-->

মনুষত্ব


হাসান প্লাবন, (ঠাকুরগাঁও):

দৃশ্যপট -১
হোটেলের বাইরে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।আমি অনেক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছি ছেলেটির চোখে মুখে এক বিষণ্ণতার ছাপ। আমিও এই হোটেলে কাজ করি।আগে গ্লাস-প্লেট ধুতে হত।এখন প্রমোশন হয়ে একধাপ এগিয়েছি।ছেলেটি যেন কিছু বলতে চায় আমাকে!
কোনো এক নির্ভরতাময় চোখে আমাকে দেখছে। ওকে ডাক দিয়ে এনে টেবিলে বসালাম।
---কিরে,তোর বাসা কই?কই থেইকা আসছিস?
---আমার বাড়ি যশোর।আমার বাবা-মা কেউ নেই।আজ দুই দিন কিছু খাইনাই।
ছেলেটির কথা শুনে বুকের ভেতরটা মোছড় দিয়ে উঠলো।ভাত এনে দিলাম।পাশে বসিয়ে খাওয়ালাম।ছেলেটি ৩ প্লেট ভাত খেয়ে আমার দিকে ছেয়ে লজ্জাময় হাসি দিলো।আমি বুজলাম ছেলেটির পেট ভরেনি।আবার এক প্লেট ভাত দিলাম।খাওয়ানো শেষে জানতে পারলাম ওর পরিচয় ও নিজেই জানেনা।গ্রাম থেকে শহরে এসেছে আজ দুই দিন।আর এই দুই দিন অনাহারী ছিলো ছেলেটি।তাই আমি ওকে আমার হোটেলেই আমার সাথে কাজে লাগিয়ে দিলাম।গ্লাস ধুয়ে দিবে।
থাকা, খাওয়া মালিকের। মাসে ১০০০টাকা বেতন।
কাপড় চোপড় কিনে দিলাম নিজের টাকা দিয়েই।
ও খুশি মণে কাজ করতে লাগলো।
দৃশ্যপট ২
আজ ওর এক মাস পূর্ন হয়েছে।বেতন পেয়ে খুব খুশি।আমাকে পায়ে ধরে সালাম করলো।তারপর কোথায় যেন গেলো।বলে গেলো আসতেছি।
সেই যে বিকেলে বেতন পেয়ে বের হলো সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে এখনো আসছেনা।
অনেক পরে এসে হাজির হলো।হাতে একটা শপিং ব্যাগ।ভাবলাম হয়ত বেতন পেয়ে নিজের জন্য কিছু কিনেছে। কিন্তু পরক্ষণে যা ঘটলো তা আমি কখনোই আশা করিনি।
১০০০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে আমার জন্য ছেলেটি ৯০০ টাকার একটি পাঞ্জাবী নিয়ে আসছে।আমি তখন কাঁদবো নাকি হাসবো বুজতে ছিলাম না।
মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পাণি পড়ছে।
---ভাইয়া তোমার পছন্দ হয়নাই।খুব সুন্দর মানাবে!তুমি খুশি হওনাই?
---না আমি খুশি হইনাই।তোকে কে বলছে আমার জন্য পাঞ্জাবী কিনতে?
---কেন আমি কি ছোট ভাই হিসেবে তোমার জন্য কিনতে পারিনা?
তাছাড়া আমারতো কেউ নাই আমি টাকা দিয়ে কি করবো!
ওকে আমি বুকে জড়িয়ে নিয়ে অনেক্ষণ খুব শক্ত করে ধরে রাখলাম।আমার ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দুতে সে।
Its humanity..... Its true love....
দৃষ্টি পরিবর্তন করুণ, সমাজ বদলে যাবে।
রাস্তার শিশুরাও ভালোবাসতে জানে।ওরাই মানুষ।
মনুষ্যত্ববোধ কেবল এঁদের মানায়।
মনুষত্ব মনুষত্ব Reviewed by প্রকাশক on শনিবার, জুন ১৬, ২০১৮ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.