জেবা সামিহা,(রংপুর):
Teenage যার অর্থ বয়ঃসন্ধিকাল। মানুষের ১৩-১৯ বছরের সময়টাকে বলা হয় বয়ঃসন্ধিকাল। যদিও স্থানভেদে বয়সের সময়সীমার হেরফের রয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালকে বলা যেতে পারে শিশু বয়স থেকে যৌবনে যাওয়ার সময়টুকু। যার আরেকনাম কৈশোরকাল। এ সময়কে অনেকেই বলে সংবেদনশীল ইংরেজিতে যাকে sensitive. কারণ মানুষ বয়ঃসন্ধিতে যা করবে তার ফল বা প্রভাব পড়বে তার পরিণত বয়সে। আর এ সময়টাতে মানুষের ভুল পথে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর ভুলগুলো প্রতিরোধ করতে গেলে কিশোর বয়স তাদের অনেক শত্রু বা প্রতিপক্ষ খুঁজে পায়।
বাবা-মা, যারা সন্তান জন্ম দেন, লালনপালন করেন এবং সন্তানকে সুন্দর নিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি করতে সাহায্য করেন। স্বাভাবিক ভাবেই বাবা-মা কিশোর বয়সে তাদের সন্তানদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেন বা তাদের সঠিক পথে চালনা করার জন্যে অনেক চেষ্টা করেন যেমনটা তারা শিশু বয়স থেকেই করার চেষ্টা করে। কিন্তু কিশোর বয়স ঠিক-ভুল বুঝে না, মন যাতে সায় দেয় তাতেই চলতে চায় সে। অনেক সময় তাদের মর্জি ভুল হয় আর যখনই বাবা-মা সঠিক পথে তাদের আনতে চায় তখন বাবা-মা হয়ে যায় তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ। শুনতে খারাপ লাগলেও হিসেব করলে এই কথা সত্য।
বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে অনেক প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু সবসময় বাবা-মায়েরা সফল হন না অনেক সময় ব্যর্থ হয়ে যান। কিন্তু কেনো ব্যর্থ হয় বাবা-মা?
মানুষ ভেদে তাদের আচার-আচরণ ও চিন্তাভাবনা ভিন্ন হয়। তাই একেক বাবা-মা একেকভাবে তাদের সন্তানকে সঠিক পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। আর এই পথ ভিন্ন হওয়ায় ব্যর্থ ও সফলতার জন্ম হয়।
মনে করেন, একজন কিশোর অনেক ধূমপান করছে এখন তার বাবা-মা চাইবে সে যেনো ধূমপান না করে। কেউ হয়তো তাদের সন্তানকে সরাসরি মারধর করবে কেউ বা তাদের সন্তানকে বুঝাবে আর কেউ অন্য পথ অবলম্বন করবে। প্রথমত যে সন্তানকে মার দেয়া হবে প্রথমেই ধূমপান থেকে দূরে সরে আসবে এমনটা খুবই কম হবে আবার মারের ভয়ে ধূমপান থেকে সরে আসলেও আসতে পারে। আর যে সন্তানকে বুঝানো হবে বা অন্য কৌশল অবলম্বন করা হবে তার হয়তো ধূমপান থেকে সরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে। শুধু সন্তানকে সঠিক পথে আনার ধরনটা সঠিক ছিলো না বলে নিজ সন্তানের হাতে খুন হতে হয় ঐশির বাবা-মাকে।
আবার ধরুন, একজন কিশোর খেলোয়াড় হতে চায় কিন্তু বাবা-মা চায় ছেলে আর সাধারণদের মতো পড়াশোনা করে ৯টা থেকে ৫টার কোনো চাকরি করুক। কিশোর বুঝছে খেলোয়াড় হওয়াটা তার স্বপ্ন আর বাবা-মা বুঝছে ছেলে চাকরি করলে মাসে একটা নিশ্চিত পরিমাণ টাকা পাবে যা দিয়ে তার বাকি জীবন হয়তো ভালো কাটবে। এখানে সমস্যাটা বোঝাপড়ার। কেউ কারোর ইচ্ছাটা বুঝতে চায় না। যার ফলে বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের এক দূরত্ব তৈরি হয়। এসব ক্ষেত্রে বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে সমোঝোতা করে যেকোনো একজনের ইচ্ছা ত্যাগ করা উচিত।
বয়ঃসন্ধির সময়টাতে বাবা-মায়ের উচিত সন্তানের বন্ধু হওয়া। এতে করে একজন কিশোর/কিশোরী নির্দ্ধিধায় তার বাবা-মাকে সব ধরনের সমস্যা বলতে পারবে ফলে তাদের বাবা-মা সঠিক সমাধান দিবে এবং তাদের ভুল পথে যাওয়ার সম্ভাবনা কম হবে। কিন্তু কতজন বাবা-মা তাদের সন্তানের বন্ধু হয়? খুব বেশি না। যদিও ইদানীং সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এর সংখ্যা বাড়ছে। তারপরেও বাবা-মায়ের থেকে দূরত্ব বাড়ছে কিশোর বয়সী অনেক সন্তানের। পারিপার্শ্বিকতার কারণে অনেক বাবা-মা চেয়েও তাদের সন্তানদের বন্ধু হতে পারেন না। আবার অনেকে মানতে নারাজ বা বুঝতেই পারেন না বা জানেনা সন্তানের সাথেও বন্ধুত্ব হয়। তাছাড়াও অনেক কিশোর/কিশোরী ভাবতেই পারেনা গুরুজন সমতুল্য বাবা-মা কখনও তাদের বন্ধু হতে পারে। যেহেতু বাবা-মায়ের অভিজ্ঞতা ও বিচার-বিবেচনা নিঃসন্দেহে তাদের সন্তানদের তুলনায় বেশি সেহেতু বন্ধু হিসেবে বাবা-মা সবচেয়ে ভালো।
তবে কিছু সংস্থা চাইলে এসব মানসিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিতে পারে। অথবা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে একটা সুন্দর ভূমিকা রাখতে পারে যেমনটা উন্নত দেশগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক জোরদারে নিয়ে থাকে।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সব সন্তান তাদের বাবা-মায়ের সাথে।
বন্ধু হিসেবে বাবা-মা
Reviewed by সম্পাদক
on
রবিবার, অক্টোবর ২৭, ২০১৯
Rating: