-->

শিক্ষকগণের ভালবাসা৷



সুমাইয়া সীমা ,(বিশেষ প্রতিনিধি-বেরোবি):

কাল রাতে হঠাৎ আমার কলেজের স্যার ফোন দিয়েছিলেন।এইচএসসি 
দিয়েছি সেই ২০১৩ সালে।প্রায় পাঁচবছর পর স্যারের সাথে আমার কথা।তাঁর ফোনকলে অনেকটা অবাকই হয়েছিলাম।স্যারকে মোটামুটি ভয় পেতাম।
স্যার খোঁজখবর নিলেন।আমি স্যার স্যার করে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম স্যার হাসছেন।
আমি বললাম, স্যার.....
তিনি হাসি থামালেন।বললেন,
- বোকা মেয়ে তুমি কি ভয় পাচ্ছ!
এত স্যার স্যার করতে হবে না।
আমি জ্বি স্যার বললাম।স্যার আবার হাসলেন।
তিনি আমাকে জিঙ্গেস করলেন,
-উপস্হাপনা করো?অথবা বক্তৃতা!
বললাম, জ্বি স্যার।
হঠাৎ মনে হলো এটার উত্তর এককথায় জ্বি স্যার নয়।এটার উত্তরে কথা বলতে হবে।আমার বুক কাঁপছিলো।ভয়ে নয় এটা জানি। কিন্তু অন্য কারণটা কি সেটা বুঝতে পারছিলাম না।আমি ব্যাখামূলক উত্তর দিলাম।
স্যার বললেন,কাল সকালে কলেজে চলে আসো।
আমি জ্বি স্যার বললাম।
সকালের প্রত্যাশায় রাতে ঘুমায়ে পড়লাম।মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি স্বপ্ন দেখছিলাম কোন একটা বড় মঞ্চে অনেক মানুষের সামনে দাড়িয়ে কথা বলছি হঠাৎ মাঝপথে আমার মুখ দিয়ে আর কোন শব্দ বেরোচ্ছে না।কেউ যেন আমার গলা আটকিয়ে রেখেছে।সামনে আমার স্যাররা বসা। অসহ্যকর পরিস্থিতি। ঘুম ভেঙ্গে গেলো।পরে আর ঘুমাতে পারিনাই।
সকালবেলা ছোটভাইকে নিয়ে কলেজে গেলাম।ও আমার কলেজেরই নবীন। আজ ওদেরই নবীন বরণ।প্রিন্সিপ্যাল স্যারের রুমে সবাই বসা।আমি পৌঁছে বুঝতে পারলাম নবীন বরণের উপস্হাপনার জন্য আমাকে স্যার ডেকেছেন।
আরেকজন স্যারসহ তৎক্ষনাৎ স্ক্রিপ্ট রেডি করে প্রোগ্রাম শুরু করলাম। আমরা দুজনই উপস্হাপক।হঠাৎ মাঝপর্যায়ে স্যার এনাউন্স করলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে আমাকে কথা বলতে।হঠাৎই সব।বললাম।শব্দ হারালো না।বরং শব্দ মাথায় গিজগিজ করতে লাগলো।রাতের স্বপ্নটা মিথ্যা প্রমাণিত হলো।
প্রোগ্রাম শেষ হবার পর আমি অবাক হয়েছি প্রত্যেকটা মানুষ আমাকে মনে রেখেছেন।শিক্ষক কর্মচারী প্রত্যেকেই।ছোট্ট একটা মানুষ আমি হিজাব মাথায় মোড়ায়ে যখন কলেজ যাইতাম অর্ধেক মুখ তখন দেখা যায়।ওই অর্ধেক মুখ এতদিন পর কারো মনে থাকবে না এটা আমি নিশ্চিত ছিলাম।
আমার ধারণা পুরোটাই মিথ্যা।স্যাররা,ম্যামরা মাথায় হাত বুলিয়ে কথা বললেন।স্যাররা অফিস রুমে ডেকে নিয়ে আমার খোঁজখবর নিলেন।পাশে নিয়ে দুপুরের খাবার খেলেন।প্লেটে খাবার তুলে দিলেন।আমি কিছুটা সময় খেয়াল করলাম আমার কোন বোধ নেই
।ম্যাথ ম্যাম যখন জড়িয়ে বললেন,অনেকদিন পর দেখলাম বাচ্চাটা।অনেক বড় হও।আমার কান্না পাচ্ছিলো। আমার অনুভূতি অসার হয়ে যাচ্ছিলো। স্যারদের ভালোবাসার তীব্রতা আমার শ্রদ্ধাবোধ বাড়িয়ে দিচ্ছিলো আরো কয়েকগুণ।
আমার কলেজ আমাকে ভোলেনি।একদম ভোলানি।স্যারদেরদোয়াগুলো রুমে সাথে নিয়ে এসেছি।বুঝলাম, আমার দৌড়ানোর অনেক পথ বাকি।আরো দৌড়াতে হবে।ভালোবাসাগুলো আমাকে আরো দৌড়ানোর ইঙ্গিত দিলো অন্তরালে।
সবার ভালোবাসাগুলো আমাকে জীবন্ত রাখবে আজীবন।
শিক্ষকগণের ভালবাসা৷ শিক্ষকগণের ভালবাসা৷ Reviewed by সম্পাদক on মঙ্গলবার, জুলাই ১৭, ২০১৮ Rating: 5
Blogger দ্বারা পরিচালিত.