-->

ফিচার: একজন কিশোর নেত্রী ।


জেবা সামিহা,(রংপুর):

ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি সাধারণত আন্দোলনকারীরা স্বদেশ অথবা স্বজাতির সমস্যা সমাধানে আন্দোলন করে থাকে। তবে এবার ইতিহাসে যোগ হয়েছে ভিন্নতা। বিশ্ব দেখতে পেলো এক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পৃথিবীপ্রেমী যে পুরো পৃথিবী রক্ষায় উদগ্রীব।
বলছিলাম গ্রেটা থানবার্গের কথা জাতিতে তিনি সুইডিশ। মালেনা ইর্নমান ও সাভান্তে থানবার্গেরর ঘরে ২০০৩ সালের ৩রা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন গ্রেটা থানবার্গ। তার পরিবার অভিনয় জগতের হলেও সে ব্যস্ত ধরণী রক্ষার্থে। ৮ বছর বয়সে গ্রেটা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারলে শিশু মস্তিষ্ক খুব উদগ্রীব হয়ে যায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীতে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায়। জলবায়ু পরিবর্তনের চিন্তা মাথায় নিয়েই বড় হতে থাকে গ্রেটা। ১১ বছর বয়সে গ্রেটা প্রচন্ড হতাশায় ভুগতে থাকেন এবং প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা বলতেন না তিনি। তারপর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি সুস্থ হতে থাকেন। পরবর্তীতে গ্রেটা জানান - আমার অনেকটা এমন মনে হচ্ছিলো যে আমি এর( জলবায়ু পরিবর্তন)  সম্পর্কে প্রতিবাদ না করলে আমি ভিতরে ভিতরে মারা যাবো।
এরপর গ্রেটা ১৫ বছর বয়সে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপরীতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে জোরালো প্রতিবাদ শুরু করেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে স্কুল বাদ দিয়ে টানা তিন সপ্তাহ তিনি সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে বসে থাকেন।
এরপর সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ঘোষণা দেন প্রতি শুক্রবার তিনি সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যাপারে অঙ্গীকার দেন। এমনকি গ্রেটা ও তার পরিবার পরিবেশ রক্ষায় উড়োজাহাজ ভ্রমণ ও পশুর মাংস খাওয়া বাদ দেন।
গ্রেটা তার প্রতিবাদের সকল কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ইন্সটাগ্রামে ও টুইটারে পোস্ট দিয়ে ক্রমান্বয়ে জনমত তৈরি করতে শুরু করেন। তার উল্লেখযোগ্য একটি আন্দোলনের মধ্যে হলো ' ফ্রাইডেইস ফর ফিউচার '। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেটার ডাকে সাড়া দিয়ে ২০১৮ সালের ১৫ই মার্চ ১০৫ টি দেশের ১৬৫৯ টি স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে জলবায়ু সংকট সমাধানের জন্য। বলা হয়ে থাকে ফ্রান্স ও প্যারিসের জলবায়ু চুক্তিতে প্রভাব রয়েছে গ্রেটার আন্দোলনের।
সম্প্রতি জাতিসংঘে গ্রেটার দেয়া ভাষণের সূত্রধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন- আর আলোচনা বা পরিকল্পনা নয় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াবে ভারত। ফ্রান্স ও জার্মানি কয়লার ব্যবহার কমানোর আশ্বাস দেন।

মাত্র ১৫ বছর বয়সের একজন কিশোরীর জলবায়ু সংকট সমাধানের জন্যে এতো শক্তিশালী প্রতিবাদ সত্যি প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয়। এর মধ্যেই গ্রেটার আন্দোলন রক্ষনশীল মানুষের বির্তকিত হতে শুরু করে। স্কুল বাদ দিয়ে এ আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেননা তারা। কিন্তু কোনো বাধাই দমাতে পারেনি পৃথিবীপ্রেমী গ্রেটার মহান আন্দোলনকে।

জলবায়ু সংকট সমাধানের আন্দোলনের বাহবা সরূপ ২০১৯ সালে গ্রেটা গোল্ডেন ক্যামেরা, ফিট অর্ড এওয়ার্ড, র‍্যাচেল কারসন প্রাইজ সহ আরও অনেক পুরস্কার পান। গত ২০শে নভেম্বরে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার লাভ করেন গ্রেটা থানবার্গ। এরই মধ্যে গ্রেটা থানবার্গ শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্যে মনোনীত হলেও তা নিয়ে রয়েছে সামান্য বির্তক।

যেখানে কবিরা কবিতায় আগামীর জন্যে যথাযথ পৃথিবীর কথা বলেছেন সেখানে গ্রেটা থানবার্গ কবির ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে চাচ্ছেন।
তারুণ্যের জয়জয়কার সবসময়ই। তবে শিশু বয়স থেকে পৃথিবীর ভবিষ্যতের চিন্তা করা এবং তা নিয়ে কাজ করা সত্যি অভাবনীয় এবং অসাধারণ। প্রতিটি কিশোর-কিশোরীর কাছে গ্রেটা নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়।

[নতুন নতুন গল্প,ছড়া,ফিচার,গল্প সহ শিশু-কিশোরদের সৃৃজনশীল লেখার আপডেট পেতে ক্লিক করুন]
ফিচার: একজন কিশোর নেত্রী । ফিচার: একজন কিশোর নেত্রী । Reviewed by সম্পাদক on সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০১৯ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.