নিচে তাকিয়ে যা দেখলো তা দেখার জন্য কানিজ একদমই তৈরি ছিলো না।
যে লোকটা এতো সময় কান্নার সাথে চিৎকার করছিলো সেই লোকটার অবস্থা এমন ছিলো যে তার পরনে ছিলো ছিঁড়া মতো করে একটা শার্ট আর একটা পুরোনো লুঙ্গি।
লোকটাকে এমন অবস্থায় দেখে কানিজ খুব অবাক হলো আর সবকিছু নিয়ে হালকা ঘোরে চলে গেলো কিছু সময় পর কানিজের যখন ঘোর কাটলো তখন দেখলো লোকটার পাশে একটা রিকশা যা কানিজ এতো সময় খেয়াল করেনি, এখন কানিজের কিছুটা হলেও বুঝতে সহজ হলো লোকটা আসলে কে সে হলো একজন দরিদ্র রিকশাওয়ালা
আর রিকশাটার অবস্থা মোটামুটি পুরোতন। কানিজ বেপারটা বুঝার জন্য কিছু সময় চুপ করে লোকটার কথা শুনলো।
লোকটা কান্না জড়িত কন্ঠে বলছে "মা,খালা,আফারা,আব্বা,খালু,ভা ইরা কেউ আছেন নি? আই রিকশা সালাইয়া গত দুইদিনে ২০ টেহার বেশি পাই নাই গো আর আই গত ২ দিন না খাইয়া আছি আর পোলাপান গুলা ২ দিন ধইরা পানি আর কয়ডা মুড়ি খাইয়া বাইচা আছে। আজকে তো আর বাসার মুড়িও শেষ.. আর পোলাপান গুলা আজকে কি খাইবো গো ওরা না খাইয়া মইরা যাইবো....পারলে আরে কেউ একটু সাহায্য করেন আরে কডয়া টেহা নাইলে কয়ডা খাওন দেন।" এই বলেই লোকটা নিচে বসে কান্না তে ভেঙে পড়ে।
লোকটার এমন কান্না আর মনে লাগার মতো কথা গুলো শুনে কানিজের চোখে পানি চলে এলো। কানিজ নিজের মনে মনে বলছে " আমাদের তো মহান আল্লাহ এমন অবস্থায় রেখেছে যে আমরা তিন বেলা খুব মুখরোচক খাবার না খেলেও মুটামুটি ভালো খাবারই তো তিন বেলা খেতে পারছি। কিন্তু এই সমাজের এতো গরিব, অবহেলিত, দিনমজুর এরা তো পারে না তিন বেলা পেট ভরে খেতে.. এদের তো করোনার আগেও অবস্থা এতো ভালো ছিলো না তখন তো তারা কম করে হলেও দুই বেলা খাবার তো খেতে পারতো এখন তো তাদের সেই রাস্তাও বন্ধ, দেশে এখন সব বন্ধ করে দিয়েছে তাও পরিবারের পেটের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয়। রাস্তায় বের হয়েও যে খুব যে সুবিধা হচ্ছে তাও নাহ। এই মানুষ গুলোকে যদি আমরা না দেখি সমাজের ধনী ব্যক্তিরা যদি একটু সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দেয় এদের পেটে খুদা নিয়ে ওপারে পারি বসাতে হবে... আর মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে এতো টাকা থাকার পরও কেনো তাদের দিকে একটু সাহায্যের হাত বাড়ায় নি ধনীরা।
কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ পেয়ে কানিজ চমকে উঠে পিছনে ফিরে দেখে উমায়ের। উমায়ের বললো "এতো ভেবে কি হবে? দেশের ঐ ধনীদের মানসিকতা তুই রাতারাতি বদলে ফেলতে পারবি না কিন্তু তুই একটা জিনিস করতে পারবি..."
কানিজ বললো" কি জিনিস সেটা যা আমি পারবো আমাকে তাড়াতাড়ি বলো, আমি আমার জায়গা থেকে কিছু করতে পারলে মনে থাকা চাপা কষ্টটা আমি কমাতে পারবো আমাকে বলো"
উমায়ের এবার নিরবতা ভেঙে বললো " খুব বেশি কিছু না তুই তোর মতো করে ঠিক যে টুকু পারবি ঐটুকু দিয়ে তোর আশেপাশের মানুষের সাহায্যের জন্য হাত বাড়া। তোকে দেখে তোর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে শিখবে সবাই আর এমন করে অনেক সাহায্য পাবে এই অসহায় মানুষেরা। আর জানিস ই তো আল্লাহ ভালো কাজ পছন্দ করে, তুই ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যা আল্লাহ তোর পথ সোজা করবে আর তোকে জবাবদিহি করলেও বলতে পারবি তুই করেছিলি তোর সাধ্যমতো। আর নিজের বিবেকের কাছে বারবার পরাজিতও হতে হবে না।"
কথা গুলো শুনে কানিজ আর এক মুহূর্ত দেরি না করেই উমায়ের কে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাসায় থাকা একমাসের বাজার হতে অর্ধেক বাজার নিতে এসেছে এমন সময় কানিজের মা এসে বলছে এগুলো নিয়ে সে কি করবে? কানিজ সব বললো তার মা তাকে বললো "তাহলে নে অসহায় মানুষের পাশে আমাদেরই দাঁড়ানো উচিত... তারাও মানুষ আর আমরাও।
মা কানিজ আর উমায়ের কে সাহায্য করলো সব ঠিক করতে।
কানিজ আর উমায়ের খাবার গুলো নিয়ে নিচে আসলো। উমায়ের গিয়ে রিকশাওয়ালা কে ধরে উঠিয়ে চোখে জমে থাকা কষ্টের লোনাজল মুছে দিয়ে তাকে বললো "তোমার সন্তান আর পরিবারকে আর না খেয়ে থাকতে হবে না আজ, আমরা তোমাদের জন্য খাবার এনেছি" কানিজ এগিয়ে এসে খাবার গুলো এগিয়ে দিলো রিকশাওয়ালার হাতে বললো "মামা আমরা খুব বেশি কিছু করতে পারিনি যতোটুকু পেরেছি আপনাকে সাহায্য করলাম এই খাবার দিয়ে আপনার পরিবারের ১ মাসের মতো হয়তো চলে যাবে। আর এই ৫০০ টাকা রাখুন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেনো আপনাদের মতো আরো মানুষের সাহায্য করতে পারি।"
এবার রিকশাওয়ালার চোখে মুখে আনন্দের আভাস ফুটে উঠলো তার মাঝে এতোই কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠলো যা ভাষায় প্রকাশের মতো না যা কেবলই চোখ দিয়ে দেখে মনের ভিতর হতে হতে উপলব্ধি করতে হয়। রিকশাওয়ালা আকাশের দিকে হাত তুলে আল্লাহর কাছে বলছে " ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহিম। তুমি সত্যি খুব দয়ালু এদের কে আমার কাছে খাবার নিয়ে পাঠিয়েছ, আল্লাহ তুমি এদের সুস্থ রেখো আর তৌফিক দিও যাতে এরা এমন ভালো কাজ সারাজীবন করতে পারে"
তার এই দোয়া আর শুকরিয়াতে বিন্দুমাত্র ছলনা নেই আছে কেবল মন থেকে হাজার শুকরিয়া।
এবার রিকশাওয়ালা খুশি মনে বিদায় নিলো কানিজ আর উমায়ের হতে।
আর সাথে সাথে আশেপাশের বাসা গুলোতে তাদেট জন্য হাত তালির শব্দ আসছে আর সবাই বলছে এখন থেকে আমরাও এমন মানুষের পাশে দাঁড়াবো।
খুশিতে উমায়ের আর কানিজের চোখে পানি চলে আসলো।
এই দেশটার মানুষ গুলো খুব ধনী না তবে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় অসহায় মানুষেরা এই কঠিন মুহূর্তে পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারবে।আর একটু সচেতন হলেই এই মহামারী করোনা থেকে দেশের মানুষ গুলো বাঁচতে পারবে, আত্ম সচেতন হতে হবে সবাইকে। আর না হলে এই দেশও রক্ষা পাবে না মহামারী মৃত্যু হতে..সবাই কে মেরে জনশূন্য করে ফেলবে দেশ আর দেশের ভবিষ্যৎ কে...আর আমরা কি আমাদের ভালোবাসার দেশ মায়ের ভবিষ্যৎ নিজ হতে শেষ করতে পারি?
আসুন সচেতন হই অপরকে সচেতন করি। ঘরে থাকুন নিজের, পরিবার এবং দেশের জন্য। আপনার এই সামান্য কষ্ট বয়ে আনবে দেশের সোনালী ভবিষ্যৎ।
আগের পর্বগুলোর পড়তে ক্লিক করুন-
ধারাবাহিক গল্প: কোয়ারেন্টাইন; পর্ব-৪ [শেষ পর্ব]।
Reviewed by সম্পাদক
on
বুধবার, এপ্রিল ১৫, ২০২০
Rating:
![ধারাবাহিক গল্প: কোয়ারেন্টাইন; পর্ব-৪ [শেষ পর্ব]।](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgpRArG77S2wuCLJQGLREtny7arbVVGsbuCbgq4RAeywjfyhnn6rG3c_wRyGHyD6n6bfUxdztXbObRRrc1Gqv53eswCqmUCfUIDABfoEcJuRpNhKmhzO4HZKC8DJN5z8lx4-YVNdMLXrSHk/s72-c/20200415_212040.jpg)