বুক রিভিউ- লাল নীল দীপাবলি; হুমায়ুন আজাদ

শিশু-কিশোর২৪ডেস্ক:

বইয়ের নাম: লাল নীল দীপাবলি

লেখক: হুমায়ুন আজাদ

ভাষা – বাংলা

ধরণ – ইতিহাস ও রাজনীতি 

বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের কবিরা ছিলেন কাহ্নপাদ, লুইপা, কুক্কুরীপা, শবরপা। কি রহস্যময় তাদের নাম!

এসকল রহস্যময় কবিরা রচনা করেছেন চর্যাপদ। বাংলা সাহিত্যে এরাই প্রথমে জ্বালান আলো। এরপর কেটে গেছে হাজার বছর। দেখা দিয়েছে অজস্র কবি, উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার। সকলে মিলে সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ বাংলা সাহিত্য।

হুমায়ুন আজাদ এসকল ইতিহাসকে অবলম্বন করে রচনা করেছেন ‘লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’। খুব সহজ সরল ভাষায় কবিতার মত ছন্দ সহকারে রচনা করেছেন এই বই। বাংলা সাহিত্যের পুরো ইতিহাসটা এতো প্রাঞ্জল এবং আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তোলা একমাত্র লেখকের দ্বারা সম্ভব হয়েছে।

বাঙালিরা দেখতে কেমন? কেমন তাদের মুখের ভাষা? বাঙালি জাতি ও তাদের ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারনা পাওয়া যায় বইটি পড়লে। এই বইয়ের অন্যতম বিশেষত্ব হল যে, কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, ভারতচন্দ্র রায়গুনাকর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত লেখকদের বিশাল রচনার একটি তালিকা পাওয়া যায়।  হুমায়ুন আজাদ তাঁর এই বইয়ে প্রাচীন চর্যাপদের মাঝে প্রাগৈতিহাসিক গন্ধ, প্রাচীন যুগ পরবর্তী অন্ধকার যুগের বিষাদ, মধ্যযুগের শুরুতে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের মহিমা, মঙ্গলকাব্যের কাহিনীর উপন্যাসীয় বর্ণনা সহ নেমে আসা অবসাদ, বৈষ্ণব পদাবলীর উজ্জ্বলতম আলো, আলাওলের বন্ধুর জীবন এবং পদ্মাবতীর মহাকাব্যিকতা, মুসলিম কবিদের প্রথমবারের মতো মানুষের কথা বলার তাৎপর্য, বঙ্গীয় রেনেসাঁর শুরুতে মধূসূদনের গগনচুম্বী প্রতিভার ঝলক, গদ্যের মধ্যেও বিদ্যাসাগরের ছন্দ আবিষ্কার, বিহারীলালের রোমান্টিকতা, প্রতিদিনের সূর্য রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক ও আধুনিক কাব্যে অভূতপূর্ব প্রতিভার স্বাক্ষর, বুদ্ধদেব বসু-জীবনানন্দ দাস-বিষ্ণু দে-সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-অমীয় চক্রবর্তী দের হাত ধরে আধুনিক কবিতার জন্মের এক বিশদ বর্ণণা লিখে দিয়েছেন আরো হাজার হাজার বছর ধরে জ্বলতে থাকা ইতিহাস গ্রন্থ ‘লাল নীল দীপাবলি’তে।

বাংলা সাহিত্যের, বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিটি মানুষকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস জানতে, বুঝতে ও অনুধাবন করতে সৃষ্টিকর্মের এই বইটি একবার চেখে দেখা উচিত……..।।

বই পর্যালোচকঃখালিদ সাইফুল্লাহ