ওঠে। শিশুশ্রমের পেছনে দারিদ্র্য ছাড়াও আরো কারণ জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে নিরক্ষরতা, পিতা-মাতার অজ্ঞতা, অল্প বয়সেই অর্থ উপার্জন করার লোভ দেখিয়ে সুকৌশলে সংসারের ভার তাদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অনেক অভিভাবকের মধ্যে দেখা যায়।
যে বয়সে শিশুর স্কুলে যাবার কথা, খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা, হাসি আনন্দে বেড়ে ওঠার কথা, সে বয়সে অনেক শিশুকে ধরতে হয় সংসারের হাল। সংসারে অভাবের কারণে করতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার কারণে তারা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করছে সারা জীবনের জন্য আবার গৃহপরিচারিকার কাজে নিয়োজিত শিশুরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। 

যে কর্মপরিবেশে তাদের কাজ সম্পাদনা করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা তাদের অনুকূলে থাকে না। শ্রমে নিয়োজিত একজন শিশু-

১। দৈনিক সর্বোচ্চ পাঁচ কর্মঘন্টার অতিরিক্ত সময় কাজ করে।

২। এমন কাজ করে যা তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এবং সামাজিক অবস্থানের উপর অন্যায় চাপ সৃষ্টি করে।

৩। নিরাপত্তাহীন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে।

৪। বিনামজুরি, অনিয়মিত মজুরি, স্বল্প মজুরিতে কাজ করে।

৫। সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে। 

৬। শিক্ষা জীবনকে ব্যাহত করে।

৭। বাধ্য হয়ে কাজ করে।

৮। ব্যাক্তি মর্যাদা হেয় করে এমন কাজ করতে বাধ্য হয়।

৯। শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয় এবং

১০। বিশ্রাম বা বিনোদনের কোন সুযোগ পায় না।

প্রতিটি মানব শিশু স্রষ্টার এক একটি অমূল্য উপহার। কিন্তু স্রষ্টার এই অমূল্য উপহারকে এই বিশ্বসমাজ কতটুকু মর্যাদা দিচ্ছে? জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, দরিদ্র, ধনী, নির্বিশেষে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের প্রতিটি শিশুর প্রকৃত মানবিক মর্যাদা, নিরাপদ আনন্দময় শৈশব, সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশের সমান সুযোগ প্রাপ্তির নিশ্চয়তাই পারে এই বিশ্বকে সত্যিকার অর্থে মানবিক এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য করতে।
সোনালী শৈশব বাধাগ্রস্তের অপর নাম শিশুশ্রম। সোনালী শৈশব বাধাগ্রস্তের অপর নাম শিশুশ্রম। Reviewed by সম্পাদক on শনিবার, মে ০৯, ২০২০ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.