তাসনিম মাহবুব,(রংপুর):
বিকেলের ডুবন্ত সূর্যকে অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলো রূপক।ভাবছিলো কি অপার সৌন্দর্য এই প্রকৃতির মাঝে।এই লাল রাঙ্গা সূর্য ঠিক তখন ডুবে গেলো মেঘের আড়ালে,রূপকের যেনো তখন ভাবনা ভেঙ্গে গেলো।চমকে উঠলো সে আরে এ কি করেছি! সন্ধ্যা যে নেমে এলো।সূর্য দেখতে দেখতে কখন যে সাঝ নেমে এসেছে সে বুঝতেই পারে নি।সে তখন চারদিক চেয়ে দেখলো গভীর কালো অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে সবকিছু।দু একটা ঝিঝির ডাক শুনতে পেলো।এই অন্ধকারকে আরো বাড়িয়ে দিলো তার চারপাশের ঘন অরণ্যচর বৃক্ষগুলো।সে ভাবলো এই অন্ধকারময় বন থেকে কীভাবে এখন সে বের হবে।খানিক চিন্তা করার পর সে ভাবলো আজ রাত টি না হয় এই বনেই কাটিয়ে দিলাম।তখন আকাশে চাঁদের আলো দেখা যাচ্ছিলো সেই আলোতে সে একটি পুরানো গাছের গুড়ি দেখতে পেলো।সে সেখানে গিয়েই আশ্রয় নিলো।চারদিকে ঝিঝির ডাক আরো বেড়ে গিয়েছে,মাঝে মাঝে দু একটি পেচার ডাক তার কানে আসছিলো।হঠাৎ সে যেনো কতগুলো গলার আওয়াজ শুনতে পেলো।সে চমকে উঠলো,ভাবলো আমি ছাড়া আর কেউ বনে আছে কি?না কি ভুল শুনলাম।সে ক্ষাণিক পরে দেখতে পেলো সেই আওয়াজ তার পাশ থেকেই আসছে। তার চারপাশের গাছগুলো কথা বলছে।সে অবাক হলো,একি কল্পনা নাকি স্বপ্ন দেখছে সে! একটু বাদেই বুড়ো বট গাছের শব্দে তার ভ্রম ভাঙ্গলো।বুড়ো বট তাকে বললো, বাছা আজ তোমায় পেয়েছি আর তোমায় ছাড়ছি না।রূপক বলে উঠলো কেনো আমায় ছাড়বে না আমার অপরাধ?তখন বট বলে উঠলো অপরাধ সে তো তোমার নয়,তোমার মতো অন্য মানুষদের।রূপক আবার বললো, কেনো তারা কি করেছে?তখন নিম গাছ বলে উঠলো, তোমরা মানুষেরা শুধুই নিজেদের স্বার্থ দেখো।তোমরা নিজেদের জন্য আমাদের প্রাণ নিয়ে নিচ্ছো,আমাদের বাচাঁর অধিকার কেড়ে নিয়েছো।অবিচারে ধ্বংস করছো অজস্র অরণ্য।কি অপরাধ তাদের?অথচ আমরা বৃক্ষরা তোমাদের প্রাণ বাঁচিয়ে থাকি,তোমাদের পৃথিবীকে সুন্দর করি। তার বিনিময়ে আমরা কি পেলাম শুধুই মৃত্যু।তোমাদের যদি একটি অঙ্গ কেটে নেয়া হয় তোমরা বাঁচবে? তেমনি আমাদের ও তো বাচাঁর স্বপ্ন আছে কিন্তু তোমরা,তা দিচ্ছো না।নিমের কথা শেষ হতে না হতেই অর্জুন গাছ বলে উঠলো, অতো কথা কেনো বলছো মানুষেরা কি আমাদের কষ্ট বোঝে। তারা বোঝে শুধু আমাদের প্রাণ নিয়ে অর্থ লাভ।তাই আজ আমরাও বিদ্রোহী হয়েছি। আমরা আজ তোমাকে মেরে নিজেদের প্রতিশোধগ্রহণ করবো।রূপক সব শুনে বললো আমি তো কোনো অপরাধ করি নি।তবে আমায় কেনো মারবে।এই কথা শুনে কদম গাছ বললো তুমিও যে মানুষ আর সব মানুষ যে এক।তাই তোমাকে মরতে হবে। এবার রূপক বলে উঠলো, তোমাদের উপর অত্যাচার হয়েছে এটা সত্যি। কিন্তু সব মানুষ যে এক নয়।অনেকেই তোমাদের বাচাঁতে চায় তোমাদের ভালোবাসে। আমিও যে তাদের একজন। আমিও ভালোবাসি তোমাদের।তখন তা শুনে সব গাছেরা বললো যদি ভালোবাসো তবে কি পারবে আমাদের অস্তিত্ব বাঁচাতে? পারবে আমাদের এই বনকে আগের মতো সাজাতে?তখন রূপক বলে উঠলো,আমি আমার সাধ্য দিয়ে হলেও বাচাঁবো তোমাদের আবার সাজিয়ে তুলবো এই বন।কথা দিলাম আর তা না হলে আমার প্রাণ তো রইলো।তখন সব গাছেরা যেনো আনন্দে মেতে উঠলো তারা বায়ুর পরশ ছড়িয়ে রূপকের কাছে এলো আলিঙ্গন করতে।তখন হঠাৎ রূপকের মনে হলো কেউ তাকে ডাকছে,এই রূপক ওঠ না ওই দেখ বন দেখা যাচ্ছে।রূপক জেগে উঠলো দেখলো তার মা তাকে ডাকছে। সে ভাবলো এতক্ষণ তবে স্বপ্ন দেখেছে।পরে মনে পড়লো সে তো বন দেখতে এসেছে।তখন তার নিজের প্রতিজ্ঞা মনে পড়লো।সে মনে মনে বলে উঠলো এই বন আমার আরেক মা একে আমি রক্ষা করবো।দেখি কে তাকে ছুতে আসে।ভোরের আলো পড়েছে রূপকের মুখে আর সেই সাথে তার মুখে এক অন্য হাসি। এই হাসি বনমাতার এক দূরন্ত সন্তানের হাসি।
যশোর রোডের শতবর্ষী গাছ |
ছবি সূত্র: google,can stocks
গল্প- বৃক্ষকথন।
Reviewed by সম্পাদক
on
শনিবার, জুলাই ২৮, ২০১৮
Rating: