-->

ধারাবাহিক গল্প: কোয়ারেন্টাইন; (পর্ব-২)।



ধারাবাহিক গল্প: কোয়ারেন্টাইন (পর্ব-২)
লেখা: নাবিলা আক্তার বুুশরা,(ঢাকা)

ঠাৎ করেই একদিন গাড়িতে করে কার যেনো বাড়িতে যাচ্ছে কানিজ ও তার পরিবার।
 তারা যে রাস্তাটা দিয়ে যাচ্ছে সেই রাস্তাটা খুবই বিচিত্র দৃশ্য নিয়ে তৈরি মনে হচ্ছে কোনো এক শিল্পী তার সবটুকু শৈল্পিকতা দিয়ে তৈরি করেছে এই গোলকধাঁধা পূর্ণ রাস্তাটা, চারপাশ বহু রাস্তা এক মোড়ে এসে দেখে সেখানে আবার ৪/৫ টা রাস্তা বের হয়ে গিয়েছে আর যখন তারা এই বপারটা লক্ষ্য করলো ততক্ষণে  তাদের আরেক গাড়ি হারিয়ে গিয়েছে।কোন রাস্তা দিয়ে যাবে বুঝতে না পেরে গাড়ি এবার সোজা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ করে গাড়িটা ভীষণ জোরে ব্রেক করলো আর ঠিক সামনেই ছিলো এক খাদ সবাই খাদে পড়ে যাচ্ছে তখনই ভীষণ একটা আর্তনাদের শব্দ ছেয়ে গেলো চারদিক...
কানিজের পুরো শরীর খুব করে ঘামছে তারপর চোখ খুলে দেখে সে তার বিছানায় শুয়ে আছে, তাহলে এতো সময় যা দেখলো তা কি ছিলো?

 এটা আর কিছু না এতো সময় যা ঘটে ছিলো তা হলো কানিজের ভাবুক মন আর তারই দেখা একটা ভয়াবহ স্বপ্ন ।
দিনের শুরুতেই এমন একটা বাজে স্বপ্ন দিয়ে দিনের শুরুটা হওয়াতে তার মুড খুব একটা ভালো নেই...মন ভালো না হলেও নিজ কাজে তাকে এখন বাহিরে যেতেই হবে। বাসে উঠে আজকে একদম পিছনের দিকের সিটে বসতে হলো তার উপর পাশে সিটে বসার জায়গা থাকলেও সিটের কুশন উধাও এমন অবস্থায় বাস জোরে ব্রেক করলেই পাশের দিকে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে যদি না কোনো কিছু আকড়ে ধরে না বসা হয় আর পিছনে দিকে বসায় মশার কামড়ও খেতে হচ্ছে। প্রতি দিন লোকাল বাসে উঠতে হলে রীতিমত একটা যুদ্ধ করতে হয় তার উপর একটা সিট পেলে তো যুদ্ধ জয় করার আনন্দ আর না পেলে সারা রাস্তা দাড়িয়ে আসতে হয় অর্দ পরাজিত যুদ্ধার ন্যায়।

আজ তো রবিবার কানিজের হঠাৎই মনে হলো আজ তো তার ফুফাতো ভাই উমায়ের দেশে আসবে... উমায়ের দেশে তেমন আসে না কিন্তু না চাইতেও তাকে দেশে আসতে হলো কারন সে চীনে থাকে আর যে জায়গায় সে থাকে সেখানের অবস্থা এখন ভালো না তাই তাকে দেশে ফিরে আসতে হলো সে না চাইলেও এক প্রকার পরিবারের চাপেই এলো। এখন কিছু সময় তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে তাই আপাতত তার সাথে দেখা হচ্ছে না তবে কানিজের সামান্য চিন্তা হচ্ছে তার জন্য।

কানিজের বড় কোনো ভাই বা বোন কেউ নেই আর উমায়ের কে সে বড় ভাইয়ের মতোই ভালোবাসে ভাইয়ের ভালো চায় সে তাই চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক।
কিছুদিন পর....
কানিজকে আজ বিশাল জ্যামে বসে থেকে বাসায় আসতে হয় রীতিমতো আসতে আসতে প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে।  বাসায় এসেই দেখে উমায়ের ভাই সোফায় বসে আছে, দারুণ রকমের ভালো লাগা আর সারপ্রাইজ হয়ে গেলো কানিজ।

উমায়ের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর আজ প্রথম বাসায় আসে  তাও আবার কানিজদের বাসায়।

কানিজ তো মহাখুশি তার ভাইকে সে ৩ বছর পর আজকে সামনে পেয়েছে কি করবে বুঝতেও পারছে না, এসেই ভাইকে একটু খোঁচা দিয়ে বললো "আমাকে ভুলিস নি তাহলে! ভাইয়া"  তারপর ফ্রেশ হয়ে উমায়েরের সঙ্গে বেশ খাওয়া-দাওয়া করে  জমিয়ে আড্ডা ও দেয়া হলো।
দিনকাল ভালোই যাচ্ছে কম বেশি প্যারা নিয়ে। কিন্তু কানিজ ভাবছে  তার  অবস্থা আর দেশের ব্যস্তময় অবস্থা ভালো চললেও পৃথিবীর বাকি দেশের অবস্থা খুব একটা ভালো নাহ... ইতালিতে করোনা ভাইরাস চলে এসেছে আর ইতালিতে থাকা বাংলাদেশের মানুষরা দেশে ফিরতে শুরু করেছে কারন মৃত্যু ভয় তাদের তাড়া করছে প্রতিনিয়ত তারা ভাবছে এখানে থাকলে মরতে হবে দেশে গেলে বাঁচা যাবে হয়তো তখন আর ভাইরাস ধরবে নাহ, আবার কেউ কেউ ভাবছে মরলে পরিবারের সামনেই মরা ভালো অন্ততপক্ষে কাছের মানুষদের দেখেই মরবো। যারা ইতালি থেকে আসছে তারা বেশির ভাগ মানুষই মানছে না সরকারি নির্দেশনা, সবাই দিব্যি ঘুরছে.. তারা এটাও জানে না তাদের মাঝে এই ভাইরাস আছে নাকি বা নেই।

এসব ভাবতে গিয়ে তার ভয় হচ্ছে এখানের মানুষ সচেতন না দেশের সরকারের কথাও শুনছে না এমন হলে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিবে।

আজ বন্ধের দিন তাই একটু দেরিতে ঘুম থেকেই উঠা সপ্তাহে এই বন্ধের দিনগুলোতে একটু যা ঘুমানো যায়।

 কফির মগ হাতে কানিজ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে আর গলির মানুষের কাজকর্ম দেখছে,

কিছু সময় পর খেয়াল করে পাশের বাসার ইমন ভাই দোকানে বসে চা খাচ্ছে কিন্তু উনি তো পরশু এসেছে ইতালি থেকে আর এখনই বাসার এখানে কি করে! 

 কফি খাওয়া শেষ হলেই পাশের বাসায় গিয়ে ইমন ভাইয়ের বউকে কানিজ ডেকে বলে "কি  ভাবি ভাইয়া বাহিরে কি করে?  উনাকে তো হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে, উনাকে বাহিরে যেতে কেনো দিলে?"

 ভাবি অসহায় মুখ করে বলে" উনি কারো কোনো কথা শুনলে তো..উনি বলে উনার কিছু হবে না কারন উনি নামাজ পড়ে উনি মুসলিম... আর এসব নাকি খারাপ মানুষদের আর বিধর্মীদের হয়"।

 ভাবির এসব কথা শুনে কানিজ হতবাক সে কি বলবে এদের এরা শিক্ষিত হয়েও এতো টা মূর্খতা দেখাচ্ছে।  কানিজ একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবিকে বললো " ভাবি দেখো এসব ভাইরাস মানুষের মাঝে ভালো, খারাপ বা ধর্ম দেখে আসে না। বরং মানুষের অসচেতনতার জন্যই আসে আর তাছাড়া তোমরা শিক্ষিত হয়ে এমন চিন্তা রাখো তাহলে সমাজের অশিক্ষিতরা কি করবে বুঝো?"

না আর ভালো লাগছ না এই বাসায় থাকতে,
কথা গুলো বলেই কানিজ নিজের বাসায় চলে আসলো।

ইতালিতে এখন অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে আর    মারা যাওয়া শুরু করছে আর এমন অবস্থায় দেশের মানুষরা খুব অসেচতন।

কনিজ ঠিক করলো এখন বাহিরে যাওয়া ঠিক হবে না কারন বিদেশ থেকে অনেক মানুষ দেশে এসেছ আর তারা তো সব ঠিক মতো মানছেও না বরং পুরো দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজে সুস্থ থাকাটা নিজের কাছে তাই কানিজ ঠিক করলো এখন থেকে আর ভার্সিটি যাবে না যতো দিন সব ঠিক না হচ্ছে আর তাছাড়া অন্যান্য ভার্সিটি তেও শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না সবাই সবার বাসায় চলে যাচ্ছে।

কানিজের এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পরের দিনই সরকার হতেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা চলে আসলো।

প্রথম প্রথম কয়েকদিন বেশ ভালোই কাটলো বাসায়.. বাসায় মাকে  সাহায্য করা আর ছোট বোনের সাথে সময় কাটছে এর মাঝে উমায়ের ভাইও তাদের বাসায় থাকতে এসেছে।
সপ্তাহ খানেক পরের অবস্থা...(চলবে)

ধারাবাহিক গল্প: কোয়ারেন্টাইন; (পর্ব-২)। ধারাবাহিক গল্প: কোয়ারেন্টাইন; (পর্ব-২)। Reviewed by সম্পাদক on শনিবার, এপ্রিল ১১, ২০২০ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.