-->

৩০দেশের তরুনদের এক তৃতীয়াংশের বেশি অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার: ইউনিসেফ জরিপ


ডেস্ক রিপোর্ট:
 ইউনিসেফ এবং শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি (এসআরএসজি) কর্তৃক ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়েছে, ৩০টি দেশে প্রতি তিনজন তরুণ-তরুণীর একজন বলেছেন, তারা অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার এবং প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন সাইবার উৎপীড়নের কারণে স্কুল বাদ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
যুব সমাজের সম্পৃক্ততায় ‘ইউ-রিপোর্টে’র মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে এই জরিপে অংশগ্রহণ করেন। এদের তিন-চতুর্থাংশ আরও বলেছেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ও টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অনলাইন উৎপীড়নের সবচেয়ে পরিচিত স্থান।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, "সংযুক্ত শ্রেণিকক্ষের অর্থ হচ্ছে একজন শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই স্কুলের কার্যক্রম শেষ হয় না এবং দুর্ভাগ্যবশত, স্কুলপ্রাঙ্গণে উৎপীড়নও শেষ হয় না।  তরুণ সম্প্রদায়ের শিক্ষার অভিজ্ঞতা উন্নত করার অর্থ হচ্ছে তারা অনলাইন এবং অফলাইনে যে পরিবেশের মুখোমুখি হয় তা বিবেচনায় নেওয়া।“
জরিপের অংশ হিসেবে ক্ষুদ্রবার্তা এবং তাৎক্ষণিক বার্তাপ্রেরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের কাছে তাদের অনলাইনে উৎপীড়ন ও সহিংসতা (যা অনলাইনে প্রায়শই ঘটে থাকে) বিষয়ক অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় এবং এটা বন্ধ করার দায়িত্ব কার বলে তারা মনে করেন, সেটাও জানতে চাওয়া হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশ জানান, অনলাইনে উৎপীড়ন বন্ধে সরকারকেই দায়িত্ব নেওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন। এছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩১ শতাংশ এক্ষেত্রে তরুণ সমাজের এবং ২৯ শতাংশ ইন্টারনেট কোম্পানির দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেন।
শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি (এসআরএসজি) নাজাত মাল্লা মজিদ বলেন, “তাদের মতামত থেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে বার্তাটি আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে, শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা ও অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা: যখন জানতে চাওয়া হয় যে সাইবার উৎপীড়ন বন্ধের দায়িত্ব কার হওয়া উচিত, তখন তারা প্রায় সমানভাবে সরকার, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (বেসরকারি খাত) ও তরুণ জনগোষ্ঠীর কথা বলেছে। এখানে আমরা সবাই একত্রে আছি এবং অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই দায়িত্বটি ভাগ করে নিতে হবে।"
১৩-২৪ বছর বয়সী ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি ইউ-রিপোর্টার এই জরিপে অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে আছেন আলবেনিয়া, বাংলাদেশ, বেলিজ, বলিভিয়া, ব্রাজিল, বুর্কিনা ফাসো, আইভরি কোস্ট, ইকুয়েডর, ফ্রান্স, গাম্বিয়া, ঘানা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জ্যামাইকা, কসোভো, লাইবেরিয়া, মালাবি, মালয়েশিয়া, মালি, মোলদোভা, মন্টিনিগ্রো, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, রোমানিয়া, সিয়েরা লিওন, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ের তরুণরাও।
ইউ-রিপোর্ট জরিপের মাধ্যমে গত ৩০ জুনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪৫ শতাংশ ইউ রিপোর্টার জানিয়েছে যে তারা অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে দেশজুড়ে ১২ লাখ শিশু-কিশোরের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অনলাইনে শিশুর সুরক্ষা প্রকল্প জোরদারে গ্রামীণফোন, টেলিনর গ্রুপ এবং উনিসেফ একটি যৌথ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
২০১৮ সালে, এই প্রকল্প দেশব্যাপী ৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী এবং ৭০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক, বাবা-মা ও অভিভাবকের জন্য সচেতনামূলক   কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। নিরাপত্তা পদক্ষেপকে ঘিরে আরও ভালো জ্ঞান, সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা গড়ে তুলতে এই প্রকল্প চালু করা হয়। ইতিবাচক ডিজিটাল শিক্ষার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
সহপাঠীদের মধ্যে সাইবার উৎপীড়ন হচ্ছে একটি অনন্য উচ্চবিত্ত সমাজের বিষয় বলে যে ধারণা প্রচলিত রয়েছে তাকে চ্যালেঞ্জ করে এই বৈশ্বিক জরিপের ফল। উদাহরণস্বরূপ, উপ-সাহারা আফ্রিকা অঞ্চলের ৩৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান, তারা অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার হয়েছিলেন।
প্রায় ৩৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান, তারা স্কুল কমিউনিটির ভেতরে গোপন অনলাইন গ্রুপ সম্পর্কে জানতেন, যেখানে শিশুরা উৎপীড়নের উদ্দেশ্য তাদের সহপাঠীদের সম্পর্কিত তথ্য আদান-প্রদান করতো।
স্কুল ও এর আশেপাশে সহিংসতা বন্ধ করতে (#এন্ডভায়োলেন্স) ইউনিসেফের প্রচারাভিযানেরঅংশ হিসেবে বিশ্বের শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠী ২০১৮ সালে #এন্ডভায়োলেন্স ইয়ুথ ম্যানিফেস্টো-এর একটি খসড়া তৈরি করে, যেখানে সহিংসতা বন্ধে এবং শিশুরা যাতে স্কুলের ভেতরে ও আশেপাশে নিরাপদ বোধ করে তা নিশ্চিত করতে সরকার, শিক্ষক, বাবা-মা এবং একে অপরকে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে অনলাইনে সুরক্ষা প্রদানের আহ্বানও জানানো হয়।
ফোর বলেন, “বিশ্বব্যাপী উচ্চ-আয় ও নিম্ন-আয়–উভয় শ্রেণির দেশগুলোর তরুণ জনগোষ্ঠীই আমাদের বলছে যে, তারা অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার হচ্ছে, যা তাদের পড়াশোনায় প্রভাব ফেলছে এবং এটি তারা বন্ধ করতে চায়। আমরা যেহেতু শিশু অধিকার বিষয়ক কনভেনশনের ৩০তম বার্ষিকীতে পদার্পন করেছি, তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নীতিমালার সর্বাগ্রে যাতে শিশু অধিকারের বিষয়টি থাকে তা আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে”।
অনলাইনে উৎপীড়ন এবং স্কুলের ভেতরে ও আশেপাশে সহিংসতা বন্ধে ইউনিসেফ ও সহযোগীরা নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে সব খাতের জরুরি কর্মসূচি আহ্বান করছে:
  • শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে সাইবার উৎপীড়ন ও ভীতি প্রদর্শন থেকে সুরক্ষিত রাখতে নীতিমালার বাস্তবায়ন করা।
  • শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতে জাতীয় হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামে সুসজ্জিত করা।
  • বিশেষ করে তথ্য সংগ্রহ ও উপাত্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ সেবা প্রদানকারীদের কার্যক্রমে নৈতিক মানের উন্নতি ঘটানো।
  • নীতিমালা ও নির্দেশিকার জন্য শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর অনলাইন আচরণ সম্পর্কিত ছড়ানো ছিটানো তথ্যপ্রমাণ আরও সমন্বিতভাবে সংগ্রহ করা।
  • বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা শিশু ও তরুণদের মধ্যে সাইবার উৎপীড়ন ও ভীতি প্রদর্শন প্রতিরোধ এবং মোকাবেলা করতে শিক্ষক ও বাবা-মাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
৩০দেশের তরুনদের এক তৃতীয়াংশের বেশি অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার: ইউনিসেফ জরিপ ৩০দেশের তরুনদের এক তৃতীয়াংশের বেশি অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার: ইউনিসেফ জরিপ Reviewed by সম্পাদক on মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.