ফাতেমা আক্তার মনিরা
বাবা?
ভাল আছিস? কিভাবে কাটে তর দিন গুলি?রাতে ঘুমাতে পারিস ঠিক মত?
আমি যতটুকু জানতাম আমার খোকা, কখনো তার মাকে আদর না করে ঘুমাতে পারতো না..!আচ্ছা খোকা? তর মনে পরে অই দিন টার কথা?
একদিন তোকে ছেড়ে তর খালার বাসায় ছিলাম? সেই রাত টিতে কেমন ছটফট করেছিলি? সকাল হতে না হতেই পাগলের মত তর খালার বাসা থেকে বাসায় চলে এসেছিলাম, আর তুই আমাকে জরিয়ে ধরে কেমন করে কেঁদেছিলি? বলেছিলি তোকে ছেড়ে আর যেন কোথাও না যাই?
মনে পরে খোকা?
জানিস বাবা?
তোর এই মা ছোট বেলা থেকে খুব চঞ্চল স্বভাব এর ছিল। অজোপাড়া গায়ের মেয়ে ছিলাম তহ..! গ্রামের এমন কোনো গাছ ছিল না যেই গাছে তোর মা উঠে ঠ্যাং ভাঙে নি।
ভাঙার পরওও তর মা বসে থাকেনি, এই ভাঙা পা নিয়েই দিব্যি খেলায় মগ্ন থাকতো..!
জানিস খোকা? তুই পেটে আসার পর, আমার প্রতিটা পদক্ষেপ এ ছিল সাবধানতার ছাপ, এ জীবনে এত ধিরে আর কখনো হেটেছিলাম বলে আমার মনে পড়ে না।
জানিস বাবা? তর মা সামান্য ব্যথা সহ্য করতে পারতো না, একটু তে একটু কিছু হলেই কান্নার রোড় পরে যেত। অথচ তোকে ৯ মাস গর্ভে ধারন করে সহ্য করেছি অস্য যন্ত্রণা!!
এত যন্ত্রণার মধ্য যখন তর মুখ দেখি, বিশ্বাস কর বাবা সব এক নিমিষেই ভুলে গিয়েছিলাম। তোর এই মা এক রাত না ঘুমাতে পারলে দুনিয়া দারি সব এক করে ফেলতো, অথচ জানিস? তর জন্য কত মাসের পর মাস না ঘুমিয়ে হাসি মুখে কাটিয়ে দিয়েছি কত রাত। আমার বাড়িতে আমার জন্য কেউ বড় মাছের মাথা, বড় মাংসের টুকরা খেতে পারতো না, কাউ কে দিতাম না আমি! আর সেই আমি তর জন্য রোজ বড় মাছের মাথা, মাংস আলাদা করে রাখতাম।
গভীর রাতে জায়নামাজ বিছিয়ে আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে নিজের জন্য কিছু না চেয়ে শুধুমাত্র তর জন্য প্রার্থনা করি, যেন তুই ভাল থাকিস ।
ভাল আছিস তহ বাবা?
আমাকে ১২ টা বছর এই অন্ধকার বদ্ধ ঘরে ফেলে রেখে কেমন করে আছিস রে বাবা?
মনে পড়ে না আমার কথা?
বাবা? আমি মরে গেলে আমার কাছে আছিস না বাবা।
আমি সহ্য করতে পারবোনা
আমার আত্যা তোকে আদর করতে ছটফট করবে রে বাবা।।
বৃদ্ধাশ্রম থেকে এক মায়ের চিঠি।
Reviewed by সম্পাদক
on
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
Rating: