নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুর সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু আকারের ভূমিকম্প অনুভূত ।
ভূমিকম্পটির উৎপত্তি স্থল ভারতের আসাম অঞ্চলে । রিখটারস্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫.৪।
আসুন দেখে নেই ভূমিকম্প কি? আতংকিত না হয়ে ভূমিকম্পের সময় কি করা উচিৎ ?
ভূমিকম্প:
ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।
কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং উৎসস্থল থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেণ্ড থেকে এক/দু-মিনিট স্থায়ী হয়। মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয় যে, তা অনুভব করা যায় না। কিন্তু শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে।
ভূমিকম্পের সময় করবো কি?
* ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনির সঙ্গে সঙ্গে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিন।
* ঘরে হেলমেট থাকলে মাথায় পরে নিন, অন্যদেরও পরতে বলুন।
* ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সম্ভব হলে আশপাশের সবাইকে বের হয়ে যেতে বলুন।
* দ্রুত বৈদ্যুতিক ও গ্যাসের সুইচ বন্ধ করে দিন।
* কোনো কিছু সঙ্গে নেওয়ার জন্য অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
* যদি ঘর থেকে বের হওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে ইটের গাঁথুনি দেওয়া পাকা ঘর হলে ঘরের কোণে এবং কলাম ও বিমের তৈরি ভবন হলে কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিন।
* আধাপাকা বা টিন দিয়ে তৈরি ঘর থেকে বের হতে না পারলে শক্ত খাট বা চৌকির নিচে আশ্রয় নিন।
* ভূমিকম্প রাতে হলে কিংবা দ্রুত বের হতে না পারলে সজাগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয় নিন ঘরের কোণে, কলামের গোড়ায় অথবা শক্ত খাট বা টেবিলের নিচে।
* গাড়িতে থাকলে যথাসম্ভব নিরাপদ স্থানে থাকুন। কখনো সেতুর ওপর গাড়ি থামাবেন না।
* এ সময় লিফট ব্যবহার করবেন না।
* যদি বহুতল বাড়ির ওপরের দিকে কোনো তলায় আটকা পড়েন, বেরিয়ে আসার কোনো পথই না থাকে, তবে সাহস হারাবেন না। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। ভেবে দেখুন, উদ্ধারকারী পর্যন্ত আপনার চিত্কার পৌঁছাবে কি না।
* বিম, দেয়াল, কংক্রিটের ছাদ ইত্যাদির মধ্যে আপনার শরীরের কোনো অংশ চাপা পড়লে, বের হওয়ার সুযোগ যদি না-ই থাকে, তবে বেশি নড়াচড়া করবেন না। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে।
* ধ্বংসস্তূপে আটকে গেলে সাহস হারাবেন না। যেকোনো উত্তেজনা ও ভয় আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সতর্কতা ও সচেতনতা
* ভূমিকম্প সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিন।
* এর ঝুঁকি ও করণীয় সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে।
* ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।
* এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গড়ে তুলতে হবে।
* ভূমিকম্পে আহতদের জন্য জরুরি চিকিত্সাসেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
* বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার এবং গণমাধ্যমের সাহায্যে জনগণের সচেতনতা বাড়াতে হবে।
* বাড়ি বানানোর প্রকৌশলী, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, বাড়ির মালিক ও মেরামতের সঙ্গে জড়িত লোকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
* ভূমিকম্প প্রকৌশল কোর্স চালু করা দরকার।
* স্কুল, হাসপাতাল ও দমকলের মতো অত্যাবশ্যকীয় প্রতিষ্ঠানের গঠন সুচারুভাবে করা উচিত।
* গৃহীত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে।
* বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ আইন অনুযায়ী তৈরি করলে দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব।
* বাড়ি বানানোর সময় অবশ্যই তীব্রতা-সহনশীল করে তৈরি করতে হবে। আমরা না বুঝে ম্যাগনেচুড বা মাত্রা-সহনশীল তৈরি করে থাকি, যা ঠিক নয়। তীব্রতা-সহনশীল পদ্ধতি ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা নির্দেশ করে। ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার পরপরই এটি মাপা হয়। ভূমিকম্পের ব্যাপকতা বোঝাতে ভয়াবহ, প্রচণ্ড, মাঝারি, মৃদু ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়।
****
১. আমেরিকান রেডক্রসের পরামর্শ অনুযায়ী- ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ বা ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি। অর্থাৎ কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন, তারপর কোন শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নীচে ঢুকে কাভার নিন, এমন ডেস্ক বেছে নিন বা এমনভাবে কাভার নিন যেন প্রয়োজনে আপনি কাভারসহ মুভ করতে পারেন। তাদের মতে, ভূমিকম্পে আমেরিকার খুব কম বিল্ডিংই কলাপস করে; যেটা হয় তা হল আশেপাশের বিভিন্ন জিনিষ বা ফার্নিচার গায়ের উপর পড়ে নেক-হেড-চেস্ট ইনজুরি বেশি হয়। তাই এগুলো থেকে রক্ষার জন্য কোন শক্ত ডেস্ক বা এরকম কিছুর নীচে ঢুকে কাভার নেয়া বেশি জরুরী। অপরদিকে উদ্ধার কর্মীর মতে বিল্ডিং কলাপস করলে ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি একটি মরণ-ফাঁদ হবে। সেটা না করে কোন বড় অবজেক্ট যেটা কম কম্পপ্যাক্ট করবে যেমন সোফা ইত্যাদির পাশে আশ্রয় নিলে যে void তৈরী হবে, তাতে বাঁচার সম্ভাবনা বেশী থাকবে। এখন রেড ক্রস কিন্তু এই ভয়েড বা এর ব্যাপারটা অস্বীকার করে নি। কিন্তু যেহেতু আমেরিকায় বিল্ডিং কলাপ্স হবার সম্ভাবনা কম, তাই তাদের ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ পদ্ধতিই বিভিন্ন বস্তুর আঘাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য সবচেয়ে উত্তম। দু’টো ব্যাপারই তাই মাথায় রাখুন।
২. উদ্ধার কর্মীরা আরো লক্ষ্য করেছেন বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ার সময় সিলিং যখন কোন অবজেক্টের ওপর পড়ে একে গুঁড়িয়ে দেয়, ঠিক তার পাশেই ছোট্ট একটি খালি জায়গা বা void-এর সৃষ্টি হয়। একে তারা বলছেন ‘সেফটি জোন’ বা ‘ট্রায়াঙ্গল অফ লাইফ। তাই ভূমিকম্পের সময় বড় কোন সোফা বা বড় কোন অবজেক্ট যেটা কম কম্প্রেস করবে- এরকম কিছুর পাশে আশ্রয় নিলে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ছোট্ট একটু void-ই যথেষ্ট। বিপন্ন অবস্থায় কুকুর, বিড়াল এবং শিশুদের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হল কুন্ডলি করে গুটিশুটি হয়ে যাওয়া। ভূমিকম্পের সময় মানুষেরও এটা অনুসরণ করা উচিত। তাহলে বিভিন্ন অবজেক্টের পাশে গুটিশুটি করে আশ্রয় নিলে এগুলো ভূমিকম্পের সময় যে ছোট void-এর সৃষ্টি করবে তাতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
৩. রাতের বেলা ঘুমানোর সময় ভুমিকম্প হলে কোন হুড়াহুড়ি করার দরকার নেই। গড়িয়ে মেঝেতে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে পড়ুন বিছানাকে ঢাল বানিয়ে। তার মানে আবার বিছানার নীচে যেন ঢুকবেন না, বিছানার পাশে আশ্রয় নিন। তেমনি ভূমিকম্পের সময় জানালা বা বারান্দা দিয়ে লাফ দেয়া এসবও করবেন না। কোন সোফা বা দুই নাম্বার পয়েন্টে যেভাবে বলেছি সেভাবে ঘরের মধ্যেই কোন অবজেক্টের পাশে আশ্রয় নিন।
৪. অনেককে বলতে শুনেছি ভূমিকম্পের সময় দরজার নীচে আশ্রয় নিলে নাকি বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে! দরজার নীচে বা পাশে থাকলে নির্ঘাত মারা পড়বেন। যদি দরজার নীচে থাকেন তবে সিলিং-এর নীচে চাপা পড়ে মারা পড়বেন আর যদি পাশে থাকেন দরজা আপনাকে দু’ভাগ করে কেটে ভেঙ্গে পড়বে।
৫. ভূমিকম্পের সময় কখনই সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না। সিঁড়ির ‘মোমেন্ট অফ ফ্রিকোয়েন্সী’ বিল্ডিং-এর চাইতে ভিন্ন হয় এবং অনেক সময় বিল্ডিং ভেঙ্গে না পড়লেও সিঁড়ি দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে।
৬. চেষ্টা করুন বাসার একেবারে ভিতরের দিকের রুমে না থেকে বাইরের ওয়ালের কাছাকাছি আশ্রয় নিতে। বিল্ডিং-এর ভেতরের দিকে থাকলে সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার পর আপনার ‘উদ্ধার পাবার রাস্তা’ ব্লক হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাইরের ওয়ালের কাছাকাছি থাকলে ব্লক কম থাকবে, তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাবার সম্ভাবনাও বেশি থাকবে।
৭. বড় ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যেটাকে ‘আফটার শক’ বলে। এটার জন্যও সতর্ক থাকুন, না হলে পচা শামুকেই শেষমেষ পা কাটতে হতে পারে।
৮. প্রথম ভূমিকম্পের পর ইউটিলিটি লাইনগুলো (গ্যাস, বিদ্যুত ইত্যাদি) একনজর দেখে নিন। কোথাও কোন লিক বা ড্যামেজ দেখলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন
সবচেয়ে বড় কথা একটি ভূমিকম্পের সময় যেটুকু সময় পাওয়া যায় সেসময় মাথা ঠান্ডা রাখা অসম্ভব হয়ে। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হবে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া,গুগোল
ভূমিকম্পে কেপে উঠলো দেশ । আসুন দেখে নেই ভুমিকম্পে করণীয় ও সচেতনতা ।
Reviewed by সম্পাদক
on
বুধবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
Rating: