লেখা: নাবিলা আক্তার বুশরা,(ঢাকা)
সপ্তাহ খানেক পরের কথা পাশের বাসার ইমন ভাই কয়েক দিন হতেই বেশ অসুস্থ হয়ে আছে ভাবি তার সেবা করতে করতে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে এই কথা গুলো এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কানিজের মা তাকে বলেই যাচ্ছে, কানিজ এবার মা কে থামিয়ে বললো " মা এতো কিছু হলো! আমাকে আজ এসব বললা তুমি,!"
মা বললো " আমি তোকে রোজ বলবো বলবো করে ভুলেই যাচ্ছি, তাই আজ বললাম"
কানিজ বললো "মা, শুনো ভাইয়া তো ইতালি থেকে এসেছে তার উপর কোনো কিছু ঠিক করে মানে নি আবার ঐ দেশে কতো মানুষ ভাইরাসের সংক্রমণে মারা যাচ্ছে দেখো না! ভাবিকে বলো ভাইয়া কে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে... বেপারটা আমার সুবিধার ঠেকছে না। আর শুনো তোমার এখন ঐ বাসায় যাওয়ার দরকার নেই আর কেউ আমাদের বাসায় যেনো না আসে সবাইকে বলে দিবা, আর ভাবিকে এসব কথা এখনই কল করে বলে দাও"
কানিজের মা কানিজের কথা মতোই সব কাজ করলো।
দুই দিন পরে কানিজের ফোনে একটা কল এলো ওপাশ হতে ইমন ভাইয়ার বউ কান্না ভাব নিয়ে বলছে "কানিজ আমি আর এই লোকটার সাথে থাকবো না"
কানিজ তো হতবাক কি হলো এসব কথা কেনো বলছে! কানিজ নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললো "আহা ভাবি, কি হয়েছে বলবে তো? কেনো থাকবে না ভাইয়া কিছু বলেছে? "
ভাবি এবার নিজেকে সামলে নিয়ে বললো " দেখো উনি কতো দিন ধরে অসুস্থ উনাকে আমি ডাক্তার দেখাতে বলছি উনি রাজি হচ্ছে না,আর তাছাড়া চারপাশের অবস্থা ভালো না। আল্লাহ না করুক কিছু হলে তখন আমার আর মায়ের কি হবে? তুমি একটু ওকে বুঝিয়ে বলো।"
কানিজ ইমন ভাইয়াকে বুঝিয়ে বলাতে ইমন ভাই রাজি হয়ে গেলো ডাক্তারের কাছে যেতে। ডাক্তারের কাছে পাঠানোর পর তার সব রির্পোটও কিছুদিনের মাঝে চলে আসলো তার শুধু ফ্লু হয়েছে ঠিক হয়ে যাবে ডাক্তার বলেছে, কথাটা শুনে যেনো সবার মাঝে যেনো একটু শান্তি ছেয়ে গিয়েছে।
বাসায় বন্ধী জীবন অতিবাহিত করা হচ্ছে প্রায় দুই সপ্তাহ, এমন বন্ধী জীবন কারই বা খুব ভালো লাগবে কেমন যেনো এক ঘেয়েমি কাজ করা শুরু হচ্ছে।
কানিজের বাসার বুয়াখালারও এখন ছুটি চলছে তারও তো জীবন আছে আর দিন শেষে তার জীবনও ঝুঁকিতে থাকে তাই তাকেও নিজ বাসায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
দেশে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে খবরে এই কথাটা শুনেই একটু ভয় লাগছে কানিজের একে তো এই দেশে জনসংখ্যা বেশি তার উপর অশিক্ষিত নাগরিক বেশি। না আর ভালো লাগছে না টেলিভিশনে এমন খবর শুনতে।
কানিজ এখন বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে আছে নিচে তাকিয়ে দেখে তাদের গলিতে অনেক মানুষ হাঁটা-হাঁটি করছে অথচ সারাদেশ এখন লকডাউন কিন্তু মানুষ সর্তক না। এরা পুলিশের গাড়ি আসার শব্দ শুনলে যে যেখানে আছে দৌড়ে পালায়। আআার ঠিক যে মুহূর্তে পুলিশের গাড়ি চলে যায় আবার সবাই রাস্তায় বের হয়ে যে যার মতো হাঁটবে আড্ডা দিবে...তাদের দেখে মনে হয় করোনা কোনো ভাইরাস না এটা কোনো বেপারও না তাদের কিছুই করবে না।
এমনই যদি চলতে থাকে তাহলে ইতালি, আমেরিকা এসব দেশকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের মৃত্যুহার বেড়ে যাবে আর তখন বাংলাদেশ মৃত্যুপুরীতে রুপ নিবে।
এ দিকে বাসায় বসে বসে কেমন জানি দম বন্ধ লাগছে।
কানিজের সবচেয়ে ভালো লাগতো রাতে ছাদে যাওয়া বেশ কিছুদিন যাওয়া হয়েছে কিন্তু তার এখন ছাদে উঠতেও ভালো লাগে না, উল্টো কেমন জানি বিরক্তি ভর করেছে। কানিজের প্রতি দিন একই রুটিনে কাটে..রাতে ঘুম আসতে চায় না আর সকাল হলে ঘুম ভাঙতেই চায় নাহ, তাও আসলেমি কাটিয়ে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা শেষ করে মায়ের সাথে কাজে সাহায্য করতে চলে যায়..বাসার সবাই মিলেই এখন ঘরের কাজ শেষ করে। সবার উপর এখন বেশ চাপই যাচ্ছে যে কাজ করছে সবাই কেউই এতো কাজ করে অভ্যস্ত না তাই নেহাতই কষ্ট করে হলেও করতে হচ্ছে। কাজ শেষ করতে করতে দুপুর আর সবাই ফ্রী হয় দুপুরের পর। কাজ শেষের পর সবারই হাত পা ব্যাথা হয়ে যায় কারন এতো কাজ জীবনে প্রথম সবার করতে হচ্ছে।
এতো কিছুর মাঝে বেচারা উমায়ের ভাই এসে ফেসে গিয়েছে না পারছে নিজের বাসায় যেতে না পারছে একবারে কোনো কাজ না করে সারাদিন চুপচাপ বসে থাকতে। আসলে বাসার কেউ তাকে কিছু করতে বলে না নিজ থেকেই আসে করতে না হলে উমায়েরের নিজের কাছেই ব্যাপারটা খারাপ লাগে...সবাই করে কাজ আর সে থাকবে রাজকুমারের মতো বসে আর যাই হোক এটা হতে দেয়া যায় নাহ।
কানিজের বিকেলটা কাটে ছোট বোন আর উমায়ের ভাইয়ের সাথে দুষ্টুমি আর গল্প করে। উমায়ের তার চীনে থাকা কালীন ঘটনা বলে আর দুই বোন মনোযোগ দিয়েই শুনে। আর রাতের বেলা পুরো পরিবার এক সাথে বসে তাদের বিগত দিনের কাটানো সময়ের কথ বলে দারুন একটা আড্ডা হয় সাথে থাকে চা আর কফি।
কনিজ মনে মনে ভাবে কোয়ারেন্টাইন এর মাঝে যেমন কষ্ট আছে আবার আলাদা একটা শান্তি ও পাওয়া যাচ্ছে। আগে এতো ব্যস্ত থাকতো তখন এতো সুন্দর বসে কথা বলা যেতো না কিন্তু এখন যাচ্ছে তার উপর উমায়ের ভাইও আছে।
আজকে বিকেলে উমায়ের ভাই আর কানিজের ছোট বোন ছাদে গিয়েছে কিন্তু কানিজ আর যায়নি।
কানিজ প্রায়ই ভাবনায় ডুবে যায় এখনও ডুবেছে ভাবনায় সে নিজেই মনে মনে বলছে.."এই কোয়ারেন্টাইন সবার জীবনে সুখ শান্তি আনে নি বরং কারো জীবনে অভিশাপ ও বয়ে এনেছে।
গরীব মানুষ গুলো কাজ করে দিন এনে দিন খেত এখন তাদের সেই পথও বন্ধ তাদের কেউ সাহায্য না করলে তারা না খেয়ে মারা যাবে।"
এসব কথা ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে কানিজ বসে আছে তার রুমে।
হঠাৎ করেই একজন পুরুষের চিৎকার করে কেঁদে কথা বলার শব্দ আসছে, সচরাচর কেউ এমন করে কথা বলে না কৌতুহল বশত কিসের শব্দ দেখার জন্য কানিজ বারান্দায় গিয়ে নিচে তাকালো...(চলবে)
ধারাবাহিক গল্প: কোয়ারেন্টাইন; পর্ব ৩।
Reviewed by সম্পাদক
on
সোমবার, এপ্রিল ১৩, ২০২০
Rating: