একবার গরমের ছুটিতে নানুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে শুনি সাফু তার স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছে। সাফু আমার মামতো ভাই। ওর প্রথম হওয়ার কথা শুনে আমার খুব মন খারাপ হলো কারণ আমি সেবার আমার ক্লাসে তৃতীয় হয়েছিলাম। সাফু তেমন ভালো ছাত্র না কিন্তু ওইবার সে কিভাবে কিভাবে যেন ভালো রেজাল্ট করে ফেললো। সাফু রেজাল্ট কার্ড এনে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো, আম্মা স্যারের বাসায় মিষ্টি পাঠাতে হবে। জীবনে প্রথমবার ফার্স্ট হয়েছি। মামীও খুশি হয়ে বললো, আচ্ছা পাঠাবো নে। বাড়িতে সবাই খুশি, তাদের খুশি দেখে আমিও আমার কষ্টের কথা ভুলে গেলাম।
বিকেলে আমি আর সাফু খেলছি এমন সময় শুনি পাশের বাড়িতে সাপ ধরা পরেছে। আমি আর সাফু দৌড়ে গেলাম সাপ দেখতে। গিয়ে দেখি ছোট্ট একটা সাপ সবাই মিলে যা পাচ্ছে তাই দিয়ে মারছে। সাফু এসে আমাকে বললো, "বুঝলি? গোখরা সাপ!"
আমি বললাম, "তুই কি করে বুঝলি?"
"আমি তো এই সাপ টাপ সব চিনি" এই কথা বলে সাফু আমার কানে কানে বললো, "আমার পোষা সাপও আছে। যাদেরকে আমি পছন্দ করি না তাদেরকে সাপ দিয়ে কামড় খাওয়াই।"
এ কথা শুনে আমি ভয়ে শিউরে উঠি। এর মধ্যেই শুনলাম সাপটাকে নদীর কাছে নিয়ে দ্বিতীয় দফা মারা হবে। আমি আর সাফু সবার সাথে নদীর পাড়ে এসে আবার সাপ মারা দেখলাম। সাপ মারা শেষে সবাই সাপটাকে নদীতে ফেলে দিলো। হঠাৎ এক মেয়ে এসে আমার জামার ফুল ধরে টেনে ছিড়ে ফেললো। আমি বললাম, আমার জামার ফুলটা দাও। ঐ মেয়ে আমাকে ভেংচি কেটে দিলো আর আমি কান্না শুরু করলাম। তারপর যখন বাড়িতে ফিরলাম, মা আমাকে খুব বকা দিলো কেন না জানিয়ে সাপ দেখতে গেলাম।
পরদিন আমি যখন মাটির হাড়িপাতিল দিয়ে খেলছিলাম তখন আগেদিনের মেয়েটা এসে আমাকে বলে, জোলাপাতি খেলবা? আমি ওকে বললাম, তুমি খুব পঁচা। তোমার সাথে খেলবো না। তখন মেয়েটা তার প্যান্টে গুঁজে রাখা ফুলটা আমাকে দিয়ে বললো, আমারেও তোমার সাথে খেলায় নাও। ফুল ফিরে পেয়ে আমি খুশি হয়ে ওর সাথে খেলা শুরু করি। ছোট পাতিলে সাদা বালু দিয়ে ভাত, কড়াইয়ে পাতা আর ইটের কনা দিয়ে তরকারি রান্না করি। সব কিছু গুছিয়ে রান্না করা শেষে যখন আমরা মেইন খেলা শুরু করবো ঠিক তখনই সাফু এসে বলে, ছিঃ ছিঃ! তুই বালু খাস? আমি ফুফুকে বলে দিবো তুই আবার বালু নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছিস। ওর কথাকে পাত্তা না দিয়ে আমরা আমাদের খেলা খেলছিলাম। তাই সাফু আমাদের খেলা নষ্ট করতে হাড়ি পাতিল সব এলোমেলো করে দিলো। আমাদের রান্না করা ভাত, তরকারি সব মাটিতে পরে গেলো। আমি গিয়ে সাফুকে মারতে লাগলাম আর সাফুও আমাকে মারতে লাগলো। একসময় আমি কেঁদে কেঁদে বললাম, মামীর কাছে বলবো তুই আমাকে মেরেছিস। সাফু বললো, আমিও তোকে আমার পোষা সাপের কামড় খাওয়াবো। এই কথা শুনে আমি ভয়ে মার কাছে চলে আসি আর পুরাটা দিন মায়ের পাশে পাশে থাকি। রাত হলে কখন আবার সাপ এসে আমাকে কামড় দেবে এই সঙ্কায় আমি ঘুমাতে পারি না। মা আমাকে ঘুমানোর জন্য বকা দিলে আমি কেঁদে কেঁদে বলি, ঘুমালে সাফুর পোষা সাপ এসে আমাকে কামড়ে দেবে। আমি যে ওর সাথে ঝগড়া করেছি তাই। মা আমাকে বলে সাফু মিথ্যে বলেছে। ওর কোনো পোষা সাপ নেই। তবু আমি আস্বস্ত হতে পারি না। তারপর মামী এসে আমায় বলে, সাফুকে আচ্ছা মতন মেরে দেবো। ও আর কখনও তোমার সাথে ঝগড়া করবে না। সাফুকে মেরে দিলে আমাকে আর জ্বালাতন করবে না এমন কথা শুনার পর আমার ভয় কিছুটা কাটে। তবু আমি চিন্তায় থাকি কখন সাফুর সাপ এসে আমাকে আবার কামড়ে দেয়!
গল্প: স্মৃতির কৌটা
Reviewed by সম্পাদক
on
সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
Rating: