শফিয়ার রহমান:
(প্রিন্ট থেকে পরের অংশ)
........ আর একটি হলো পাঠ্যবই।পাঠ্যবইগুলো বয়স ও শ্রেণী উপযোগী কি না ভেবে দেখার বিষয়। ধরুন ২য় বা ৩য় শ্রেণীর ইংরেজি বইটিতে বুঝিয়ে পড়ানোর জন্য অনেক বিষয় পড়ানো জরুরী। এই বউ পড়তে শিক্ষার্থীর number ,gender ,person,sentence,opostite word সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা দেয়া দরকার । এমন কি Tens এরও ধারণা দেয়া দরকার।
একজন ২য় শ্রেণীর শিক্ষার্থীর এত কিছু শিক্ষা দেয়া কি অপরিহার্য? প্রশ্ন হলো এই বয়সের শিক্ষার্থী কে কি আসলে ইংরেজী গ্রামার শেখানো জরুরী?
প্রাথমিক পর্যায় থেকে এত উন্নত পড়ানোর ফল আমরা উচ্চশিক্ষায় ভর্তিযুদ্ধে দেখেছি ইংরেজী বিষয়ে অকৃতকার্যই বেশি।
প্রাথমিক এর এই শিক্ষা কাজেই লাগছে না।
অভিজ্ঞ কৃষক কখনোই শষ্য বপনের আগে জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেন না। কারণ ওই সার ফসলের কাজে আসে না।
শিশুর ৫ মাস বয়সের আগে মায়ের দুধের পাশাপাশি ভাত খাওয়ানো মঙ্গল বয়ে আনে না। এই বয়সে ভাত হজম করার ক্ষমতা থাকে না।
তেমনি শিশুদের গ্রহণ করার মতো বা হজম করার মতো সামর্থ্যহীন বই পড়ানো কাজে না আসাই স্বাভাবিক ।
খেলার সময় বেলুনে ফু দেয় শিশু কিন্তু পড়ার খেলায় শিশুর মস্তিষ্কে ফু দেয় অবিভাবক ,শিক্ষক এবং শিক্ষা ব্যবস্থা। এই তিনের সমন্বয় হীনতা শিশুকে ফেটে যাওয়ার সীমানায় নিয়ে যায়।
একজন শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করে। ধরুন কর্মজীবি ওই ব্যক্তি বাল্য কালে অধ্যয়ন করা বিদ্যালয়ের কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন । তাকে বলা হলো স্মৃতিচারণ করতে। শিক্ষকের হাতে মার খাওয়া, স্কুল পালানো,ভাল শিক্ষকের গুণগান করা, খেলার মাঠের কোনো ঘটনা নিয়েই স্মৃতিচারণ করে থাকে। পাঠ্যবইয়ের গল্প ,কবিতা কিংবা পাঠ্যবইয়ের কোনো কিছু এখানে উঠে আসে না। যদি জানতে চাওয়া হয় প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ের কোনো পড়া মনে করতে পারবেন কিনা । অধিকাংশ পড়াই মনে পড়বে না। সবচেয়ে মজার বা দু:খ কষ্টের ঘটনাই মনে পড়বে।কারণ যে পড়াগুলো বুঝতে পারে নাই শুধু ওষুধ খাওয়ার মত গলধ:করণ করেছে সেগুলি রোগ মুক্তি অর্থাত পরীক্ষার খাতায় লেখা পর্যন্ত রোগ সারার জন্য খেতে বাধ্য হয়েছে।
তেতো ওষুধ খেতে চায় না বলে শিশুদের জন্য বানানো ওষুধ মিষ্টি করা হয়। যাতে মিষ্টি স্বাদে ওষুধ খেতে পারে।
তেতো ওষুধ জোর করে খাওয়াতে গেলেই ওষুধ ভিতি ও ওষুধের অপচয় হয়।
শিশুর শিক্ষার মধ্যে আনন্দ না থাকলে বা মজার স্বাদ না পেলে শিশুর পড়া ভিতি তৈরী হয়।
জোর করে শিক্ষা দিলে বেলুন ফাটবেই। শিশুর শিক্ষা ফলপ্রসু করার জন্য তার চর্চা না অনুশীলন জরুরী। শিশু নিজ ইচ্ছায় চর্চা বা অনুশীলন করে সেদিকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই শিশু শিক্ষার জন্য মঙ্গল । যতই স্বেচ্ছায় অনুশীলনে আগ্রহী হবে। ততই শিশু নিজ পায়ে দাড়াবে। আত্মবিশ্বাসী হবে।
প্রাথমিক পর্যায় শিক্ষার প্রাধান্য হওয়া দরকার শারিরীক ও নৈতিক শিক্ষার । পাঠ্যবই মুখস্ত করে নয় । খেলার মাঠেই শিক্ষার ব্যবস্থা করা । সাথে সাথে নাচ ,গান ,ছবি আকা।
সহপাঠ্যক্রমিক নয় বাধ্যতা মূলক বিষয় হিসেবে এসব অন্তর্ভুক্ত করা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীর চর্চা শিক্ষক, সংগীত-চারুকলা শিক্ষক নিয়োগ অবশ্যই কাম্য।
বেলুন যত আয়তন পর্যন্ত ফুলালে ফেটে না যাবে তা মেনেই ফু দেয়া প্রয়োজন নতুবা বেলুনা ফু দেয়ার পরিণাম হবে শিশুর কেঁদে ফেলার মতো।
আর এই বেলুন যাতে ফেটে না যায় এজন্য অবিভাবক,শিক্ষক ও শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আবশ্যক।
পড়াপড়া খেলা।
Reviewed by সম্পাদক
on
বুধবার, মে ০১, ২০১৯
Rating: