-->

গল্প: আমি ও কল্পনা।



গল্প: আমি ও কল্পনা।
লেখা: শাহানুর ইসলাম রুদ্র (মাগুরা।

লেজ থেকে ফিরছি।সামনে ৪-৫ টা কুকুর ধস্তধস্তি করছে সেই সাথে বুক কাপানো গর্জন ও করছে।সবকিছু উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে গেলাম। কিছুই হলো না ।কুকুরগুলো খিপ্র থাকলেও তাদের মনোযোগ আমার উপর ছিলনা।তারা ধস্তাধস্তি নিয়ে বেশ ব্যস্ত ।এই যেনো তাদের কাজ।
হঠাৎ মনোয়ার এর সাথে দেখা ।
আমি একটু দূরে থেকেই বললাম, ' আজ কলেজে গেলিনা কেন ?'
সে কাছে আসতে আসতে বললো, 'অন্য কাজ ছিল । (এখন সে কাছে এসে দাঁড়াল) আজ কাল বহুত কাজের চাপ বুঝলি ।কাজে কাজে দিনটা কেটে যায় । '

- ' কাল থেকে তো কলেজ ছুটি '

- ' জানি ,তাইতো কাজ থেকে দূরে যাওয়ার জন্য কাল ই গ্রামের বাড়িতে যাবো ।'

- ' ও আচ্ছা ,আমি আরো ভাবলাম তোকে নিয়ে আমার ফাঁকা বাড়িটাতে থাকবো । আজকে আব্বু আম্মু মামার বাড়িতে যাবে ,জমি নিয়ে বলে কি সমস্যা হয়েছে তাই ।
তোর সাথে থাকতে পারলে সময় ভালো কাটত আর কি ,
এখন দেখি তুই গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিস ।'

- ' কি করার বল আমার তো আর এখানে থাকতে ভালো লাগে না। এখানে থাকলে কাজের চাপে তোর সাথেও থাকতে পারতাম না। তাছাড়া অনেক দিন পর গ্রামের বাড়িতে যাবো।তাই এইটা আর বাদ দিতে পারছিনা ।'

মন একটু খারাপ হলে গেল । ওকে বিদাই দিয়ে চলে আসলাম বাসায় । এসে দেখি আম্মু খুব দ্রুত ব্যাগ ভর্তি করছে, যেন খুব তাড়া ।আব্বু কে দেখলাম গাড়ির খোঁজখবর করছেন ।
আম্মু ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল, ' তুই ঠিকমতো রান্না করে খেয়ে নিবি । যা বাজার করা আছে তাতে তোর চলে যাবে । ঘর পরিষ্কার করে রাখবি । আর প্রাইভেট কামাই মোটেও দিবি না । টিভি এর ডিস বিল আর তোর স্যারের টাকাটা আমি তোর টেবিলে রেখে দিয়েছি । ও হ্যা তোর খাবার টেবিলে ঢাকা আছে খেয়ে নিস । '

আমি শুধু ঘাড় কাত করে কথা গিলছি এবং সম্মতি জানাচ্ছি।

আর তুই কিছু টাকা রাখ, বলে আম্মু তার ব্যাগ থেকে কিছু টাকা আমকে ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেল।

আমি হাত মুখ ধুয়ে ঢেকে রাখা খাবারগুলো খেলাম ।
সেদিন  আমার প্রিয় খাবার  টাকি মাছ ভর্তা ছিল । আমি বেশ স্বাদ করে খেলাম। তবে দেখলাম মাছ ঠিক করে বাটা হয়নি।কারণ খাওয়ার সময় মুখে কাটা কাটা বাঁধছিল ।
মনে হয় খুব তাড়াহুরো করে রেধেছে। তবুও স্বাদ অসাধারণ । খেয়ে টিভি অন করলাম, কিছু হয় কিনা দেখার জন্য । দেখি টিভি তে তেমন কিছুই হচ্ছে না ।বিরক্তি লাগছে। টিভি অফ করে সোফায় এক ঘুম দিলাম । ঘুমটা বেশ আরামের হলো । ঘুম থেকে উঠে দেখি দেওয়াল ঘড়িতে দুপুর ৩ টা বাজে । আমি গোসল সেরে নিলাম।
আমি দুপুরে তেমন কিছু খাইনা । খেলেও বেশ হালকা কিছু খাই । ফ্রিজ খুলে দেখি আম্মু বেশ কিছু খাবারের আইটেম সেখানে রেখে দিয়েছে । আমি ফ্রিজ থেকে ভুনা করা ছোলা  বের করে গরম করলাম । মুড়ি দিয়ে মাখিয়ে খেলাম ।

দরজায় কলিং বেল বাজছে নিশ্চয়ই স্যার ।আমার স্যারের নাম মজীদ আহমেদ।উনার বয়স হয়ে গেছে।তবুও তিনি এই বয়সে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ান।তিনি বেশ ঠান্ডা মাথার মানুষ।উনি আর কিছু দিন বাদেই কলেজের শিক্ষক হিসেবে অবসর প্রাপ্ত হবেন।স্যার ঠান্ডা মাথার মানুষ হলেও স্যার তার ছেলের ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকেন। স্যার বেশির ভাগ সময়ই গল্প করার ক্ষেত্রে তার ছেলের কথা বলেন।তিনি চান তার ছেলেও তার মত কলেজের শিক্ষকতা করবে।উনার ছেলে খুব মেধাবী।এখন তার ছেলে চাকরির জন্য চেষ্টা করছে। মিশারের (স্যারের ছেলের নাম মিশার) মত মেধাবী ছেলের চাকরি দ্রুত হাওয়ার কথা।আজও স্যার নিশ্চয়ই ওর কথা বলবেন। আমি উঠে গিয়ে দেখি সত্যি স্যার এসেছেন । আমি স্যার কে সালাম দিলাম । স্যার সালামের জবাব দিলেন না ।আমার দিকে নির্বাক ভঙ্গীতে চেয়ে আছেন , যেন এ পৃথবীর সবথেকে চিন্তায় মগ্ন তিনিই।

আমি একটু বল নিয়ে স্যারকে জিজ্ঞাসা করলাম ,
- ' স্যার ,আপনি আমার সালামের জবাব দিলেন না কেন? '
স্যার আমাকে অবাক করে দিয়ে সালামের জবাব দিলেন।আমি আরো মনে করলাম স্যার আমকে ধমক দিবেন। তা হলো না।স্যার কি নিজেকে স্বাভাবিক দেখাতে চাচ্ছেন। আমার মনে মনে ধারণা হলো তিনি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত। তিনি পড়ার টেবিলে বসে পড়লেন ।আমিও বসলাম । আমি খেয়াল করলাম স্যার শার্টের বোতাম ভুল লাগিয়েছেন ।তিনি বসতেই বিষয়টি চোখে পড়ল ।স্যারের শার্টের পকেটে সবসময় একটা নীল কালির পেন থাকে । আজ সেই পেনটাও স্যার নিয়ে আসেন নি। এখানে ৩ টা জিনিস লক্ষণীয় ,

১.  স্যারের মুখে চিন্তার একটা ছাপ আছে ,যেকারনে তিনি প্রথমেই সালামের জবাব দেননি এবং তার মুখে খানিকটা নির্বাক ভাব আছে ।

২.স্যারের শার্টের বোতাম এলোমেলো লাগানো ।তার মানে স্যার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করে বেরিয়েছেন । তিনি খুব ঠাণ্ডা মাথায় কাজ  করেন ।তার মানে তিনি কোনো বিশেষ কারণে চিন্তিত।

৩. স্যার তার প্রতিদিন নিয়ে আসা কলমটি সঙ্গে করে নিয়ে আসেন নি।এতে দ্বিতীয় বিষয়টি আরো জোড়ালো হয় ।

এই তিনটি বিষয় নিয়ে ভাবলে দাঁড়ায় তিনি আজ বাড়ি থেকে ঝগড়া করে বের হয়েছেন । তাহলে সবগুলো পয়েন্ট ই ভালোভাবে মিলে যায়।আমি প্রশ্ন না করে আর থাকতে পারলাম না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, 'স্যার আপনি কি কোনো কারণে চিন্তিত?'

স্যার শান্ত গলায় বললেন , 'কই আমি তো চিন্তিত নই ।'
' স্যার সত্য করে বলবেন আপনি কিছু একটা নিয়ে চিন্তায় আছেন । ' বলেই আমি বিষয় তিনটি ব্যাখ্যা করলাম ।

সেই সাথে জিজ্ঞাসা ও করলাম, ' স্যার বলুনতো আপনার কি পরিবারে কোনোকিছু নিয়ে ঝগড়া জাতীয় কিছু হয়েছে?'
স্যার আমার দিকে হতভম্ব হলে কিছুক্ষন তাকিয়ে বললেন,'তোমার আম্মু কে ডাক দাও ।'

আমি বললাম ,' স্যার আম্মু আব্বু বাসায় নেই ।তারা মামা বাড়ি জরুরী একটা কাজে গিয়েছে।'

' তুমি যে অনুমান করেছ তা নিতান্তই ভুল।আজ আমি খুব খুশি।আমার ছেলের কলেজে  চাকরি হয়েছে।'

' আলহামদুলিল্লাহ।স্যার শুনে খুব খুশি হলাম। স্যার মিষ্টি কই?'

' আমি খুশিতে এতই আত্মহারা হয়ে গেছি যে তোমাকে  আর কি বলবো। আচ্ছা আমি কাল, ই  মিষ্টি এনে তোমাকে খাওয়াবো।'

আজ স্যার বিশেষ কিছু পড়ালেননা গল্প করেই স্যার খুশি খুশি মনে চলে গেলন ।স্যার তার শার্ট ঠিক করার কথা আবারো ভুলে গেলেন । বিকেলের সময় আমি বাইরে কাটাই কিন্তু আজ বাইরে যেতে মন চাইছে না।আজ এক কাপ চা বানালাম ।চা নিয়ে ছাদে গেলাম ।আজকের আকাশটা বেশ নীল এবং পরিষ্কার । সূর্যটা সাদা মেঘ ঢাকা পড়ে আছে ।তাই তেমন রোদও নেই, সেই সাথে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। পরিবেশ খুব শান্ত এবং সুন্দর । চায়ে চুমুক দিতেই মনে পড়লো চায়ে চিনি দেইনি।তাতে কোনো সমস্যা নেই আমি চিনি ছাড়া চা  খেতে পারি।বিকালের সময়টা খুব সুন্দর কাটলো।

সিড়ি দিয়ে নেমে আসার সময় মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো ।আমি সাবধানে নিচে নামতে লাগলাম ,অবশেষে ঘরে  ঢুকলাম। চোখে কেমন জানি ঘুম জড়িয়ে আসছে। আমি দরজা জানলা বন্ধ করে ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।গা কেমন ঝিম ঝিম করছে। শুয়ে পড়তেই হাত পা মুখ সব মূর্তির মতো হয়ে যাচ্ছে।কোনো ভাবেই নাড়াতে পারছি না। আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ প্রায় এমন অবস্থায় গায়ে কাটা দিচ্ছে । শীত শীত ভাবটা শরীরে একটা আবেশ সৃষ্টি করেছে।বেশ ভালই লাগছে।

সপ্ন  দেখছি,

চারিদিক অন্ধকার  ।কোনো আলো নেই । কোনো শব্দ নেই।আমি নিজেও শব্দ করতে পারছি না।হঠাৎ আলোর ঝিলিক দেখলাম।তীব্র আলোর ঝিলিক।আবার সব আগের মতো অন্ধকার।হালকা রকমের বাতাস অনুভব করলাম।বাতাসের সাথে একটি মেয়ের মৃদু হাসি ভেসে আসছে।হাসির শব্দ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো।আমি চিৎকার করছি কারণ এই অন্ধকার এই হাসি আমার সহ্য হচ্ছে না।আমি চিৎকার করার চেষ্টা করছি কিন্তু আমার গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না ।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো।দেওয়াল ঘড়িতে দেখলাম রাত ৮ টা  বাজে। প্রচুর ক্ষিদে লাগছে । খুদায় সপ্নের কথা ভুলে গেলাম ।যদিও ঘুম থেকে উঠেই করোর ক্ষুদা লাগেনা।যাই হোক খাবার বানাতে হবে। ফ্রিজে দেখতে হবে কি আছে ।ফ্রিজ খুলে দেখি আম্মু মুরগির মাংস ও রেধে রেখেছে। ভালোই হলো এই ক্ষিদে অবস্থায় মুরগির মাংস, আহ্ ভাবতেই ভালই লাগছে।সাথে একটু কাঁচা পেয়াজ হোলে  মন্দ হয় না।আমি মাংস গরম করে, অর্ধেক কাঁচা পিয়াজ  কেটে নিয়ে ভাতের সাথে খেতে লাগলাম।রান্নাটা চমৎকার হয়েছে।খেতে ভালো লাগছে । আমি পেট ভরে খেলাম।

খাওয়া শেষ করে রাত ৯ টার দিকে পড়তে বসলাম।আমি যুক্তিবিদ্যা বইটি পড়ছি।যদিও এটা আর্টস এর বিষয় তবুও যুক্তিবিদ্যা বইটি পড়তে আমার ভালো লাগছে।কিছু সময় পড়ার পর আমি টিভি দেখতে সোফায় বসলাম।অমনি ফোন বেজে উঠলো।দেখি আম্মু ফোন করেছে,

- ' খাবার খেয়েছিস? ফ্রিজে দেখ খাবার আছে।'

- ' হা ,আম্মু খেয়েছি।তোমরা ওখানে কখন পৌঁছালে?'

- ' ৩ ঘন্টা সময় লেগেছে।তোর বাবা তো ড্রাইভার কে বেশ রাগারাগি করেছে।'

- ' রাগারাগি করার কারণ কি?'

- ' পথের মাঝখানে গাড়ির  তেল ফুরিয়ে গেল।তোর বাবা তো রেগে আগুন ।এই নিয়ে কি কান্ড বাবা ! '

- ' ও!!   বাবা এখন কি করেছে?'

- ' তোর  বাবা  কাজে গিয়েছে।জমি নিয়ে যে কি সমস্যা ! '

- ' তুমি চিন্তা করো না বাবা কিছু না কিছু একটা করবেন।'

- ' হা ,দেখি কি হয়।'

- ' তুই স্যার কে টাকা দিয়েছিলি।'

- ' এই যা ভুলে গেছি! কাল দিয়ে দিবো।'

- ' আমার ধারণা ছিল তুই ভুলে যাবি ।

- ' কাল দিয়ে দেবো । '

- ' ডিস বিল নিতে আসলে দিয়ে দিস।'

- ' দিয়ে দেবো সমস্যা নাই।'

- ' সমস্যা না থাকলেই ভালো।'

- ' আচ্ছা ঠিক করে পড়াশোনা করবি । এখন রাখি, একটু ব্যাস্ত আছি ।'

- ' আচ্ছা ঠিক আছে। ভালো থেকো । রাখি।'

আম্মুর সাথে কথা বলার পর আমি ছাদে  গেলাম।
দেখি খুব বাতাস হচ্ছে। ঠান্ডা বাতাস খুব ভালো লাগছিল।কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না । আকাশে মেঘ জমেছে।আজ বিকেলেই আকাশ ছিল পরিষ্কার এখন মেঘ জমেছে।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ।তাই নিচে নেমে আসলাম।

রাত ১২ টা বাজে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টি থামার কোন নাম নেই। বিছানায় শুয়ে আছি।কারেন্ট নেই।পাশে মোমবাতি ধরানো। মোমবাতির অল্প আলোতে উপন্যাস বই পড়ছি।বেশ ভালো একটা বই।কিছু সময় পর মোমবাতি নিভে গেল। জানলা লাগানো।বাতাস আসছেনা।তাহলে মোমবাতি এইভাবে হঠাৎ নিভে গেলো কেন?আমি ম্যাচ খুঁজতে লাগলাম।ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে ম্যাচ খুঁজে পেলাম। বেড সাইড টেবিলে রাখছিল মোমবাতি আর ম্যাচ।কিন্তু আমি ম্যাচ কে খুঁজে পেলাম টেবিলের নিচে।অন্ধকারে হাতড়াতে গিয়ে মনে হয় টেবিল থেকে পড়ে গেছে ।তাছাড়া আর কি হবে।আমি ম্যাচ নিয়ে আবার মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলাম। আবারো মোমবাতি নিভে গেল। এর কোনো ব্যাখ্যা দাড় করানো যাচ্ছে না।আমি বিরক্ত হয়ে  সাইড টেবিল এ বই রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।কিছুতেই ঘুম আসছেনা ।একে কারেন্ট নেই,তার উপর আবার মোমবাতি ধরাতে বিরক্তি লাগছে (বার বার নিভে যাচ্ছে)।আমি ওই ঘুটঘুটে অন্ধকারে শুয়ে আছি। আচমকা হাসির শব্দ শুনলাম সেই সপ্নের মত হাসি।কিন্তু হাসির শব্দ খিলখিল এর দিকে যাচ্ছে।আগের মতো জোরে মনে হচ্ছে না।হাসির শব্দ আসছে রান্না ঘর থেকে।আমি অন্ধকারে কান্নার আওয়াজ শুনতে শুনতে রান্না ঘরের দিকে আগাতে  লাগলাম।রান্না ঘরে যাওয়ার পথে টি টেবিলের সাথে  যেন ধাক্কা খেলাম।আমার ধাক্কা খাওয়ায় শব্দে হঠাৎ হাসি থেমে গেলো । এখন কে যেনো কাদছে।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার মতো।বেশ সুন্দর গলায় কাদছে, এমন জন্য কোথাও শুনিনি।আমার একটু ভয় ভয় করতে লাগলো।কিন্তু আমার আগ্রহ ভয়কে ছাপিয়ে গেলো।আমি রান্না ঘরে ঢুকলাম।কাছে যাওয়াতে শব্দ আরো কানে বাজছে।হঠাৎ আমার মাথায় আসলো আমি ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা অন না করেই অন্ধকারে আগাচ্ছি ।যার কোনো মানেই হয় না।
আমি ফ্ল্যাশ লাইট অন করলাম। দেখলাম রান্না ঘরের কোনার দিক থেকে কান্নার শব্দ আসছে।আমি সেইদিকে এগিয়ে যেয়ে হতবাক হয়ে যায়।দেখি সাদা ধুয়ার মতো পোশাক পড়া একটি তরুণী বসে আছে।তার পরনের পোশাক খুব অদ্ভুত যেন সাদা ধোয়াকে কঠিন রূপ দেওয়া হয়েছে।তার সারা শরীর সেই ধোয়া কাপড়ে আচ্ছাদিত।সে মাথা উচু করে কান্না থামিয়ে আমার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকালো।খুবই স্বাভাবিক হাসি।আমি ওখানেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম।সকালের আলো আমার বিছানায় এসে পরেছে । জানালাগুলো সব খোলা।আলোতে ঘর ভরে গেছে। আমার বিষ্ময়ের সীমা থাকলো না। সাইড টেবিলে মোমবাতি ও ম্যাচ নেই ।আমার ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করা।আর টি টেবিলটা ও হালকা সরে আছে। দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেছে বোধ হয়।তার মানে কালকের ঘটনাটা সত্য।এটা কিভাবে সম্ভব এই প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আজকেই এর একটা কিছু করার দরকার।আমি সকালে নিজে নাস্তা বানিয়ে খেয়ে নিলাম।ঘড়িতে দেখি সকাল ১১ টা বাজে।আমি পড়তে বসলাম ।পড়া করে ফোনে আম্মুর সাথে কিছুক্ষন কথা বললাম।দরজায় কে জানি টুকা টুকি করছে।বেল থাকতেও দরজা  টোকা টুকি করার কি দরকার বুঝে উঠতে পারলাম না।আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখি একজন মধ্যবয়স্কো লোক ।গায়ে লাল হাফ হাতা গেঞ্জি পড়া,মাথায় লাল ক্যাপ, ঘাড়ে তার ব্যাগ ঝুলানো, হাতে কাগজ কলম।এই সব দেখে মনে হলো সে সম্ববত ডিস বিল নিতে আসছে। তবুও তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,' আপনি কি চান?'
- ' স্যার আমি ডিস বিল নিতে এসছি।'
- ' ও আচ্ছা আপনি দাড়ান আমি আপনার টাকাটা নিয়ে আসছি।'
আমি টাকা নিয়ে তাকে দিয়ে দিলাম। কাগজে সই ও  করতে হলো।
আমি সই করে দরজা বন্ধ করে টিভি অন করলাম ।টিভিতে খানিকক্ষণ হিন্দি কোনো এক সিনেমা দেখলাম,সেই সিনেমার এড আর গানের ফাঁকে ফাঁকে খবর দেখে নিলাম।এরপর আমি উঠে গিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম গোসল করতে।পানি বেশ ঠান্ডা।সূর্য মেঘে ঢাকা পড়ে আছে মনে হয়। এছাড়াও কাল রাত বৃষ্টি হলো।তাই বলা যায় পরিবেশ ঠাণ্ডা আছে। সুতরাং পানির ঠান্ডা হওয়া 
স্বাভাবিক। আমি শাওয়ার  ছেড়ে দিয়ে তার নিচে মাথা নিচু করে বসে থাকলাম ঠিক সেই মেয়েটির মতো।আমি অজান্তেই তা করে ফেললাম। হয়ত আমার অবচেতন মনে সেই জিনিসটা ঘুরপাক খাচ্ছে।তাই আমি অজান্তেই অমন অবস্থানে চলে গেছি।মানুষ বড়ই অদ্ভুত বলে আমি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু আমি উঠতে পারছি না।আমার হাত পা শিথিল হয়ে গেছে। মাথাটাও উঁচু করতে পারছি না।মুখ দিয়ে কোনরকম আওয়াজ বের করতে পারছি না।খুব অস্থির লাগছে। হয়ত কখন আমার মন ও কথা বলা বন্ধ করে দিবে। আমার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে।আমি চোখ খুলতেই দেখি আমি খাটে শুয়ে আছি।সব দরজা জানলা বন্ধ।শুধু আমার ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বলছে।আমার পক্ষে  কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা বিচার করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।আমার মাথা একটুও কাজ করছেনা।আমি খাট থেকে উঠতে চেষ্টা করে দেখি আমি খাট থেকে কোনো মতেই উঠতে পারছিনা।আমি পাশে ঘাড় ঘুরাতেই যা দেখি আমি খুবই চমকে যাই।চমকে যাওয়ার কারণ হলো গতকাল যে মেয়েকে আমি দেখেছি তার পড়নের কাপড় ছিল তা সাদা ধোঁয়া  কঠিন রূপ যা তার দেহকে আচ্ছাদিত করে ছিল কিন্তু আজকে  মেয়েটি আমার মায়ের মত করে সেজে এসেছে।এই সাজ টি মায়ের চলে যাওয়ার সময়ের ছিল। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে আমার বয়সী কিংবা আমার থেকে একটু ছোট হবে ।কিন্তু সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।তবে আমি তেমন ভয় পাচ্ছি না । বরং আমার মনে ক্ষীণ সন্দেহ সৃষ্টি হলো যে এটা যদি বাস্তবে থাকে তবে  এতক্ষনে সে আমাকে সহজেই মেরে ফেলতে পারত কিন্তু সে আমার সাথে তা করছে না।তবে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে।কিন্তু কেন সে এমনটি করেছে।এটাকি আমার কল্পনা।না কল্পনা হবে না ।এরকম ভাবতে ভাবতে আমি অনেক খানিক অঙ্ক মিলিয়ে ফেললাম। তার আওয়াজ শুনে হঠাৎ কেপে উঠি।কিন্তু আমি সহজে ভয় পাইনা।আমি ভাবতে পারিনি সে এভাবে কথা বলবে।
কথোপথন ছিল এরকম
- ' এখন কেমন লাগছে? '
আমি কি বলব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।একটু কাপা কাপা স্বরে বললাম, ' তুমি কে?'
- ' আমি বাস্তব ও অবাস্তব। তার আগে তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও, ' তোমার কেমন লাগছে?'
- ' অদ্ভুত লাগছে।'
- 'ভয় ভয়  লাগছে না ?'
- ' তুমি অনর্থক প্রশ্ন করছ ।'
- ' কেন বলতো।'
- ' তুমি যে আমার মন পড়তে পারো এটা আমি বুঝেছি।তবে অত ভালো করে ও পারনা। হালকা হালকা পারো ।মনের সূক্ষ বিষয় তুমি জানো না বা জানতে পারনা।'
- ' ঠিক ,কিভাবে বুঝলে?'
- ' এটাও তুমি হয়ত জানতে পারতে।কিন্তু তুমি তা করছ না।
এখন আমি ব্যাখ্যা করি কেন আমি তা বললাম । প্রথম কথা হচ্ছে আমি এখন সোফায় শুয়ে আছি।তার মানে আমি গোসলে যায়নি।ওটা তোমার তৈরি জগৎ ছিল। এখন আমি সেটা বুঝলাম তখনই যখন আমি ঠান্ডা পানি ছেড়ে দিয়ে গোসল করছি।আমি মরে গেলেও ঠান্ডা পানি দিয়ে কখনই গোসল করবো না।আর যেহুতু আমি গোসল করতে যাইনি সেহুতু আমি বেড রুমে ও আসিনি। সুতরাং আমি আছি সোফায়।আমি বেডরুমে নেই  এটা এত জোরদারের সাথে বলছি এর পিছনেও যথেষ্ট কারণ আছে আমি কাল রাত তোমার কাছে আসার সময় টি টেবিলের সাথে ধাক্কা খাই।এতে টি টেবিল সামান্য সরে যায়।কিন্তু আমি ফ্ল্যাশের আলোই বেশ ভালোই দেখছি টি  টেবিলটা আগের মতই আছে সরে নাই।  গতকাল আমি যখন ছাদে যায় তখন ছাদ থেকে নামার সময় আমার মাথায় যন্ত্রণা
হচ্ছিল। আমি বাইরে থেকে ভিতরে আসার পর এমনটি হয়েছে।তার মানে হয়ত বাইরের কোনো কিছুর  সাথে তোমার  যোগাযোগ নেই। এটা বলছি কারণ  যখন আমি ঘর থেকে বের হয়ে ছাদে গিয়েছিলাম তখন আমার ঘরের অবস্থা যা ছিল এখনও তাই আছে।তার মানে তুমি শুধু ঐ সময়টুকুই আমার মাথায় গিয়েছিলে।এবং আমি সেই সময় ঘরে ঢুকেই জানলা দরজা বন্ধ করে রাখি, এখানেও সেই রকমই একটা পরিবেশ ।আমার ঘরের ফান ঘুরছিল এখনও ঘুরছে কিন্তু আমি কোনো বাতাস পাচ্ছি না।   যার ফলে আমি বুঝতে পারলাম এটা তুমি আমার ঐ  সময় এর স্মৃতি থেকে নিয়ে আমার মনের সাথে খেলছ।আরো একটা কথা না বললেই নয় সেটা হচ্ছে তুমি যেমন পোশাক পরে ও সেজে এসে আমার মস্তিষ্কে ধরা দিচ্ছ,এখানে মজার বিষয় হচ্ছে তুমি আমার আম্মুর সেই পোশাক সেই সাজ ই সেজেছো যখন আমি আমার আম্মু কে শেষ বার দেখেছি।এটা আমার শেষ যুক্তির ভিত্তি মজবুত করে।  এখন তুমি বাস্তবে নেই আমার মস্তিষ্কে আছো। এটার কোনো মানে হয়না।তুমি আমাকে আমার বাস্তব জগৎ ফিরিয়ে দাও।সপ্নের মধ্যে থাকতে চাচ্ছি না।বাস্তব জগৎ থেকে তোমার সাথে কথা বলব।'
সে চুপচাপ আমার কথা শুনে খুব সুন্দর একটা হাসি দিল।আর বললো, ' তোমার বুদ্ধি অনেক। বুদ্ধিমান মানুষ আমার পছন্দ।'
- ' অত কিছু শুনতে চাচ্ছি না।আমাকে তুমি আমার বাস্তব জগৎ ফিরিয়ে দাও।'
চোখ খুলতেই সোফা থেকে আমি লাফ মেরে উঠে পড়লাম।দেখলাম হিন্দি ছবিটা প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।তাই টিভি অফ করে দিল ।

এখন বাজে দুপুর ১:০০ টা । আমি ভাবলাম আজ গোসল করব না। তার সাথে কিছু কথা বলা দরকার।আমি দুপুরের খাবার রান্না করে খেয়ে নিলাম ।আম্মু আর বন্ধুদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললাম।আম্মু বলে পরশু দিন আসবে। আম্মুকে এইসব নিয়ে কিছুই বলা ঠিক হবে না। এতে আম্মু বেশ চিন্তিত হয়ে পড়বেন। এমনিতেই সে বেশ চিন্তিত।তার উপর যদি আমি এই তথ্য দি ...না না আম্মু এত মানুষিক চাপ সহ্য করতে পারবে বলে মনে হয় না।আম্মু কে বলা ক্যান্সেল।বন্ধুদের বললে ওরা হাসি ঠাট্টা করবে। তাই এটাও বাদ।যা করার আমাকে নিজেরই করতে হবে।
(এই কথা গুলির কোনো গুরুত্ব না থাকলেও মানুষ এমন সহজ বিষয় নিয়ে ভাবে তাই কথা গুলি লেখা)

আজকে বেশির ভাগ সময়ই ছাদে কাটালাম ।স্যার কি আজ আসবে। নাও আসতে পারেন।সন্ধ্যার দিকে বাসায় ঢুকলাম।বাসায় ঢুকেই দেখি সবকিছু পরিষ্কার পরচ্ছন্ন।আমি অবাক হলাম।আমি তাকে ঢাকার চেষ্টা চালালাম কিন্তু কাজ হলো না। রাতে ঘুমানোর সময় একটা বই পড়ছিলাম।বইটা সে বোধ হয় আমার সাইড টেবিলে রেখে দিয়েছে। আজকে সাইড টেবিলে মোমবাতি আর ম্যাচ দুটোই পেলাম।তবুও ঘরের লাইট জ্বালিয়ে রাখলাম। বোধ হয় মোমবাতি আর ম্যাচ গায়েব করে সে আমকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল।তার ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই। তবুও কেন সে ভয় দেখাবে। আমি বই পড়া ভুলে গেলাম । বই পাশে রেখে সেই বিষয় নিয়ে নানান কথা চিন্তা করছি।এমন সময় দেখি সে আমার পাশে দাঁড়িয়ে।তাকে আলোতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।তাকালে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।তার শরীর থেকে সুন্দর একটা গন্ধ আসছে। এই গন্ধটা  তার কাছ থেকে আগে কখনো পাইনি। গন্ধে একটা নেশা নেশা ভাব আছে। তার পড়নে পূর্বের সেই সাদা ধোঁয়া এর মত কিছু।জানলা খোলা । জানলা দিয়ে হালকা বাতাস আসছে। এই হালকা বাতাসে তার তার পড়নের কাপড় হালকা দুলছে।চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া।খুব অদ্ভুত লাগছে।
আমি তাকে নির্ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, - ' তুমি কে?'

- ' আমি আগেও বলেছি মনে করে দেখো ।'
- ' মনে পড়ছে না ,তুমি আবার বল ।'
- ' তোমরা খুবই ভুলো মনের ।' বলে সে হাসতে লাগলো।
অসম্ভব সুন্দর তার হাসি।আমি বললাম, ' মানুষ তো একই বিষয় নিয়ে পড়ে থাকে না। কতো কিছু আছে ভাবার।তুমি বলতে চাইছোনা তাই বল ।'
- ' তুমি কিন্তু আমাকে নিয়েই ভাবছিলে। কী আমি ঠিক বলিনি?'
- ' তুমি  এমন করেছ যে আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে ।'
- ' আমার কাজটা করে অনেক মজা পেয়েছি । বুদ্ধিমান মানুষের সাথে আমার মজা করতে ভালো লাগে। তারা রহস্যগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে আমি সেই চিন্তার অংশ হয়ে খুব মজা পাই। বোকাদের সাথে এমন মজা  করতে আমার ভালো লাগে না।ওরা বেশ ভয় পায়। ।  অবশ্য ওদের ভয় দেখতেও আমার ভালো লাগে।তবে কারো চিন্তাই থাকার চেয়ে বেশি মজার না।'

- ' তুমি তোমার এত ভালো লাগা ,না ভালো লাগা নিয়ে  বলতে পারছ অথচ তুমি কে সেটাই বলতে চাইছো না।তাহলে কে অদ্ভুত তুমিই বল।'

- ' তুমি আমার কথায় খেয়াল করবে আমি আমার দুইটি পরিচয় দিয়েছি , এক আমি ভুত যা অবাস্তব আরেকটা হচ্ছে আমি রহস্য যা প্রকিতেতে বাস্তব।এটা সম্পূর্ণ মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গির উপর  নির্ভর করে।'

- ' বাহ্ ! চমৎকার। আমি এমন বুদ্ধিমতী ভুত কখনো দেখিনি ও শুনিনি।'

- ' তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে।'

- ' আমার ও তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। একটা কথা বলবে, তুমি কি মানুষ ছিলে?'

- ' কেন এমন প্রশ্ন বলতো?'

- ' মানুষের আগ্রহ বলতে পারো । আমি যেহুতু মানুষ আমার ও আগ্রহ আছে। তুমি যেমন বুদ্ধিমান মানুষের চিন্তায় ঢুকতে ভালোবাস তেমন এটাকে তুমি অমনটা ধরে নিতে পারো ।'

- ' না,আমি মানুষ নই কখনো ছিলাম না । তুমি যেমন প্রকৃতির অংশ আমিও ঠিক তেমনি।তোমাদের যেমন এই জগৎ আমাদেরও তেমন জগৎ আছে।'

- '  তার মানে তুমি একা নও। তোমরা  অনকে । আমি কি ঠিক?'

- ' হা,অনেক খানি ঠিক অনুমান করেছ।'

- ' তাহলে তুমি খুলা খুলি বলে দিচ্ছ না কেন?'

- ' তুমি আবারো একই পথে হাঁটছো। আমি যদি বলেই ফেলি তবে তুমি আমাকে নিয়ে নতুন করে চিন্তা করবেনা ।'

- ' ও আচ্ছা । তাহলে আমি তোমাকে নিয়ে চিন্তা করে দেখবো ,  এখন কি তুমি খুশি?'

সে আমার কথা শুনে খিলখিল করে হাসতে থাকলো।

- ' হা, আমি খুশি।'

- ' তুমি  স্বাভাবিক মানুষের মতোই কিন্তু তোমার কিছু অলৌকিক ক্ষমতা আছে । এবং সেই সাথে তোমার জগৎ ভিন্ন।'

- ' অলৌকিক , অলৌকিক'  কথাটা বলে সে হাসতে লাগলো।

- ' তুমি এভাবে হাসছো কেন?'

- ' হাসবো না তো কি করবো। আচ্ছা মনে করো তুমি একটা পীপড়া আমি একজন মানুষ, সেখানে তুমি পীপড়া যদি মানুষকে বলো যে তোমাদের অলৌকিক ক্ষমতা আছে আমাদের তা নেই। হা হা হা ' আসলে প্রকৃতিই নির্ধারণ করে দেয় সবকিছু। অলৌকিক বলে কিছু নেই, বুঝলে।'

- ' আমি আর তর্কে গেলাম না।'

- ' তুমি কি কালকেও আসবে ?'

- ' হা, তুমি বললে আসব।'

- ' তোমার একটা নাম দেও , যে নাম ধরে ডাক দিলে তুমি চলে আসবে।'

- ' তুমি আমাকে ভুত বন্ধু বলে ডেকো।' হা হা করে সে আবার হাসতে লাগলো। বললো আমি চলে যাচ্ছি তুমি ঘুমাও।'

সে চলে যাওয়ার সময় গন্ধ তার সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিল।মনে হচ্ছিল আমি গন্ধের পিছু নিয়ে তার সঙ্গে চলে যায়।সে চারিদিকে ধোঁয়া ছড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।আমার আর সেই রাতে ঘুম হয়নি। মাথায় ওর চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।আমি ভাবলাম তাকে কিছু প্রশ্ন করব। প্রশ্নগুলো  সাজাতে হবে।সে বেশ চালাক আছে।তাই উপায় খাটিয়ে প্রশ্ন করতে হবে।সে সহজে উত্তর দিবে না। সে ক্ষেত্রে প্রশ্নগুলো সাজিয়ে ঠিক কিছুটা এমন দাঁড়ায়,

১.  সে কি অমর?
২. সে কোন জগৎ থেকে এসেছে?
৩. তাদের মতো এমন কারা কারা আছে?
৪. সে আমার কাছে কেন এসেছে?
৫. এখানে আরও একটা প্রশ্ন তাকে না করলেই নয় যে তাদের জগতেও কি পুরুষ - স্ত্রী ভেদ আছে? 

এই ৫ টা প্রশ্ন মানুষের স্বাভাবিক আগ্রহ থেকে আসতেই পারে।

চিন্তা করতে করতে চোখের পাতার ভরে ঘুম এসে গেলো।বেশ সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গল।ঘর ঝার দিতে গিয়ে দেখি ফ্লোর খানিকটা ভেজা ভেজা।মনে হয় সে চলে যাওয়ার সময় যে ধোঁয়া চারিদিকে ছড়িয়ে গেছিল হয়ত সেই ধোঁয়া ঠান্ডায় ফ্লোরের উপর ভেজা ভাব  তৈরি করছে।সব কিছুই যেন তীরের মত বিধে  প্রমাণ করে দেয় তার সত্যতা। হয়ত প্রকৃতি চাইছে আমি এই সত্যতা স্বীকার করে নেই।ভাবতে ভাবতে দেখি দরজাই কলিং বেল বাজছে। এখন কে আসতে পারে, ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে দেখি আম্মু আব্বু ফিরে এসেছে।
মন ভালো  হওয়ার জায়গায় মনের কোথাও এক কোণে দুঃখ জমতে শুরু করল।হয়তো ওই প্রশ্নের উত্তরগুলো জানতে পারবো না বলে।এরপর আমি আর তাকে কখনো ডাকিনি। হয়ত যদি কখনো ডাক দি তবে গল্প আরো বাড়বে।।।।
গল্প: আমি ও কল্পনা। গল্প: আমি ও কল্পনা। Reviewed by সম্পাদক on রবিবার, মে ১৭, ২০২০ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.