-->

ভৌতিক


মিনহাজুল ইসলাম পলক,(রংপুর):

স্কুল থেকে এসে দেখি দাদুবাড়ি থেকে আবির ভাইয়া এসেছে। দুদিন বাদেই পহেলা বৈশাখ। দাদুভাই ওকে পাঠিয়েছেন আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পহেলা বৈশাখে গ্রামে বিরাট এক মেলা হয়। ছোটবেলা থেকে বেশ কয়েকবার গিয়েছি ওই মেলায়। গত দুইবছর থেকে যাওয়া হয় না। কারণ হচ্ছে আব্বুর ছুটি মেলে না এইসময়। তাই এবার দাদুভাই আবির ভাইয়াকে পাঠিয়েছেন।
.
আবির ভাইয়া আমার বড় চাচার ছেলে। কলেজে পড়ে। সে এসেছে দুপুর বেলা। ও এসেছে দেখে আম্মু আমার ব্যাগপত্র আমি আসার আগেই গুছিয়ে রেখেছে। দাদুবাড়ি গ্রামে। এখান থেকে অনেক দূরের রাস্তা। আম্মু ভাইয়াকে বলেছিলেন আজকের রাতটা থেকে যেন কাল সকালে রওয়ানা হই। সে থাকতে রাজি নয়। দাদুর নির্দেশ- আজকেই আমাকে নিয়ে যেতে হবে।
যাবই যখন, তখন খামাখা দেরি করে লাভ নেই। অনেক দূরের রাস্তা। রাত হয়ে যাওয়ার আগেই পৌঁছাতে হবে। তাই দেরি না করে তাড়াতাড়ি রওয়ানা হয়েছি। আব্বু অফিস থেকে ফেরেননি বলে তার সাথে আর দেখা হয়নি।
.
দাদুবাড়িতে যেতে হয় ট্রেনে করে। আড়াইটার সময় ট্রেন আসার কথা, সেই ট্রেন এলো সোয়া তিনটায়। কোথায় নাকি ইঞ্জিন ডাউন হয়েছিলো। পাঁচটা স্টেশন পর আমাদের গন্তব্য। একে তো দেরি, তার ওপর কয়েকবার ক্রসিং হওয়াতে এই পাঁচটা স্টেশন পার হতে সন্ধ্যা নেমে এলো।
স্টেশন থেকে একটু এগিয়ে এসেই ঘাট। নৌকায় করে যেতে হবে খানিকটা। ওই পারে গিয়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেই যেতে হবে। তিন কিলোমিটার হাঁটা কোনো ব্যাপার নয়, হাঁটতে আমার বেশ মজাই লাগে কিন্তু সমস্যা হলো রাস্তাটা। ঘাট থেকে রাস্তাটা চলে গেছে পূব দিকে, একটা বিশাল মাঠের মাঝখান দিয়ে। মেঠোপথের দুপাশে ধানি জমি। মাঠের পরে একটা জঙ্গল আর তারপর পড়বে একটা শ্মশান। শ্মশানের একদম ভেতর দিয়ে রাস্তা। সমস্যা এই জায়গাটাতেই। রাস্তার পশ্চিম পাশে ইয়াবড় এক বটগাছ। গাছটা অনেক পুরোনো, ঝুড়িটুড়ি নেমে একাকার। গাছের গায়ে অসংখ্য গর্ত-গুহা। কী কী যে থাকে ওইগুলোতে কে জানে! এই গাছের বদনামের শেষ নেই। শ্মশানে পোড়া মানুষগুলোর প্রেতাত্মাগুলোকে নাকি এই এখানেই বেশি দেখা যায়। রাত্রিবেলা তো দূরের কথা, ভরদুপুরেও এই বটগাছের নিচ দিয়ে যেতে লোকের গা ছমছম করে। এই রাত্রিবেলা শ্মশান আর ওই গাছের নিচ দিয়ে আমাদের যেতে হবে ভেবেই গায়ের রোম সব দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
.
কথায় আছে- যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। এই কথাটা আজকে আমাদের জন্য খুব মানানসই। ঘাটে এসে শুনি একটু আগেই একটা নৌকা চলে গেছে। শেষ নৌকাটা এখনো আছে তবে লোক না হওয়া পর্যন্ত সেটা ছাড়বে না। কপাল খারাপ হলে যা হয় আরকি।
বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর নৌকায় লোক হলো। ওপারে যখন পৌঁছলাম তখন রাত আটটা অথবা ন'টা। গ্রামে এটাই অনেক রাত।
.
চৈত্রের শেষে আকাশে মেঘের আনাগোনা। এখন পর্যন্ত অবশ্য একদিনও বৃষ্টি হয়নি। আজ বোধয় হবে। একটু পরপর আকাশের কোণে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। শোঁ শোঁ করে বাতাস খেলে যাচ্ছে গাছপালার ওপর দিয়ে। সেই ঠান্ডা বাতাসে শরীরের ভেতরটা পর্যন্ত কেঁপে কেঁপে ওঠে। আকাশে চাঁদ উঠেছিলো একসময়, এখন সেটা মেঘের আড়ালে চলে গেছে। চাঁদ না থাকলেও আকাশটা বেশ উজ্জ্বল। দৃষ্টি বেশিদূর না গেলেও চারপাশের অনেকখানি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।
.
নৌকা থেকে নেমে আমরা মেঠোপথ ধরে হাঁটছি। রাস্তার দুপাশে ধানের ক্ষেত। আবির ভাইয়া এক হাতে ব্যাগ আর অন্য হাতে আমার হাত ধরে রেখেছে। সে আমাকে বললো দেখে পা ফেলতে। গরমকালে এই রাস্তাগুলোতে নাকি সাপ শুয়ে শুয়ে থাকে। সাপের কথা শুনেই আমার পিলে চমকে উঠলো। হাত-পা শিরশির করতে লাগলো। হাঁটার সময় খেয়াল করলাম একটু পরপরেই রাস্তা থেকে কী যেন সব ধানক্ষেতে নেমে যাচ্ছে। কখনো সরসর, আবার কখনো ঝপাং। আমি ভয়ে আবির ভাইয়ার হাত চেপে ধরে ওর গা ঘেঁষে হাঁটা শুরু করলাম। সে হেসে বললো, ওগুলো ইঁদুর আর ব্যাঙ। পোকামাকড় ধরতে রাস্তায় উঠেছে।
.
মাঠের পার হয়ে সামনে পড়লো সেই জঙ্গলটা। এতক্ষণ সাপের ভয়ে কাহিল হয়ে পড়েছিলাম, এবার অন্য ভয় ধরলো। আমাদের কাছে কোনো টর্চ নেই। কে জানতো এরকম অবস্থায় পড়তে হবে! রাস্তায় সমস্যাগুলো না হলে সন্ধ্যার আগেই আমরা বাড়ি পৌঁছে যেতাম। মাঠের ফাকা রাস্তায় খানিকটা আলো থাকলেও জঙ্গলের ভেতরটায় অন্ধকার। তবে খানিক পর পর গাছপালা ভেদ করে বিদ্যুৎচমকের আলো রাস্তায় এসে পড়ছে। এতে একটু সুবিধেই হচ্ছে। বাতাসে গাছের শাখাপ্রশাখাগুলোতে কেমন শিষের মতো শব্দ সৃষ্টি করছে। আবির ভাইয়া আমাকে বললো, 'ভয়ের কিছু নেই। আমার সাথে বড় বড় পা ফেলে হাঁট। এই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এর চেয়েও কত রাতে আমি হেঁটে গেছি...'
সন্ধ্যার পর এই রাস্তা দিয়ে সে কবে, কী কারণে, কোথায় কী গিয়েছিলো সেসব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করলো না। আমি বুঝতে পারছি সে আমাকে সাহস দেওয়ার জন্য এগুলো বলছে।
.
জঙ্গল পেরিয়ে খানিকটা আসার পর আমার ভয়টা এক লাফে কয়েকগুণ বেড়ে গেল। পা দুটো যেন অবশ হয়ে আসছে। বুকের ভেতরে ঢিপঢিপ করছে। শরীর ঘেমে ভিজে যাচ্ছে। সামনেই সেই শ্মশান।
'ভয় পাচ্ছিস নাকি মেহেদী?' আবির ভাইয়া বললো। 'ভয় পাবি না, বুঝলি? আমার সাথে কথা বলতে বলতে চল, দেখবি ভয় লাগছে না।'
আমি বললাম, 'আচ্ছা।'
কিন্তু বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পেলাম না। সেও বোধয় ভাবছে কী নিয়ে কথা বলবে।
.
শ্মশানের ভেতরে এসে পড়েছি। ভয়ে আমি আড়ষ্ট। মাথা নিচু করে পায়ের দিকে তাকিয়ে হাঁটছি। চেষ্টা করছি অন্য কোনোদিকে না তাকাতে। বটগাছটা আর কতদূরে কে জানে! হঠাৎ মাথার ওপর ফরফর শব্দ শুনে লাফ দিয়ে আবির ভাইয়ার হাতটা খামচে ধরলাম। সে হেসে বললো, 'বাদুড়।'
তার কথায় আমার ভয় পুরোপুরি কেটে গেলো না। আবির ভাইয়া বলেছে বলে ওটা যে বাদুড়ই হবে তার কোনো মানে নেই। অন্য কিছুও হতে পারে। কথাটা ভাবতেই কেমন যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। মনকে জোর দিয়ে বললাম- ওটা অবশ্যই বাদুড়। আগেও অনেকবার আমি বাদুড়কে এইভাবে উড়তে দেখেছি। তারপরেও আবির ভাইয়ার হাত জাপটে ধরেই হাঁটছি।
আমরা কি এখন বটগাছটার কাছে এসে গেছি? মাথা তুলে তাকাতে সাহস হলো না। ওইভাবেই নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছি। জীবনে কখনোই এরকম পরিস্থিতিতে পড়িনি। পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে একটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। ঘুমের ভেতরে ভয়ের কোনো স্বপ্ন দেখছি, ঘুমটা ভেঙে গেলেই বাঁচি। কিন্তু আমি জানি এটা মোটেও স্বপ্ন নয়। সত্যিই আমি এই মুহূর্তে একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতে রয়েছি।
.
হঠাৎ আবির ভাইয়া থমকে দাঁড়ালো। আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। সাথে সাথে আমার কলজেটাও ছ্যাঁত করে উঠলো। হৃদপিণ্ড প্রবলভাবে ধকধক করছে। ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটেছে বুঝতে পারছি। দুই হাত দিয়ে আবির ভাইয়াকে জাপটে ধরেছি। আবির ভাইয়া কম্পিত গলায় বললো, 'দোয়া পড় মেহেদী।'
আমি আচমকা মাথা তুলে তাকিয়ে ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম। রাস্তা থেকে দশ-পনের গজ পশ্চিমে বটগাছটার ঠিক নিচে কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে। কী ওটা?
ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। বিদ্যুতের আলোয় যে দৃশ্য দেখলাম তাতে আমার ব্রহ্মতালু পর্যন্ত শুকিয়ে গেলো। বটগাছের নিচে যে জিনিসটি দাঁড়িয়ে আছে তার চেহারা বেশ স্পষ্ট দেখা গেল। সারা শরীর সাদা কাপড়ে মোড়ানো। মাথার চুল ধবধবে সাদা। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। একটা লাঠি হাতে খুব ধীরে ঠক ঠক করে সে আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। আবির ভাইয়া আর আমি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। একবার মনে হলো ভাইয়াকে বলি দৌড় দিতে। কিন্তু দৌড়ে কোন দিকে যাব? ততক্ষণে ওটা রাস্তার উপর উঠে পড়েছে। উল্টো দিকেও জঙ্গল। আমি আবির ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগলাম।
আমাদের কাছাকাছি চলে আসতেই শুনতে পেলাম কিরকম একটা গোঁ গোঁ শব্দ করছে ওটা। যতই কাছে এগিয়ে আসছে, শব্দটা ধীরে ধীরে গর্জনে রূপ নিচ্ছে।
দেখতে দেখতে আমাদের একদম কাছে চলে এলো। বিদ্যুতের আলোয় আরেকবার তার মুখটা দেখে আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। এরকম ভয়ংকর চেহারা আমি জীবনে কখনো দেখিনি। তার চেহারার মতোই ভয়ংকর একটা শব্দ বেরিয়ে আসছে তার ভেতর থেকে। যেন আমাদের ওপর প্রচন্ড ক্রোধে জ্বলে যাচ্ছে সে। আমরা বুঝতে পারলাম এটা কোনো মানুষ নয়। কোনো মানুষ এরকম হতে পারে না। এমন ভয়ঙ্কর চেহারা আর হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেওয়ার মতো শব্দ কোনো মানুষের হতে পারে না।
সে ধীরে ধীরে আমাদের আরও কাছে চলে এসেছে। আমি জ্ঞান হারাচ্ছিলাম প্রায়, এমন সময় আবির ভাইয়া আমাকে হ্যাঁচকা একটা টান দিয়ে বিদ্যুৎবেগে বুড়িটাকে পাশ কাটিয়ে নিয়ে এলো এইপাশে। তারপর প্রাণপণে ছুটতে থাকলাম দুইজনে। পেছনের দিকে আর একবারও ফিরে তাকাইনি। দৌড়াতে দৌড়াতে খালের ওপরের পুল পার হয়ে প্রাইমারি স্কুলটার পাশ দিয়ে গ্রামের ভেতর ঢুকে পড়লাম। দাঁড়ালাম না কোথাও। থামলাম একেবারে বাড়ির সামনে এসে। বুকের ভেতর যেন হাঁতুড় পেটানো হচ্ছে। সাক্ষাৎ যমের হাত থেকে বেঁচে গেছি আজকে।
.
সদর দরজা খোলা। সোজা বাড়ির ভিতরে ঢুকে দরজায় ধাক্কা দিলাম। দাদিমা দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লাম ভেতরে।
দাদিমা বললেন, 'আমরা তো ভেবেছিলাম তোরা আজকে আর আসবি না। কী হয়েছে এরকম হাপাচ্ছিস কেন দুইজনে?'
আমি বললাম, 'দাদিমা, আগে আমাকে এক গেলাস পানি খাওয়াও।'
দাদিমা শঙ্কিত মুখে পানি নিয়ে এসে দিলেন। এক ঢোঁকে গ্লাস খালি করে দিলাম।
'আরও খাবি?'
আমি মাথা নাড়লাম। আরও দুই গেলাস পানি খেয়ে চেয়ারের ওপর বসে পড়লাম।
আবির ভাইয়াও একটা চেয়ার টেনে বসে হাঁপাচ্ছে। দাদিমার হাত থেকে জগটা নিয়ে সেও কয়েক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে ফেললো।
দাদিমা বললেন, 'কী ব্যাপার বল তো! রাস্তায় কিছু হয়েছে?'
আমি একটা নিশ্বাস ফেলে শ্মশানের ওখানে ঘটে যাওয়া ঘটনা দাদিমার কাছে ব্যাখ্যা করলাম। সব শুনে তিনি চোখ বড় বড় করে বললেন, 'কী সর্বনাশের কথা! অল্পের জন্য আজকে...
শোরগোল শুনে দাদুভাই চলে এসেছেন। ঘটনার বিবরণ শুনে তিনিও চমকে উঠলেন। একে একে বড়মা, ছোট চাচি, আঁখি, বিট্টু, ছোট চাচা, বড় চাচা- সবাই এসে হাজির। ঘটনার বিবরণ শুনে সবাই শিউরে উঠলো। কেউ কেউ আবির ভাইয়ার ওপর রাগ হলো। আজকে সে আমাদের ওখানে থেকে গিয়ে কাল সকালে রওয়ানা হলেই পারতো। এত বড় ছেলে হয়ে এই বোকামিটা সে কী করে করলো! আবির ভাইয়া চুপচাপ সবার সব কথা শুনে গেলো।
.
কিছুক্ষণের মধ্যে ঝমঝম করে শুরু হলো বৃষ্টি, সাথে ঝোড়ো বাতাস। একটু পরে বাতাস কমলে শিল পড়া শুরু হলো। টিনের চালে ঠক ঠক আওয়াজে কানে তালা লেগে যাওয়ার উপক্রম। সেই সাথে আমার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই জ্বর বেড়ে গিয়ে একরকম কাণ্ড হয়ে গেলো। রাতের খাবার খেতে পারলাম না।প্যারাসিটামল ট্যাবলেট গিলে শুয়ে রইলাম। জ্বর কমলো না। দাদিমা আর বড়মা মাথায় পানি ঢাললেন অনেক রাত পর্যন্ত। সবার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ে গেলো। আমার রাত কাটলো বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে। শেষরাতের দিকে ঘাম দিয়ে জ্বর খানিকটা কমে গেলে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
পরেরদিন বেলা দশটার দিকে আবির ভাইয়ার ডাকে ঘুম ভাঙলো।
'মেহেদী, মেহেদী, শিগগির ওঠ!'
আমি হকচকিয়ে উঠে বসলাম। শরীরটা খুবই দূর্বল লাগছে।
আবির ভাইয়া বললো, 'কী হয়েছে জানিস? আজকে সকাল বেলা শ্মশানের ওই বটগাছটার তলায় একটা বুড়িকে মরা অবস্থায় পাওয়া গেছে! সবাই দেখতে যাচ্ছে। চল, গিয়ে দেখে আসি।'
আমার শরীরটা অবশের মতো হয়ে আছে। তবুও বিছানা থেকে নামলাম। হাতমুখে পানি দিয়ে আবির ভাইয়ার সাথে চুপ করে বের হয়ে এলাম। রাস্তায় বেড়িয়ে দেখি আরও অনেকেই যাচ্ছে শ্মশানের দিকে।
.
বটগাছটার নিচে অনেক মানুষের জটলা। আবির ভাইয়া আর আমি ভিড় ঠেলে ভেতরে গিয়ে উঁকি মারলাম। একটা বুড়ি মরে পড়ে আছে। গায়ে শতচ্ছিন্ন ময়লা সাদা কাপড়, মাথায় জট পাকানো সাদা চুল। আঁচল দিয়ে মুখখানা কেউ ঢেকে দিয়েছে।
লোকমুখে যা শুনলাম তা হলো- এই বুড়ি ভিক্ষা করে বেড়ায়। বাড়ি এখান থেকে দুই গ্রাম পরে। আশেপাশের কোন গ্রামে তার নাতনিকে বিয়ে দিয়েছে। হয় সে সেখানে যাচ্ছিলো, নাহয় সেখান থেকে ফিরছিলো। এমনিতেই চোখে ভালো দেখতে পায় না, তার উপরে রাত হয়ে গিয়েছিলো। এই জায়গায় এসে ঝরবৃষ্টির কবলে পড়ে মারা গেছে। বুড়ির নাকি খুব হাঁপানিও ছিলো। নিশ্বাস নিলে গোঁ গোঁ করে একটা শব্দ হতো।
ভৌতিক ভৌতিক Reviewed by Md. Ahosan Habib Maruf on রবিবার, জুন ১০, ২০১৮ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.