ডেস্ক রিপোর্ট:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস আজ রবিবার। বাঙালি জাতির হাজার বছরের লালিত স্বাধিকারের স্বপ্ন-আকাংখা ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমেই বাস্তব রূপ পেয়েছিল। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫১ বছর বয়সেই জাতিকে দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।
জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে তার মহানায়ককে। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করবে তার শততম জন্মদিন। ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন করো রঙিন’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি দেশজুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোয়ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তার নীতি ও আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সাহসী, ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব। বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম। ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রণী হয়ে ওঠেন তিনি।
পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জীবনের বড় একটি সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এ দেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধে বারবার জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লড়ে গেছেন তিনি। তার বজ্র হুংকারে বারবার পিছু হটেছে পাকিস্তানি শাসকেরা। মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছেন তিনি। শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন এ দেশের মানুষের শেষ কথা, শেষ আশ্রয়।
তার আহ্বান নির্দ্বিধায় মেনে নিয়ে স্কুল-কলেজ ছেড়ে, কলকারখানা-অফিস ছেড়ে মানুষ বারবার নেমেছে রাজপথে। বুক পেতে দিয়েছে বুলেটের সামনে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এ দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে। ৯ মাসের মধ্যে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন মহানায়ক-বিশ্বনেতা। কিউবার কিংবদন্তি বিপ্লবী ও রাষ্ট্রপ্রধান প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এ মানুষটি হিমালয় সমান। সুতরাং হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি।’ ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ক্যাস্ট্রোর সাক্ষাৎ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী আগামী বছর। এ মহানায়কের শততম জন্মবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিব বর্ষ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে সারাদেশে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনাসভা হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকগুলোয় প্রকাশিত হবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মাওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। বঙ্গবন্ধুর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। যা ইউনেস্কোর ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়াল্ড রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু আকাক্সিক্ষত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জিত হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। ওই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি তার ধানম-ির বাসভবনে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আজ।
Reviewed by সম্পাদক
on
রবিবার, মার্চ ১৭, ২০১৯
Rating: