-->

কিছু কথা অপূর্ণ থেকে যায়।


মিজু সরকার হৃদয়,(নীলফামারি):

ইচ্ছা ছিলো শহরের কোন কলেজে পড়াশুনা করার। আল্লাহ সেই ইচ্ছা পূরন করে দিছে।শুনছিলাম মেস জীবনটা একটু ব্যাতিক্রম।  মেসে এসে  মাসের শুরুর কথা বলছি। সবে মাত্র বাড়ি হতে টাকা এসেছে। রুম ভাড়া, মিলের টাকা, কারেন্ট বিল, পেপার বিল,ডিস বিল  প্রভৃতি পরিশোধ করতে হাতে কিছু টাকা থেকে যায়। 
গভীর রাতে মনে মনে হিসেব করি, দিনে কত টাকা খরচ করলে মাস ব্যাপী উক্ত টাকায় চলে যাবে। এভাবে চলছে.. হঠাৎ কোন একদিন গেস্টের আগমন। গেস্ট বলতে কথা, একটু অতিথি পরায়ণ না হলে হিতের বিপরীত হয়ে যায়।  গেষ্ট এর আপ্যায়ন করতে গিয়ে দৈনিক চা-নাস্তার খরচ বিসর্জন দিতে হয়। আবার কখনো আত্মীয়, এলাকাবাসীর মেডিকেলে আসা হলে, সেখানে তাদেরকে দেখতে যেতেই হবে।  মন চায় পাশে থাকতে, সেবা করতে কিন্তু তা করতে গিয়ে যে আমরা আর্থিক অসুবিধায় পড়ি তা কেউ বুঝে না। সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন ক্লাস, প্রাইভেট ও আর্থিক সংকটের জন্য দেখতে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না তার বিনিময়ে, "ছেলেটা ভাল না, মানবতা নেই" না গেলে বাসায় অভিযোগ অমুক এর ছেলে  অনেক বেয়াদব।- এসব কথাও আমাদের শুনতে হয়। তাই পুনরায় দৈনিক পকেট খরচের টাকা বিসর্জন দিয়ে দেখতে যেতে হয়। এভাবে মাসের শেষ প্রান্তে চলে আসি। তদুপরি অসুস্থ হলে এবং যদি কোন মাসে বন্ধু বান্ধবীর জন্মদিন পড়ে যায় তাহলেতো ঐ মাসটি আলোকিত অন্ধকার। ক্যাম্পাসে বসে থাকা অবস্থায় যখন ভিক্ষুক এসে বলে, বাবা একটু সাহায্য করেন। তখন ৫ টাকা দিয়ে বলি ২ টাকা ফেরত দেন কিন্তু ভিক্ষুকের চেহেরা দেখে মনে হয় সে সন্তুষ্ট নয়। ভিক্ষুকও জানে না যে, ঐ ২ টাকা হলে আবার অন্য ভিক্ষুককে বিদায় করতে পারব। ইচ্ছে হয় তাদেরকে সন্তুষ্ট করার। কিন্তু ভিক্ষুককে বিদায় করা যায় ,সন্তুষ্ট করা যায় না ।

 বাড়ি হতে মা ফোন করে বলে, "বাবা, শরীর কেমন আছে? আর শোন, বাইরে থাকছিস  তোর বাবা টাকা পাঠালে দুধ, ডিম কিনে খাবি তাহলে ভাল লাগবে।" উত্তরে মাকে বলি, জ্বী মা ঠিক আছে তুমি টেনশন করো না আমি ভাল আছি। আর মনে মনে বলি, জানো মা, প্রচন্ড মাথা ব্যথা, তোমার মমতামাখা হাতটা আমার মাথায় একটু রাখো না মা! যখন আপু ফোন দিয়ে বলে, "কিরে টাকা শেষ নাকি?মোবাইল বিল টা কম করে চলিস। টেনশন করিস না, যা মন চায় তাই খাবি আমি টাকা পাঠিয়ে দিব আর ভাল করে পড়িস।" আপুর কথা গুলো নিশ্চুপ হয়ে শুনি, স্তব্ধতার প্রতিফলন ঘটে চোখের কোণায়। ভাগগিস আপু ভিডিও কল দেয়নি। 

তখন আবার টাকা পাঠিয়ে দেয় তবুও পূর্বের দেয়া বিসর্জনের ঘাটতি বাড়তিতে পরিণত হয় না। তথাপি পুনরায় বলতে ইচ্ছে করে না,বন্ধু -বান্ধব বা মেস মেট এর কাছে ধার করে চলতে হয় পরের মাসে শোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।   কেন বলি না তা পরিবারের কেউ জানে না কিন্তু আমরা বাইরে  থাকা  স্টুডেন্টরা  সবাই জানি। প্রতিটি জীবনই মনে হয় একেকটা উপন্যাসের মতো। শুধু লেখা হয়না,এই যা! 
আমার মাঝে মাঝে জীবনটাকে,জীবনের বাস্তবতাগুলোকে,জীবনের ইচ্ছাগুলোকে পূরণ করার জন্য আগামীর সুখের কথা গুলোর দিক ভেবে সব কিছুকে মেনে নিতে হয়৷
কিছু কথা অপূর্ণ থেকে যায়। কিছু কথা অপূর্ণ থেকে যায়। Reviewed by সম্পাদক on সোমবার, জুন ০৩, ২০১৯ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.